আমিরাতের শ্রম বাজার সহসা খুলছে না

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম বাজার সহসা খুলছে না। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে আগের মতো আর কর্মী যাবে না দেশটিতে। আগামী বছর দেশটির একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে। এরপর ক্রমে ক্রমে হয়তো বরফ গলা শুরু হবে। এমনই
তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি’র কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার সংযুক্ত আরব  আমিরাত। গত বছর হঠাৎ করে সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। এর আগে গড়ে প্রতি মাসে ২২ থেকে ৩০ হাজার কর্মী যেতো সেখানে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য চলতি মাসের ১১ থেকে ১৭ই মে দেশটি সফরে যান সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সংযক্ত আরব আমিরাতে কর্মী পাঠানো প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, আগের মতো কর্মী যেতে সময় লাগবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে আসবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। কেবলমাত্র আলোচনা শুরু করেছি। অনিয়মগুলো চিহ্নিত করতে হবে।  ওখানে আমাদের দূতাবাস ও দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশ সফরে আসবে। তিনি আরও বলেন, তাদের ৮ লাখ লোকের দেশে আমাদেরই ১৫ লাখ কর্মী রয়েছে সেখানে। আশা করছি, তারা সৌদি আরবকে অনুসরণ করবে।
অভিযোগ রয়েছে দেশের বিমানবন্দর, ইমিগ্রেশন, রিক্রুটিং এজেন্সি, বিএমইটি’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় কর্মীরা। এছাড়াও দালাল চক্র ৪-৫ লাখ টাকা নিয়ে কর্মীদের সেখানে পাঠায়। যা তারা ধারকর্জ করে পরিশোধ করেন। এই টাকা তুলতে গিয়ে তাদের সেখানে হিমশিম খেতে হয়। এভাবে কর্মীরা সেখানে গিয়ে অপকর্ম করার কারণে উদ্বিগ্ন আরব আমিরাত সাময়িকভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এই শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার ফলে  খাতটি মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে বেশি। চাকরি হারিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজারো লোক দেশে ফিরছেন। এর সঠিক হিসাব বিএমইটি’র কাছে নেই। কূটনৈতিক ব্যর্থতা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও জনশক্তি রপ্তানিকারক কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে এই দুর্যোগ। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় এ খাতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর একমাত্র আরব আমিরাতই সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই দু’টি দেশ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় এই বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ। এছাড়া ইরাক, কুয়েত ও লিবিয়া সরকারও বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ রেখেছে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ করে দিলে গত সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যায়। আরব আমিরাত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে আগামী দিনগুলোতে জনশক্তি রপ্তানিতে আরও বিপর্যয় দেখা দেবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে ৩৩ হাজার ৭৩ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ২৭ হাজার ৮৩০ জন, মার্চে ২৬ হাজার ৮৩ জন, এপ্রিলে ২৭ হাজার ৩৮ জন, মে মাসে ৩১ হাজার ৬৩৬ জন, জুনে ২৩ হাজার ২৫ জন, জুলাইতে ২৭ হাজার ৫৩৫ জন, আগস্টে ১৫ হাজার ৭৭১ জনশক্তি পাঠানো হয়েছে সেখানে। অথচ সেপ্টেম্বরে হঠাৎ এই সংখ্যা কমে ২ হাজার ৩৩৭ দাঁড়ায়। আর অক্টোবরে এসে এই সংখ্যা আরও কমে ৩৫৫ জনে, নভেম্বরে ৩৫১ ও ডিসেম্বরে তা ৪১৮ তে পৌঁছায়। আর চলতি বছরে গড়ে ৭শ’ কর্মী যাচ্ছেন দেশটিতে। গত বছর ৬ লাখ ৭ হাজার ৬২ কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জনের। ২০১১ সালে দেশটি বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৯ কর্মী নিয়েছিল। আর সৌদি আরবে মাসে গড়ে এক থেকে ২ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

,
Powered by Blogger.