বিজ্ঞাপন চমকে প্রাণ ভোলাতে চায় ‘নাট-বল্টু’!

জুসের মধ্যে নাট-বল্টু আর শেওলা পাওয়ার পর দেশের বাজারে বেশ হুমকিতে পড়েছে প্রাণ জুস। বেশ সুনামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেশ-বিদেশে ব্যবসায় করে আসলেও বদনামও কম অর্জন করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এক ক্রেতা ফেনী শহরের মহিপাল থেকে ২২ টাকা দিয়ে বিডি এস ১৫৮১ সিরিয়ালের ২৫০ এমএল প্রাণ ফ্রুটোর ম্যাংগো জুস কেনেন। যার উৎপাদন তারিখ ২৩/৫/১৩। আর মেয়াদ ২২/৫/১৪ পর্যন্ত
। কিন্তু প্লাস্টিকের ওই বোতলটির মুখ খোলার আগেই ক্রেতা বোতলের ভেতর ২ ইঞ্চি লম্বা একটি লোহার নাট-বল্টু দেখতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান।
পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাজারজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। এর আগে একবার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে, প্রাণ জুসে আমের কথা বলে মিষ্টি কুমড়ার রস ব্যবহার করা হয়।
এসব ঘটনার পর দেশের বাজারে প্রাণের চাহিদা দিন দিন কমতে বসেছে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা যায় যে, জুসের বোতলে নাট-বল্টু আবিস্কারের পর ক্রেতারা প্রাণের জুস দেখলেই ভয় পায়। কোনো অভিভাবকই চান না, তাদের কোমলমতি সন্তানকে অখাদ্য খাইয়ে অনাকাঙ্খিত বিপদের দিকে ধাবিত করতে। তারা জানান, এ ঘটনার পর শুধু প্রাণের জুসই নয়; বরং প্রাণের সব ধরণের পণ্যের প্রতিই মানুষের চাহিদা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।
বায়তুল মুকাররম সুপার মার্কেটে ফাস্টফুডের এক ক্রেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, সচেতন অভিভাবকরা তার সন্তানদেরকেও সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছেন। যাতে তারা স্কুল-কলেজে গিয়েও অস্বাস্থ্যকর ঝুকিপূর্ণ কিছু খেয়ে না ফেলে। তবে তিনি বিজ্ঞাপনদাতাদের দায়ী করে বলেন, পণ্য যত খারাপই হোক, কিছু বিজ্ঞাপনদাতা এমনভাবে বিজ্ঞাপন বানায় যে, প্রতারণামূলক তথ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদেরকে ওই সব বাজে খাদ্য বা পণ্যের দিকে আকৃষ্ট করে তোলে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের এক শিশু শিক্ষার্থীর মা নাজিয়া আফরিন (খিঁলগাও) টিভিতে প্রচারিত ‘প্রাণ মিল্ক ক্যান্ডি’র বিজ্ঞাপন সম্পর্কে বলেন, ‘খুবই বিরক্তিকর একটা বিজ্ঞাপন, সাথে সাথে চ্যানেল পরিবর্তন করতেই হয়। কারণ ওরকম ভুতুরে ছবি দেখে বাচ্চারা অনেক সময় ভয় পেয়ে যায়’।
সম্প্রতি প্রাণ কোম্পানির সাথে এসব বিষয়ে কথা বলার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ৩০ জুলাই ৯৮৮১৭৯২ নাম্বারে কথা হয়। অপারেটর মিডিয়া সেকশনে লাইন দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রশ্নের জবাব দিতে অপ্রস্তুত ও দিশেহারা হয়ে পড়েন। মিডিয়া সেকশনের দায়িত্বে থেকেও মিডিয়ার সাথে কথা বলতে তিনি নারাজ।
অবশেষে ‘নাট-বল্টুর কি সমাধান হয়েছে….’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি একটি বাংলালিংক নাম্বার দিয়ে বলেন, আপনি সুজন মাহমুদ (হেড অব মিডিয়া) স্যারের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিনা, সমস্যা আছে। এরপর সুজন মাহমুদকে ফোন দেয়া হলে তিনি একাধিকবার কল কেটে দেন। ফলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ভোক্তাদের অভিযোগ, এই নাট-বল্টু’র ঘটনার পর আবার জুসের মার্কেট তৈরিতে বিজ্ঞাপননির্ভর হয়ে উঠেছে প্রাণ। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে তারা বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার করছে বিভিন্ন টিভি মিডিয়ায়। বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে- কিভাবে গাছ থেকে পাকা আম সংগ্রহ করে তা পরিস্কার ও যত্নের সাথে জুস তৈরি করা হয়, আর কিভাবে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে এরকম বিজ্ঞাপন ‘নাট-বল্টু’ আবিস্কারের আগেও এক সময় দেখানো হতো। রমজানে রোযাদাররা যখন তাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে আকৃষ্ট হয় একটু ঠান্ডা পানীয়’র দিকে, সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবারো ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন চমকে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, রমজানকে কেন্দ্র করে প্রাণ জুসের মতো আরো একাধিক নামী জুস কোম্পানি ‘সম্পূর্ণ আমের তৈরি’ জুস বিক্রির প্রচারে নেমেছে। কিন্ত্ত সচেতন মানুষের প্রশ্ন- কোনো ক্যামিকেল ছাড়া শুধু পাকা আমের এক লিটার জুস কিভাবে এত অল্প দামে পাওয়া সম্ভব!
ভোক্তারা মনে করেন, এ ধরনের প্রতারণামূলক প্রচারণা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব-সচেতন হতে হবে। অন্যথায় স্বাস্থ্যহীনতার ঝুকিতেঁ পড়বে গোটা সমাজ।

,
Powered by Blogger.