কুষ্টিয়ায় দেড় শতাধিক ছাত্রী ধর্ষণের হোতা পান্না মাস্টার ঢাকায় গ্রেপ্তার (ভিডিও)

অন্তত দেড় শতাধিক ছাত্রীকে নিজের বিকৃত যৌন লালসার শিকার বানানো হেলাল উদ্দিন পান্না মাস্টারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি।

ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তাদের অনলাইনে প্রকাশ করেছে, যেটি শনিবারের মুদ্রণ সংখ্যা আসবে।

এতে বলা হয়েছে, সহকারী কমিশনার (এসি)
রায়হানের নেতৃত্বে ঢাকা ডিবির একটি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরের চিনু মিয়া রোডের ভাড়া বাসা থেকে পান্না মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে।

হেলাল উদ্দিন পান্না কুষ্টিয়া বাড়াদি গ্রামের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক। কুষ্টিয়া শহরের আড়পাড়ার নিজ বাসায় প্রাইভেট টিউশনিতে আসা স্কুল-কলেজের এসব ছাত্রীদের তিনি চার সহযোগী নিয়ে ধর্ষণ করেন।

হেলাল উদ্দিন পান্নার বিকৃত যৌন কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাব-ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম অভিযুক্ত শিক্ষকের অবস্থান সনাক্ত করেন।

পান্না কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল, কুষ্টিয়া যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম, যশোর স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দুলাল হোসেন ও গাংনী স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সজলকে নিয়ে তার বাসায় এই অপকর্ম করতেন।

শুধু তাই নয়, তারা ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের এসব মিলন দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করতের, যা সম্প্রতি ভিডিও ক্লিপস আকারে এলাকার যুবকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে গত ৭ জুলাই শতাধিক এলাকাবাসী ও ছাত্ররা ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়কের বারখাদা-ত্রিমোহুনীতে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।

এরপর কুষ্টিয়া সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর এম. মনিরুল ইসলাম ৭ জুলাই পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অধীনে পান্নাসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া পুলিশ পান্নার ল্যাপটপ জব্দ করেছে, যাতে এসব ভিডিও ক্লিপস ছিল।

এর আগে পান্না মাস্টারকে গ্রেপ্তারে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযান চালায় র্যা ব ও পুলিশ। তবে বারবারই তা ব্যর্থ হয়। অবশেষে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে মানুষ রূপী এক কুলাঙ্গার শিক্ষক পান্নার যৌন কেলেঙ্কারি। পা্ন্না ছাত্রীদের সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়েই ক্ষ্যান্ত হতেন না, এসবের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দিতেন।

এভাবে একজন দুজন নয়, অন্তত দেড় শতাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছেন শিক্ষক পান্না মাস্টার। ঘটনাটি ঘটে কুষ্টিয়ার বাড়াদি গ্রামের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক পান্না মাস্টার বাসায় টিউশনির নাম করে দেড় শতাধিক ছাত্রীকে তার লালসার শিকার বানিয়েছেন।

আর শিক্ষকের লালসার শিকার এসব ছাত্রীদের বেশিরভাগই অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া কোমলমতী। এরা পরবর্তী জীবনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষক পান্নার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ঘটনার ধারণকৃত চিত্র ও ছবি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন তাদের ভোগ করে এসেছেন পান্না।

শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি শিক্ষক পান্না। অন্তরঙ্গ মিলনদৃশ্য ধারণ করে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে নানা ফন্দি-ফিকিরে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থও। সম্প্রতি তার এই বিকৃত যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায়। এলাকার যুবকদের মোবাইলে তা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সচেতন মহল এই শিক্ষক নামের কুলাঙ্গারের বিচার দাবি করেন। তারা অবিলম্বে এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। আর এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে তার সহযোগীদেরও বিচার দাবি করেন।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পান্না মাস্টারের যৌন কেলেঙ্কারি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাড়াদি আদর্শ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক পান্না মাস্টার অভিভাবকের পরিবর্তে বনে গেছেন প্লে-বয়ে। পান্না মাস্টারের যৌন জিজ্ঞাসার শিকার প্রায় দেড়শ’ ছাত্রী, যাদের অধিকাংশ অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণি পড়ুয়া।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘এ ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু নিজের ছাত্রীদের সঙ্গে মিলনের দৃশ্য পান্না মাস্টার ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেছেন দিনের পর দিন; মাসের পর মাস; বছরের পর বছর।’

অষ্টম শ্রেণি থেকে পান্নার যৌন লালসার শিকার এক ছাত্রী। সে বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। তারপরও পান্নাকে নিয়মিত সময় দিতে হয় তাবে।

ওই ছাত্রী জানায়, ‘পরিকল্পনা করে তিনি (পান্না মাস্টার) এগুলো করতেন। আর এখন ছবি-ভিডিওর প্রকাশের ভয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে একাজ করতে হচ্ছে। আমি সত্যিকার অর্থে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। খুবই খারাপ লাগছে। এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’

পান্না মাস্টারের সঙ্গে নগ্নদৃশ্যের ছবি অন্যের মোবাইলে দেখার পর ইতোমধ্যে ১১টি মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আর এতেই এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ে। এরপর থেকে পান্না পলাতক।

এরপর প্রসাশনের টনক নড়ে। পান্না মাস্টারকে গ্রেপ্তারে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। অবশেষে শুক্রবার এসে তা সফলতার মুখ দেখলো।source: rtnn

,
Powered by Blogger.