আমি একটা ভাঁড়, নামের আগে শুধু গোপাল ন- এ টি এম

অভিনয় করতে করতে তিনি চলে এসেছেন জীবনের শেষপ্রান্তে। আর এই মুহূর্তে এসে সবার মত তিনিও কষছেন তাঁর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব। জানালেন অনেক অজানা কথা, খেদ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-আকাক্সক্ষার কথা। জানালেন সিনেমা ও নাটকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সুদীপ্ত সাইদ।
চলচ্চিত্রে পা রেখেছেন কবে?
চলচ্চিত্রে এসেছি ১৯৬১ সনে উদয়ন চৌধুরীর হাত ধরে, যিনি কলকাতার বিখ্যাত “মানুষের ভগবান” চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন ।
আপনার ক্যারিয়ারের উঠতি
সময় সম্পর্কে জানতে চাই। এই দীর্ঘ যাত্রার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
৬১ সালে আমি যখন প্রথম চলচ্চিত্রে এলাম তখন আমি চতুর্থ এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি “বিষকন্যা ” চলচ্চিত্রে। আমার কাজ ছিল আর্টিস্টদের জোতা পাহারা দেওয়া। এভাবেই আমার চলচ্চিত্র জীবন শুরু। তারপর আরও কয়েকটি ছবিতে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছি। জহির রায়হান, শেখ লতিফ এদের সাথে কাজ করেছি।
অভিনয়ও কি তখন থেকেই শুরু করেছিলেন, না অনেক পরে?
প্রথম প্রথম আমি মঞ্চে কাজ করতাম। মঞ্চে অভিনয়ও করতাম। তো আমি যে সকল পরিচালকের সাথে কাজ করতাম তারা বিষয়টা জানতো। ছোটখাটো কোন শর্টে আর্টিস্ট অনুপস্থিত থাকলে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতো। এভাবেই অভিনয় শুরু করি। জহির রায়হানের ‘বড় মা’সহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করি। শেখ লতিফের ছবিতে কাজ করেছি। আর প্রথম কোন সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করি এ. জাকারদার পরিচালিত “নেহি জিন্দেগি” ছবিতে। এছাড়াও কামাল আহমেদ, ফতেহ লোহানী, এদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
দীর্ঘদিন ধরে আপনি এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন, মহাকালের সাক্ষীরুপে দেখছেন সবই। চলচ্চিত্রের উত্থান-পতন সম্পর্কে আপনি কিছু বলুন।
প্রথম প্রথম জহির রায়হান, আলমগীর কবির, কামাল আহমেদ এরা খুব ভাল মানের সুন্দর সুন্দর ছবি বানাতেন। সিনেমাগুলো দর্শকদেরও টানত। বিদেশী ছবির সাথে এই ছবিগুলো পাল্লা দিয়ে চলত। কিন্তু আস্তে আস্তে এই মানুষগুলো চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে গেলেন। নতুনরা আসতে থাকল। আর ইতিমধ্যেই এদেশে ঘটে গেল একটা বড় ধরনের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ হল। আমরা স্বাধীন হলাম। স্বাধীনতার পরপরই পাল্টাতে থাকল বাংলা সিনেমার চিত্র। কমার্শিয়াল ছবির নামে চলতে থাকল উল্টা-পাল্টা ছবি নির্মাণ। আর এই সময়েই পরিচালকরা ভারতীয় ছবি নকল করা শুরু করল, সেখান থেকেই মূলত বাংলা ছবির ধস নামা শুরু হয়ে গেল। ছবিতে অযথা মারামারি, হুড়োহুড়ির প্রচলন হলো। আর এই প্রচলনটা করলেন পরিচালক মিতা। তার “চাওয়া-পাওয়া” ছবিতেই প্রথম মারামারি শুরু হয়।
তাহলে অ্যাকশনধর্মী ছবিকে নেগেটিভলি দেখেন?
অ্যাকশন মানেইতো অযথা মারামারি। বাংলা ছবিতে মারামারি হবে কেন। বাংলা ছবি হবে নিরেট সুন্দর।
অশ্লিলতার সূত্রপাতও কি তখন থেকেই?
