আসামি ছাড়িয়ে নিতে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মীদের থানা ঘেরাও পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি

ক্ষমতাসীন দলের নেতার পুত্রকে ধরায় থানায় চড়াও হয়েছে ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা। মারধর করেছে পুলিশ সদস্যদের। লাঞ্ছিত হয়েছেন ওসি। হাতাহাতি হয়েছে পুলিশের সঙ্গে। খবর পেয়ে ঘটনার সংবাদ
সংগ্রহ করতে গেলে হাত-পা ভাঙার হুমকি দেয়া হয় সাংবাদিকদের। পরে আটক নেতা-পুত্রকে  ছাড়িয়ে তবেই শান্ত হয় উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা। গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানায় ঘটে এই ঘটনা।
পাঁচলাইশ থানা সূত্র জানায়, গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে হঠাৎ হানা দেয় পুলিশ সদস্যরা। হরতালের কর্মসূচিতে লোক জড়ো করার মিটিং চলছে-এমন খবরে সেখানে ঢুকে তারা ৪০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এর আগে ছাত্রশিবিরের ছেলেরা সেখানে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছাত্র আটক হওয়ার খবর পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা পাঁচলাইশ থানায় এসে ভিড় করতে থাকেন। যাদের ধরা হয় তাদের মধ্যে পটিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মফজলের পুত্রও ছিল। তাকে ছাড়িয়ে নিতে বেলা একটায় দলবল নিয়ে থানায় এসে উপস্থিত হয় তার অনুসারীরা। প্রথমে ঢুকেই ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে তারা গালাগাল করে। জানতে চায়, আওয়ামী লীগ নেতার পুত্র হওয়ার পরও কেন তাকে আটক করা হয়েছে। হাসান মুরাদ বিপ্লব নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে এই সময় উত্তেজিতভাবে কথা বলতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে হাতাহাতি শুরু হলে থানার ভেতরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারা ওসি প্রদীপের শার্টের কলার ধরে টানাটানি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকজন এসআই এগিয়ে এলে তাদের আটক ছাত্রকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। দিদারুল আলম নামের এক কনস্টেবলকে মফজলের অনুসারীরা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। বলে, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। ক্ষমতা কার বুঝে নিস।’
আবদুল মান্নান ফেরদৌস, দিদারুল আলম, হেলাল উদ্দিন, ওসমান গণিসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ১৫ জন নেতা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আটক ছাত্র কিছুতেই শিবির করতে পারে না। তিনি আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করায় বাধ্য হয়েই তারা থানায় এসেছেন। এর আগে তাদের সঙ্গে আসা একজনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থানা থেকে বের করে দেন পুলিশ সদস্যরা। থানার লোকজন তার মোবাইল ফোনটি আটক করে ডিউটি অফিসারের কাছে জমা দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের এসব সদস্য পুলিশের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ে। জানায়, পুলিশ গ্রেপ্তার বাণিজ্য করছে। আর তাই নিরীহ লোককে শিবির বানিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিল। যে ছেলেটিকে ধরে আনা হয়েছে সে প্রগতিশীল পরিবারের সন্তান। ভুল করে শিবিরের অনুষ্ঠানে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে চলে এসেছে।
বেলা দুইটায় পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে যাওয়া যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লবকে থানা থেকে রাগান্বিত হয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তাকে এই সময় ঘিরে ধরলে তিনি পুরো ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বলেন, ‘একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। পুলিশকে আশ্বস্ত করেছি, যাকে ধরা হয়েছে সে আর কখনও শিবিরের অনুষ্ঠানে যাবে না। তাকে ভুলিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এই বিষয়ে তিনি জানান, গতকাল সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ২০১৩ সালে এসএসসি জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনার আয়োজন করে শিবির পরিচালিত প্রবাহ কোচিং সেন্টার। দুপুরে ওই কমিউনিটি সেন্টারে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় সংবর্ধনা নিতে আসা শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪০ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসময় ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল হককেও আটক করেছে পুলিশ।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডবের বিষয়ে ওসি মানবজমিনকে বলেন, ‘শিবির কর্মীদের গোপন বৈঠক থেকে আমরা উঠতি বেশ কয়েকজন ছেলেকে ধরে থানায় নিয়ে এসেছিলাম। এদের মধ্যে সম্ভবত একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেও ছিল। সে জন্য থানার ভেতর ছাত্রলীগ-যুবলীগের বেশ কয়েকজন ছেলে এসে একটু তাণ্ডব বাধানোর চেষ্টা করেছিল। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তাদের সঙ্গে যা কিছু হয়েছে তা মিটে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আটক হওয়ার পর অনেককেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সম্ভবত ওরা যার জন্য এসেছিলেন সে-ও ছাড়া পেয়ে গেছে। এই জন্য বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করেননি।’

,
Powered by Blogger.