১৩ দফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে অক্টোবরে মাঠে নামছে হেফাজত

১৩ দফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে অক্টোবরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। এ জন্য দায়িত্বশীল নেতারা প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তৈরি করেছেন কর্মসূচির রূপরেখা। এখন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংগঠনের আমীর আল্লামা আহমদ শফী ৬৪ জেলায়
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা এমন তথ্য জানান। তারা বলেন, আবারও ঢাকায় মহাসমাবেশ, অথবা ঢাকা অবরোধ, কিংবা সারা দেশে রাজপথ-রেলপথ, স্থলপথ অবরোধ এসব কিছুতে বাধা পেলে সর্বশেষ একযোগে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কিংবা অবরোধ কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি তৌহিদী জনতাকে সম্পৃক্ত করার কাজও প্রায় সম্পন্ন। এখন কেবল আমীরের ঘোষণার অপেক্ষায়। হেফাজতে ইসলামের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, শাপলা অপারেশনের পর দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে এ সংগঠনের বাণী পৌঁছে গেছে। একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের নিরস্ত্র লাখ লাখ নেতাকর্মীর ওপর সরকারের নজিরবিহীন অত্যাচার-নির্যাতন বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। এতে সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনভিত্তি কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী হয়েছে। দেশের ৪০ হাজার কওমি মাদরাসার বার্ষিক পরীক্ষা পরবর্তী  ভর্তিসহ শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে আপাতত জাতীয় পর্যায়ে কোন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না। আঞ্চলিক পর্যায়ে শানে রেসালাতসহ নানা কর্মকাণ্ড চলবে। তবে মাদরাসাসমূহের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর শুরু হচ্ছে হজ মওসুম। তারপর ঈদুল আজহা। তাই এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে শেষ অক্টোবর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬ই এপ্রিল ও ৫ই মে’র চেয়ে অধিক সংখ্যক তৌহিদি জনতাকে নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। হেফাজতের এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরের ইতিহাসে অরাজনৈতিক ইস্যুতে দেশের আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা এভাবে মাঠে নামেনি, অকাতরে প্রাণ দেয়নি। কিন্তু মুসলিম জনতার এই আত্মত্যাগ নিয়ে সরকার তরফে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উপহাস সাধারণ মানুষককে দারুণভাবে আহত করেছে। ‘হেফাজত কর্মীরা গায়ে রক্ত মেখে শাপলা চত্বরে পড়ে ছিল’- স্বয়ং সরকার প্রধানের এ জাতীয় মন্তব্য মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে সংগঠনের  আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সামপ্রতিক নেতিবাচক প্রচারণা। এতে সংগঠনের বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীরাই নয়-ইসলামপ্রিয় জনতাও এক শ্রেণীর গণমাধ্যমের হঠাৎ এমন নেতিবাচক প্রচারণায় ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন। তারা বলছেন, সমপ্রতি ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সরকারের শোচনীয় পরাজয়ের পর এই প্রচারণা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। তারা বলছেন, নারীকে তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে আল্লামা আহমদ শফী’র দেয়া একটি ভিডিও ফুটেজ সমপ্রতি বিটিভি ও কয়েকটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এর সূত্র ধরে একাধিক সংবাদপত্র ও অনলাইন মিডিয়া একই রকম সংবাদ প্রকাশ করে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া  দেখা দেয়। হেফাজত বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মানববন্ধন করে একাধিক নারীবাদী সংগঠন। সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন এক শ্রেণীর পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী। বাদ যাননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এখানেই শেষ নয়-আল্লামা শফী’র গ্রেপ্তার দাবি নিয়ে মাঠে নামেন কতিপয় নারী নেত্রী। হেফাজতের মুখপাত্র মাওলানা মনির আহমদ বলেন,  কবে কখন কোথায় কি প্রেক্ষাপটে আল্লামা শফি এ ধরনের কথা বলেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। এমনকি তিনি আদৌ এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মাওলানা মনির বলেন, ভিডিও ফুটেজে হুজুরের ছবি পরিষ্কার  বোঝা গেলেও বক্তব্য পরিষ্কার নয়। বেশির ভাগ বক্তব্যই কাটপিস করা। তাছাড়া, কবে এই ফুটেজ ধারণ করা হয়েছে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। তাই কারা কি কারণে হঠাৎ একটি পুরনো ভিডিও চিত্র নিয়ে চিহ্নিত মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণায় নেমেছে তা-ও রহস্যজনক। ঢাকা মহানগর হেফাজতের সিনিয়র নেতা মাওলানা জাফর উল্লাহ খান বলেন, নৈতিক ও আদর্শিকভাবে পরাজিত হয়ে ইসলাম বিরোধীরা এখন দিশাহারা। তাদের এসব প্রচারণা কোন কাজে আসবে না। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা কর্মসূচি নিয়ে ইতিপূর্বে তারা একই ধরনের প্রচারণায় নেমেছিল। কথিত নারী সংগঠনকে মাঠে নামিয়েছিল। কিন্তু ৬ই এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ এবং ৫ই মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।-মানবজমিন

,
Powered by Blogger.