হ্যাঁ, ফতেহ লোহানী পরিচালিত “রাজা এল শহরে” ছবিতে প্রথম স্বল্প বসনা নারীকে উপস্থাপন করা হয়। অশ্লিলতার শুরু সেখান থেকেই।
বর্তমানে এই অশ্লিলতা মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। তো এখান থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
এটা প্রতিরোধ করা তখনই উচিৎ ছিল। শুরুতেই এটাকে প্রতিরোধ করা হলে সিনেমা এতটা অশ্লিল হতে পারতো না। আর এসব ছবিতে প্রথম প্রথম অভিনয় করলেও এখন ছেড়ে দিয়েছি। তখন অশ্লিলতার মাত্রাও ছিল কম। আসলেই একটা মানুষ আর কতটা নিচে নামতে পারে। তাই আমি এখন নাটক করছি। আর পরিত্রাণ সেটা আল্লাহ-মা’বুদই জানেন। তারপরও আমি মনে করি বাংলা সিনেমার এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।
সেন্সরবোর্ড তো এ ব্যাপারে কাজ করছে। আপনি এটাকে কতটুকু ইতিবাচক মনে করেন?
সেন্সরবোর্ডতো অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তার মন মানসিকতা সেই আগের জায়গাতেই আছে। আপনি হাঁটছেন এই সময়ে আর আপনার মাথাটা সেই ১৯৩০-এ পড়ে আছে, এভাবে আর কতটা যেতে পারবেন? এভাবে হবে না। পা ২০১৩-এ থাকলে মাথাকেও ২০১৩-এ রাখতে হবে। মন মানসিকতাকেও যুগোপযোগী হতে হবে। শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছেন, তাঁকে সালাম জানাই। কিন্তু তিনি পারবেন না, পারবেন না কারণ আর দশজনের জন্যই। অশ্লিলতা প্রতিরোধে সেন্সর বোর্ড কাজ করছে। আসলে কি জানেন, একটা ফলের সামান্য অংশ পচে গেলে তা কেটে ফেলে খাওয়া যায়। কিন্তু পুরো ফলটা পচে গেলে তা খাওয়া যায় না, ফেলে দিতে হয়। আমাদের সিনেমার বর্তমান অবস্থা হয়েছে এ রকম।
সিনেমার বর্তমান এই ধস থেকে কিভাবে সিনেমাকে বাঁচানো সম্ভব? বাংলা সিনেমাকে কিভাবে লাভজনক করা যায়?
সিনেমার এই ধস আসলে একদিনে নামেনি। দীর্ঘদিনে এই ধস নেমেছে। আর এই ধস কাটিয়ে তুলতে হলে রুচিশীল স্নিগ্ধ ছবি বানাতে হবে। ছবিতে একটি মেসেজ থাকতে হবে, একটা সোশাল কমিটমেন্ট থাকতে হবে। দর্শকের কাছে এই মেসেজ পৌঁছে দিতে হবে। এতেই পয়সা উঠবে, পরিচালকরা নতুন ছবি বানাবে। তৃতীয় ওয়ার্ল্ডের একটা গরীব দেশের পরিচালক-প্রযোজকরা টাকা না উঠে আসলে ছবি বানাবে কিভাবে!
তাহলে আপনার মতে বাংলা ছবি কেমন হওয়া উচিত?
ঐ যে বললাম ছবিকে রুচিশীল স্নিগ্ধ হতে হবে। একটা মেসেজ থাকবে, বাঙালি ঐতিহ্যের সমাবেশ ঘটবে, সাংস্কৃতিক আবহ থাকবে। একটা সোশ্যাল কমিটমেন্ট থাকবে এবং এই মেসেজ দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আসলেই আমরা কোন কমিটমেন্ট দিতে পারছি না। আমরা তারপরও ছবি করছি। আর এটা করছি আমাদের ভালবাসা থেকেই।
তাহলে বাংলা সিনেমার কেন্দ্রস্থল এফডিসি কি বাংলা সংস্কৃতির ধারক বাহক হতে পারছে?
এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলা ছবি নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। বাংলা ছবি একদিন পৃথিবীর বুকে বাংলা সংস্কৃতিকে মেলে ধরবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কিছু করার চেষ্টা করাতো দূরে থাক বরং এই মানুষটাকেই বিভাজন করার চেষ্টা করছেন অনেকেই। আরে বাবা বললেই তো হয় যে শেখ হাসিনা কিছু করতে পারছে না, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে, তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবো, আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চা করছি। কিন্তু তা না। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকেই মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এফডিসিও রাজনৈতিক খপ্পরের শিকার। আমি মনে করি এখানেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে, আদর্শকে ধারণ করেই পথ চলা উচিত। সিনেমার মাধ্যমে বাঙ্গালী ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে। অথচ বর্তমান চলচ্চিত্র একটা দুর্দশার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে।
বাংলা সিনেমার এই দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
বাংলা ছবির বর্তমান অবস্থা যাই হোক না কেন আমি বাংলা ছবি নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। বাংলা ছবি একদিন না একদিন পৃথিবীর অন্যান্য ছবির সাথে পাল্লা দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবেই। তবে এর জন্য নতুন প্রজন্মকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে তাদের। আমার কাছে খুব দুঃখজনক লাগে যে স্বাধীনতার এতটা বছর কেটে গেল অথচ কিছুই হল না বরং একটা পড়াশোনাহীন মেধাহীন একটা প্রজন্ম গড়ে উঠল। পড়াশোনা না থাকলে নিজেকে জানা সম্ভব নয়। আগে নিজেকে জানতে হবে, নিজেকে প্রকৃত বাঙালি করে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বাঙালি হতে শিখিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষ হতে শিখিয়েছেন। আমি যদি নিজেকে না জানি, নিজের দেশকে যদি না জানি, আমি কিভাবে আমাদের নিজস্ব সম্পদ বাংলা ছবিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবো। তাই পড়তে হবে। তবেই বাংলা ছবি পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।
মূলধারা বা বাণিজ্যিক ধারার ছবি বলে দুটি বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
ছবিতো ছবি। এটির মূলধারা বা বাণিজ্যিকধারা বলে কিছুই নেই। ঐ যে বলেছি রুচিশীল স্নিগ্ধ ছবি বানাতে হবে- এটাই হচ্ছে মূল বিষয়।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্পর্কে মাঝে মাঝেই নানা স্ক্যান্ডাল, নানা অভিযোগ শোনা যায়। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আসলেই বর্তমান সময়টাই কেমন যেন অন্যরকম। নীতি-নৈতিকতা বলে তেমন কিছুই দেখা যায় না। অরাজকতায় ভরে গেছে সবকিছু। আসলে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে নোংরামি থাকে কিন্তু একজন শিল্পীর মধ্যে কোন নোংরামি থাকে না। শুধু অভিনেতা হলে চলবে না, একজন প্রকৃত শিল্পী হতে হবে।
একজন অভিনেতা কখন শিল্পী হয়ে ওঠেন?
প্রথমে একজন ভাল মানুষ হতে হবে। সময়নিষ্ঠা থাকতে হবে, নৈতিকতাবোধ থাকতে হবে। আর এর জন্য পড়ে পড়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। নিজের সংস্কৃতিকে জানতে হবে। অভিনয় বা যেকোন কাজই হোক তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে। মেধার সমন্বয় ঘটাতে হবে। তবেই সে একজন শিল্পী হতে পারবে। তাই আগে ভাল মানুষ তারপর শিল্পী হতে হবে।
নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন?
নতুনদের ব্যাপারে কি বলব, আসলেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের সময় জ্ঞানের বড় অভাব, কি ফিল্মে কি নাটকে। শুটিং স্পটে এসেই বলে আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। আরে বাবা তোমার জন্য একজন প্রযোজক ইনভেস্ট করছে, একজন পরিচালক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে, তুমি নিজে সময়মতো আসোনি অথচ তাড়াতাড়ি যেতে চাও। এগুলো পরিহার করা উচিৎ।
আবার আপনার প্রসঙ্গে আসি। আপনি আপনার চরিত্রের সাথে খুব সুন্দর করে মিশে যান। এটা কিভাবে সম্ভব করে তুলেন?
আসলেই এটা অসম্ভবের কিছু না। আমি কোন চরিত্রে অভিনয় করছি সে চরিত্রটাকে নিজের মত করে উপলব্ধি করতে হবে। হাঁটা-চলা-কথা বলা থেকে শুরু করে সবকিছুই অবজার্ভ করতে হবে। আর এটা চারপাশের মানুষগুলোর ভেতর থেকেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তারপর চরিত্রটার সাথে মিশে যেতে হবে। চরিত্রের সাথে মিশে যেতে না পারলে শিল্পী হবো কি করে।
এবার আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
আসলে আমি আজীবন তেমন কোন ভাল অভিনয়ই করতে পারলাম না । আজীবন যা করেছি তাতো শুধু বাঁদরামিই করলাম। প্রকৃত অভিনয় করতে পারিনি।
নিজেকে এত খাটো করে দেখছেন কেন?
