মঞ্জুর হত্যা মামলার জামিন বাতিল হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হতে পারেন এরশাদ

আওয়ামী লীগ নামক ‘চোরাবালিতে’ আটকা পড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যে ‘চোরাবালি’ থেকে হাজার চেষ্টা করেও বের হতে পারছেন না সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ে এরশাদের বিপদ আরো বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন এরশাদ। অপরদিকে, গোপনে দলীয় নেতাকর্মীদের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সরকারের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে।
সূত্র জানায় চাপে পড়ে প্রকাশ্যে আজমত উল্লাকে সমর্থন দিলেও গোপনে মান্নানের পক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন জাপা প্রেসিডেন্ট। এমনকি নির্বাচনের দিন গাজীপুর জাতীয় পার্টির কোন কোন নেতার সঙ্গে এরশাদ ফোনে কথা বলেছেন, মান্নানকে ভোট দেয়াসহ সার্বিক বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন সে তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে।
১৪ দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আবার ১৮ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাপে পড়ে আজমতকে সমর্থন দিয়ে গোপনে মান্নানের পক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়ায় জাপা চেয়ারম্যান কার্যত আওয়ামী ‘চোরাবালিতে’ আটকে পড়েছেন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের ভরাডুবির কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হারাতে পারেন মহাজোট থেকে পাওয়া ব্যাংক, টিভি স্টেশন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন থেকে শুরু করে ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য। এমনকি মঞ্জুর হত্যা মামলার জামিন বাতিল হয়ে এরশাদ নিক্ষিপ্ত হতে পারেন কারাগারে।
জাপা নেতাকর্মীরা এমনটিই ভাবছেন। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আচরণ তারা পেয়েছেন। শুধু তাই নয় জাপা নেতাকর্মীদের অভিমত, গাজীপুর নির্বাচনের পর এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার কথা বললেও খুব সম্ভব শিগগিরই এই ঘোষণা তিনি দিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক নেতা  বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এরশাদকে একটি বিশেষ ভবন থেকে ফোন করে সংবাদ সম্মেলন করে ১৪ দলের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেয়ার জন্য বলা হয়। অন্যথায় পুরনো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত ও মঞ্জুর হত্যা মামলার জামিন বাতিল করার হুমকি দেয়া হয়। আবার নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হেরে যাওয়ায় এরশাদের ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ জিসিসি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোটারদের ভোট আজমত উল্লা পাননি বলেই আওয়ামী লীগ মনে করছে।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জাপা চেয়ারম্যানের ওপর সরকারের ভয়াবহ চাপের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এরশাদ সাহেবকে মঞ্জুর হত্যা মামলায় জামিন বাতিলের হুমকি দিয়ে চাপের মুখে রেখে গাজীপুর নির্বাচনে ১৪ দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। এটি শুধু পার্টির নেতাকর্মীরা নয় সারা দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আসল জায়গায় ঠিক আছেন। তিনি মহাজোট থেকে বেরিয়ে এবার যাবেনই। তবে সরকার এরশাদ সাহেবকে ধরে রাখতে ‘কারেন্ট জাল’ ফেলেছে।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এরশাদ যে মহাজোটে আর থাকতে চাচ্ছেন না এটি জাপা নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু চাইলেই এরশাদ মহাজোট ছাড়তে পারবেন না। কারণ তার নামে পুরনো মামলাগুলো এ সরকার প্রত্যাহার করেনি। যখনই এরশাদ মহাজোট ছাড়ার কথা বলেন তখনই সরকার তাকে জেলে ঢোকানোর ভয় দেখায়। ফলে রাজনৈতিক বিশ্বেষকরা বলছেন, এরশাদ সাহেব সত্যি সত্যি আওয়ামী ‘চোরাবালিতে’ আটকা পড়েছেন।
 সুত্রঃহ্যালোটুডে

, ,
Powered by Blogger.