সিনেপাড়ার সমকামিতার কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি

আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তারপরেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরলো বলে! টলিপাড়ার সবার সব কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি এক নিমেষে আম-জনতার কাছে ফাঁস হয়ে যাবে। এক ঝটকায় খুলে যাবে এই টলিউড ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত মুখোশ। পরতে পরতে জানা যাবে টলিপাড়ার সমকামিতার গোপন কথা।
টলিপাড়ার কাস্টিং-কাউচ নিয়ে আমরা এত দিন কী জেনে এসেছি? কোনও মেয়ে এই টলিউড পাড়ায় পা রাখলে
তাকে কম-বেশি একটু-আধটু ‘শোওয়া-বসা’ করতেই হয়। এটাই চালু রীতি। ছেলেরা না কি অনেক সেফ! এসব কথা বিশ্বাস করলে ভুল করবেন; অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর থেকে শুরু করে অভিনেতা- সবার জন্যই বিছানা বিছিয়ে ওত পেতে থাকে এই টলিউড নিভৃতে। দুই পুরুষের ‘স্বাভাবিক সখ্যতার’ আড়ালেই চলে সুবিধে দেওয়া-নেওয়ার খেলা। প্রতিদিন কত ছেলে যে এইভাবে ‘কম্প্রোমাইজ’ করে যাচ্ছে! টলিপাড়ার এই গোপন কাহিনিকেই পরিচালক রণদীপ সরকার তুলে ধরেছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘১৯শে এপ্রিল’-এ।
১৯শে এপ্রিল মূলত পুংবাদী ছবি। নিজেদের কেরিয়ারে ফুলকি ছোটাতে মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছেলেদেরও যে নিজেদের কত রকম ভাবে বলি দিতে হয়, সেই ওঠা-পড়াটাই রণদীপ দেখাতে চেয়েছেন এই ছবিতে। শন বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাঞ্জল- এই তিন পুরুষের জীবন-যৌবনের গল্প ‘১৯শে এপ্রিল’। শন একজন অভিনেতা, রঞ্জিৎ একজন ট্রান্সজেন্ডার ফিল্ম মেকার আর প্রাঞ্জল একজন জিগোলো। তিন পুরুষ তিন পেশায় থাকলেও একটা জায়গায় তিন জনের টিকি বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটা হল কেরিয়ারের স্বার্থে শরীর দিয়ে ‘কম্প্রোমাইজ’।
তা, এমন ছবির নাম হঠাৎ ‘১৯ শে এপ্রিল’ কেন? ‘সেটা জানতে তো ছবিটা দেখতে হবে। তখনই বোঝা যাবে ছবিটা কেন ২০শে জুন বা ১৮ এপ্রিল নয়’, বললেন রণদীপ। কিন্তু এই নামে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিটি তো এখন প্রায় ক্লাসিকের পর্যায়ে চলে গেছে। তারপরে সাহস করে এই নাম রাখার মানে কী? পরিচালকের অকাট্য যুক্তি, ‘কেন মেঘে ঢাকা তারা, ২২শে শ্রাবণ যদি হতে পারে তাহলে ১৯শে এপ্রিল নয় কেন’? পাশাপাশি, ওই দিনে কী এমন ঘটবে ছবিতে, পরিচালক সেটা খোলসা করে না বললেও একথা স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়েছেন যে এই ছবির সব চরিত্র একেবারেই কাল্পনিক নয়। এমনকি গল্পগুলোও নয়। ইন্ডাস্ট্রির ভেতর নিজের দেখা মানুষগুলো, ঘটনাগুলোকে নিয়েই উনি তৈরি করেছেন ‘১৯ শে এপ্রিল’। রণদীপের বক্তব্য, দর্শক ছবিটা দেখলেই নাকি চিনতে পারবেন সেই সব ‘সেলিব্রিটি’-দের।
আর রণদীপ নিজে? তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত হয়ে কতটা স্বাধীন থাকতে পেরেছেন? তাঁকে কখনও কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে ‘আমার আনন্দবাজার’-এর কাছে খোলাখুলি জানালেন পরিচালক, ‘হ্যাঁ, ডাক অনেকবার এসেছে। কিন্তু আমি সেই পথ মাড়াইনি। আমি জোর গলায় বলছি এই ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের ঠিক যতটা কম্প্রোমাইজ করতে হয়, ছেলেদেরও ঠিক ততটাই করতে হয়। টলিউডে কাস্টিং কাউচ হয়। আমি যখন সহকারী পরিচালক ছিলাম তখন পরিচালকদের কাছ থেকে ওই ডাক পেতাম, যখন ছবি করতে এলাম তখন প্রোডিউসাররা ডাকল! অবশ্য শেষমেষ ববি ও বাবুর ভিবজিওর ক্রিয়েশন নিঃশর্তে এগিয়ে এল বলেই আমি ছবিটা করতে পারলাম। আমি তো অনেক নামকরা বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি। শুনলে অবাক হবেন, তাঁদের মধ্যে এমন পরিচালকও আছেন যাঁর ব্যবহারে আমি অনেক কিছুর আঁচ পেয়েছি! সেই আঁচ নিতে পারিনি বলে হয়তো ‘কাজ পারি না’ বলে ইউনিট থেকে আমায় তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে’!
এই ছবিতে পরিচালক যেমন নতুন, তেমন অভিনেতারাও। এই ছবি দিয়েই হাতে খড়ি হচ্ছে সুপ্রিয়া দেবীর নাতি শন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথম ছবিতেই এই ধরনের চরিত্র একটু বেশি বোল্ড হয়ে যাচ্ছে না? শন অবশ্য পাক্কা অভিনেতার মতোই বললেন, ‘আমার কোনও অসুবিধা হয়নি কাজটা করতে। ছবিটা করতে করতে একবারও মনে হয়নি রণদীপ অহেতুক কিছু করছে’। এই ছবিতে অবশ্য ওঁর দিদা সুপ্রিয়া দেবী নিজেও আছেন। সুপ্রিয়া দেবী নিজেও নাতির এই স্টেপকে বেশ স্পোর্টিংলি নিয়েছেন। বরং উনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বললেন, ‘আরে কত ছবিতেই তো মা হয়েছি! এখানে একজন ট্রান্সজেন্ডার ছেলের মায়ের রোল দিয়েছে বলেই তো ছবিটা করলাম’! তারই সঙ্গে অনেক বছর পর ‘ছোট বউ’ ছবির নায়িকা দেবিকা মুখোপাধ্যায় অভিনয় করছেন এই ছবিতে।
এরকম বিতর্কিত ছবির শ্যুটিং এখন প্রায় শেষ। একটা-দুটো গানের শ্যুটিং বাকি আছে কেবল। কিন্তু পরিচালক এবার একটু ভয় পাচ্ছেন। তখন তো ঝোঁকের মাথায় ছবিতে রিয়্যালিটি ধরতে গিয়ে প্রচুর সাহসী শট নিয়ে ফেলেছেন! এমন খোলামেলা পুরুষ-শরীর বাংলা ছবি খুব একটা দেখেনি। কিন্তু এখন রণদীপের কিন্তু-কিন্তু শুরু হয়ে গেছে- সেন্সর ছবিটা কাঁচি করে দেবে না তো?
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, সেন্সর না-হয় কাঁচি করে দৈহিক নগ্নতা ঢাকল, কিন্তু আমাদের এই সিনেপাড়ার ভেতরের নগ্নতা কী দিয়ে ঢাকবে সে? সে তো উলঙ্গ হবেই ‘১৯শে এপ্রিল’-এ। এই অগস্টেই। তার বেলা?

,
Powered by Blogger.