মাদ্রাসা ছাত্রীর স্বপ্নের দু’ফোটা রস!

দু’ফোটা গাছের রস, পানি বা তেলপড়া দিয়ে সব রোগ নিরাময়ের নামে তেলেসমাতি কারবার শুরু করেছেন এক কবিরাজ। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় প্রকাশ্যে চলছে এ কারবার। শহরের পুরাতন পাটবাগান নামক স্থানে মাদ্রাসা ছাত্রী ফারজানা খাতুন সুমি করছেন এই আজব
কবিরাজি। অসচেনত মানুষের লম্বা লাইন পড়ে যায় আজগুবি এই কবিরাজি ওষুধ নেয়ার জন্য। শিক্ষিত নারী-পুরুষও ওই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। কয়েক বছর আগে এক আনসার সদস্য স্বপ্নে পাওয়া মন্ত্রের বরাত দিয়ে গোটা এলাকায় শুরু হয়েছিল কেরামতির নামে প্রতারণা। সম্প্রতি কালীগঞ্জের ফয়লা গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্রী ফারজানা একই ভাবে শুরু করেছেন স্বপ্নে পাওয়া গাছের পাতার রস দিয়ে ওষুধ তৈরী করে কবিরাজির কারবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানবরজের পাশে সারিবদ্ধভাবে গভীর রাত থেকে অপেক্ষমাণ রোগী। দেখলে মনে হবে এটা কোন ভোট কেন্দ্রের ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু না, এটা হচ্ছে কবিরাজের কাছ থেকে ড্রপে করে ওষুধ সেবন করতে আসা বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। কথিত কবিরাজ সুমি সকালে এসে সবার মুখে এক ফোঁটা করে ওষুধ দেন। এরপর দুপুরে, আবার সন্ধ্যায়। সন্ধ্যায় রোগীদের কাছ থেকে চলে টাকা আদায়। এভাবে দেড় বছর ধরে একই ওষুধে দুরারোগ্য ক্যান্সারসহ সব রোগের কথিত চিকিৎসা দিচ্ছেন ফারজানা খাতুন সুমি।
সুমির দাবি, একরাতে স্বপ্নে ক্যান্সারসহ সর্বরোগ নিরাময়ের ওষুধের গাছের নাম পান। পরে আরেক দিন স্বপ্নে একজন তার সামনে হাজির হয়ে বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধের গাছ তোমার বাড়িতে আছে। ওই গাছের রস এক ফোঁটা করে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় খাওয়ালে রোগ সেরে যাবে। খুলনায় খালা বাড়ি গিয়ে প্রথম স্বপ্নে পাওয়া চিকিৎসা দেয়া শুরু করে। তিন ফোঁটা ওষুধ খেয়ে রোগ ভাল হওয়ায় তা এলাকায় প্রচার পায়। কালীগঞ্জে ফিরে আসার পর লোকের আগমন বাড়তে থাকে।
এলাকাবাসী জানান, এটা চিকিৎসার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। এখানে প্রতি শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। গত দেড় বছরে সুমির দেওয়া ওষুধে কোনো রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়েছেন, এমন কথা তারা শোনেননি। তারপরও প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি দেশের পরিম-ল পেরিয়ে ভারত থেকেও রোগী আসছে বলে জানান তারা। দুই মাস আগে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সুমির কথিত এই চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। এরপর মহেশপুরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে শহরের পুরানো একটি পাট বাগান এলাকায় এসে দুর-দুরান্ত থেকে আসা হাজারো নারী পুরুষের ড্রপে করে ঔষধ দিতে থাকে। এলাকার শত শত মানুষ কথিত ওই কবিরাজের চিকিৎসা পেতে ভিড় করেছে। রাতেই অনেকে নসিমন মাইক্রোবাস যোগে মহেশপুরের পাটবাগান এলাকায় এসে জড়ো হয়েছে। মহিলার সংখ্যা ৮০ ভাগ। কবিরাজ ঝড়ের বেগে প্রত্যেকের মুখে ড্রপারে এক ফোটা করে ওষুধ দিয়ে থাকে। মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, মহেশপুরে পুরানো পাট বাগানে কবিরাজের কথা আমি শুনেছি। কবিরাজের আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে এখানে এ ধরনের কোন ভন্ডামি চলবে না। চললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন জানান, আমি এই কবিরাজের কথা নতুন শুনছি। তবে তার দ্বারা কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

, ,
Powered by Blogger.