ঢাকায় বেড়ে চলেছে বিয়ে বিচ্ছেদ : আবেদনকারীর ৭৫ ভাগই নারী

ডিসিসি
দক্ষিণের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর নারীদের পক্ষ থেকে তালাকের আবেদন
আসছে শতকরা ৭৫ ভাগ আর পুরুষের পক্ষ থেকে ২৫ ভাগ। এ নিয়ে বিভিন্ন
শ্রেণী-পেশার মানুষের রয়েছে নানা বিশ্লেষণ। তবে সবাই বিষয়টি নিয়ে খুবই
উদ্বিগ্ন।
অনেকের মতে, নানা কারণে বিয়ে
বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। তবে দুটি কারণ প্রধান বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, মেয়েরা
আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত হওয়ায় এখন মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করতে নারাজ।
দ্বিতীয়ত, মোবাইল অপারেটরগুলোর সহজলভ্য অফার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও
পর্নোগ্রাফির মতো সহজলভ্য উপাদানে আকৃষ্ট হয়ে তারা মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
হারাচ্ছে।
ডিসিসি
দক্ষিণের এক পরিসংখ্যানে থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সালে তালাকের সংখ্যা ছিল
চার হাজার। ২০১০-এ তা বেড়ে সাড়ে পাঁচ হাজারে পৌঁছেছে। আর ২০১২ সালে তা বেড়ে
প্রায় সাত হাজারে পৌঁছে।
এদিকে
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডিসিসির সালিস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে নামে মাত্র।
শুধু তালাকের সনদ দেয়া ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম নেই তাদের। তালাকের আবেদন
আসার পর উভয়পক্ষকে ডেকে পারস্পরিক সমঝোতার কথা থাকলেও তারা তা করছে না। আর এ
বিষয়ে প্রতিমাসে প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানোর কথা থাকলেও তা পাঠানো হয়
না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামান্য
বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রী স্বামীকে পাঠাচ্ছেন তালাকের নোটিশ। এর মধ্যস্থকারী
হিসেবে ডিসিসির যে ভূমিকা থাকার কথা তারা তার কিছুই করছে না বলে অভিযোগ
করেছেন অনেকে।
কেউ
তালাকের আবেদন করলে আইনানুযায়ী ৯০ দিনে তিনটি সালিস করার পর
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল না হলে তালাক কার্যকর করতে হবে। কিন্তু তালাকের
আবেদন জমা পড়ার পর কোনো ধরনের সালিস কার্যক্রম না করেই নির্দিষ্ট সময় পর
পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে তালাক সনদ। ফলে সমঝোতার পরিবর্তে দিন দিন রাজধানীতে
বাড়ছে তালাকের সংখ্যা।
ডিসিসি দক্ষিণের
সূত্রে জানা যায়, বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটছে উচ্চবিত্ত পরিবারের
মধ্যে। মূলত পরকীয়া, পরনারী বা পরপুরুষে আসক্তি, যৌতুক ও শারীরিক
নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
ডিসিসি
উত্তরের অঞ্চল-১-এর নির্বাহী কর্মকর্তা ড. নাসির উদ্দিন বলেন, সামাজিক
অস্থিরতা, মাদকাসক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরস্পরকে ছাড় না
দেয়ার কারণেই বিয়ে ভাঙছে। কিন্তু নারীদের পক্ষ থেকেই তালাকের আবেদন বেশি
আসছে। এর কারণ তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার অনিশ্চয়তায় তালাকের রাস্তা বেছে
নিচ্ছে।
জানা গেছে, আগে ডিসিসির আইন
বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সালিস পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন এর সংখ্যা
আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় পুরো নগরীতে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে অঞ্চলভিত্তিক
সালিস বোর্ড গঠন করে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ। এসব অঞ্চলভিত্তিক অফিসে ১০
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সালিস পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। এ
সংখ্যা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
মূলত
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলায় তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে
অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে ডিসিসি দক্ষিণের অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা
কেএম কবীর আহমেদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমনিতেই আমাদের জনবল কম
তারপরও তালাকের আবেদন এলে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি এর সমাধানের। কিন্তু এ
বিষয়ে স্ত্রীপক্ষ আমাদের কথা শুনতে চায় না। পরে বাধ্য হয়ে আমরা তালাকের সনদ
দিয়ে দেই।