সিটি করপোরেশন নির্বাচন - ২০১৩ (বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল) ১৮ দল সমর্থিতদের বিজয়
নিকটতমপ্রার্থী এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৭০০ ভোট (স্থগিত ১ কেন্দ্র )। খুলনায় ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি নির্বাচিত হয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ১৫৪ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৮১১ ভোট। বরিশালে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৭৬ হাজার ২৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন পেয়েছেন ৬০ হাজার ৯০৮ ভোট (বাকী ১০ কেন্দ্র)। সিলেটে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী এক লাখ ১৯ হাজার ১১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৭ হাজার একশ’ ১৯ ভোট। স্থানীয় সরকার এ নির্বাচনে শতকরা প্রায় ৬৮ শতাংশ (শতকরা হিসেবে রাজশাহী ৭২, সিলেট ৭৫, বরিশাল ৬৯, খুলনা ৬১) ভোটার ভোট প্রয়োগ করেন।
দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে বিকেলে ভোট গণনা শুরু হয়। ভোট গণনায় যাতে কোনো অনিয়ম না হয় এবং ক্ষমতাসীনরা প্রভাব বিস্তার না করতে পারে সেজন্য বিএনপি স্থানীয় নেতাকর্মীদের গণনার সময় সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেয়। সবার উপস্থিতিতে ভোট গণনা শেষে চার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ১৮ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে কমিশনার ও সংরক্ষিত মহিলা কমিশনারদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কমিশনারদের মধ্যে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীদের বেশিরভাগই বিজয়ী হয়। এর আগে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক এবং টান টান উত্তেজনার মধ্যদিয়ে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত তা অব্যহত থাকে। ভোটগ্রহণ চলাকালে বরিশালে আহসান হাবিব কামালকে আক্রমণ, খুলনায় একজনের মৃত্যু, সিলেটে সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে প্রত্যাহারসহ কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের অনেকটা প্রভাব অনুভব করা গেছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনগুলোতে উৎসবের আমেজ ছিল লক্ষ্য করার মতো। সারাদেশের মানুষের দৃষ্টিও ছিল নির্বাচনের দিকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় দলীয়ভাবে প্রার্থী না দিলেও প্রধান দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সরব ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচনে কারচুপি ও ফলাফল পাল্টে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বিএনপির নাকচ করে বলেছে, ভোটগ্রহণ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে এসব ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ আখ্যায়িত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোট গণনার সময় রাজশাহী ও খুলনায় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় ঘেড়াও ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বরিশালে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা
দুপুরে বরিশালের রূপাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন আহত হন। পরে তাদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই কেন্দ্রে এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। এ ঘটনায় আহসান হাবিব কামাল সরাসরি শওকত হোসেন হিরনকে দায়ী করেন। তবে ১৪ দল সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী শওকত হোসেন হিরণও আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। এর আগে সকাল সোয়া নয়টার দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিপক্ষের এজেন্ট আনারস প্রতীকের জুবায়েরকে ভোটকেন্দ্রের মধ্যেই মারধর করেছেন মহাজোটের শওকত হোসেন হিরন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাগরদী আলিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে এঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া নয়টায় টেলিভিশন প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী শওকত হোসেন হিরন সাগরদী আলিয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে শাহআলম নামে এক ভোটারকে টেলিভিশন প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার নির্দেশ দেন। ওই ভোটার এসময় স্তম্ভিত হয়ে যান এবং তার সামনেই টেলিভিশনে ভোট দিতে বাধ্য হন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানান ওই বুথে দায়িত্বরত আনারস প্রতীকের এজেন্ট জুবায়ের। এতে হিরন ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনেই জুবায়েরকে চড়থাপ্পড় মারেন।
সিলেটে প্রিজাইডিং অফিসারের অব্যাহতি
সিলেটে জাল ভোট গ্রহণের অভিযোগে এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। খাসদবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী অফিসারের নাম লুৎফুন নেসা। দুপুর ১২টায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে জানান সহকারী রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন। তিনি বলেন, লুৎফুন নেসা এক ভোটারকে দু’টি ব্যালেট পেপার দিয়েছেন। এ অভিযোগে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
খুলনায় একজনের মৃত্যু
খুলনায় সিটির মিছিলের চেষ্টার সময় র্যাব-পুলিশের পিটুনিতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার নাম শাহ আলম সর্দার (৪৫)। তিনি চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন বলে দাবি করেছে দলটি। সকাল পৌনে ১০টার দিকে খুলনার খালিশপুর ক্রিসেন্ট জুটমিলের সামনে দিয়ে সাত-আটজনের একটি দল শ্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছিলেন। এসময় র্যাব ও পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং সাতজনকে আটক করে। পিটুনিতে আহত হয়ে শাহআলম ঘটনাস্থলে পড়ে থাকলে স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহীতে জাল ভোটের অভিযোগ
রাজশাহী সিটিতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দু’টি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্র দু’টি হলো- ২নং ওয়ার্ডের বালাজান নেসা উচ্চ বিদ্যালয় এবং একই ওয়ার্ডের নগরপাড়া। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বালাজান নেসা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের একনম্বর কক্ষে ভোট দেয়ার জন্য প্রবেশ করেন জিন্নাত আলী। এসময় সংশ্লিষ্ট পোলিং এজেন্ট তাদের কাছে থাকা লিস্টে তার ভোটার ক্রমিক নং-৩৬ এবং ভোটার আইডি নম্বর ৮১০৯১৫১৪৬২৬৬ দেখে বলেন, সেখানে মার্কিং করা আছে। তাই তিনি ভোট দিতে পারবেন না। একথা শুনে তিনি বুথ থেকে ফিরে আসেন। একই ধরনের অভিযোগ করেন শাহ্ মোহাম্মদ। তিনিও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট পোলিং এজেন্ট তাদের কাছে থাকা লিস্টে তার ভোটার ক্রমিক নং-৭০৫ এবং ভোটার আইডি নম্বর ৮১০৯১৫১৬৯০১৭ দেখে বলেন, সেখানে মার্কিং করা আছে। তাই তিনি ভোট দিতে পারবেন না।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবসহ নানা কারণে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে গতকাল রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মোট ৬৫২ ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। চার সিটির ৪২৮ ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, ব্যাটালিয়ন আনসার ও কোস্টগার্ডের প্রায় ২০ হাজার সদস্য নির্বাচন এবং ভোট গণনার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করে। হালনাগাদ ভোটার তালিকানুযায়ী রাজশাহী সিটিতে ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ ভোটার, খুলনা সিটিতে মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৭ ভোটার, বরিশাল সিটিতে সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন ভোটার এবং সিলেট সিটিতে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৭ জন ভোটার ছিল। নির্বাচনে চার সিটির ৮টি কেন্দ্র ইসি সচিবালয় থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে। সিলেটে ক্ষমতাসীন দলের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষ্যে কাজ করায় একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহী,
খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে
নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ চারটি সিটি কর্পোরেশনে মনোনয়নপত্র
দাখিলের শেষ দিন ১২ মে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৫ ও ১৬ মে এবং মনোনয়ন
প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৬ মে। -সংগৃহীত প্রতিবেদন