আমি আসলে নিজেকে খাটো বা বড় করছি না। আমি আমার আসল অবস্থানটাই বলছি। কারণ আমি স্টুপিড নই, আমি মেধাহীন নই। আমার যা করার কথা ছিল তার তুলনায় আমি তেমন কিছুই করতে পারি নাই।
নাট্যকারদের কমিটমেন্ট কি হওয়া উচিৎ? আপনার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে আপনার অভিমতটি জানতে চাই।
এখন যা লেখা হচ্ছে অধিকাংশই সোশ্যাল কমিটমেন্ট ছাড়া। সমাজের প্রতি এতে কোন মমত্ববোধ নেই। সমাজের প্রতি কমিটমেন্ট ছাড়া কোন কিছু শিল্পসম্মত হতে পারে না।
নানা ধরনের পরিচালকের সাথে আপনি এ পর্যন্ত অভিনয় করেছেন। তো তাদের সাথে কাজ করতে কেমন লাগত? আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
আগে যে সকল পরিচালকদের সাথে কাজ করতাম তারা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এখন আসলে গুণী পরিচালক পাওয়াই মুশকিল। এখনকার পরিচালকরা তো মনে করেন সিনেমা-নাটক খাওয়ার জিনিস। তো একজন শিক্ষিত ছেলে যখন শিল্পকে খাওয়ার জিনিস ভাবতে পারে তখন আর বলার কি আছে। আমি মনে করি শিল্প যদি খাওয়ার জিনিস হয়ে থাকে তাহলে এটাকে বাঁচানোর কোন উপায় নেই।
যেহেতু আপনার সমবয়সী তেমন কোন অভিনেতা নেই, তাই ইদানীং তরুণ অভিনেতাদের সাথেই অভিনয় করতে হয় আপনাকে। তো তরুণদের সাথে অভিনয় করতে কোন সমস্যা হয় কিনা? তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনার কিছু বলার আছে কিনা?
সমস্যা একটাই, বর্তমান ছেলে মেয়েদের সময়জ্ঞান তেমনটা নেই। আর আমি মনে করি অভিনয় করতে হবে নিজের মত করে। রাইটার কি লিখছে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়। চরিত্রটাকে নিজের মত করে ভেবেই তাদেরকে অভিনয় করতে হবে। ভাল গল্প দেখে চরিত্র দেখে।
অভিনয় শিল্পীদের পেশাদারিত্বের জায়গাটাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
অভিনয় একটা শিল্প। পেশাদারিত্ব থাকবে ঠিক আছে, কিন্তু শিল্পের মর্যাদাটুকুও বুঝতে হবে। আর অভিনয় যখন শিল্প হয়ে উঠবে তখন তার পেশাদারিত্বও সার্থক হবে। তাই শুধু টাকার জন্য হন্যে না হয়ে ভাল গল্প, ভাল চরিত্র দেখে অভিনয় করতে হবে। যাতে একটা মান পাওয়া যায়।
ভাল অভিনয় বা ভাল ফিল্ম নির্মাণের জন্য ভাল প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা দরকার। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, কমিটমেন্টটাই আসল। গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ তারা কি ছবি বানাচ্ছেন না? বা অনেকে তো ভাল অভিনয়ও করছে।
ডিজিটাল ফিল্ম কতটা ইতিবাচক?
সাধারণ নাটকের ক্যামেরা দিয়ে ছবি বানিয়ে ডিজিটাল ফিল্ম হিসেবে চালিয়ে দিলেই ডিজিটাল ফিল্ম হয় না। এটাকে হেজি মনে হয়। আসলে মনের মতো ছবি বানাতে হবে। সিনে আলট্রা ক্যামেরা দিয়ে শুট করতে হবে। তারপর এটা ভাল ভাবে এডিট করতে হবে। শুট করার সময় ক্যামেরা ম্যানকে বুঝিয়ে দিতে হবে কিভাবে কি করতে হবে।
বর্তমানে অনেকেই শর্ট ফিল্মের চর্চা করছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
এটাকে আমি ফিল্ম বানানোর জন্য মানসিক প্রস্তুতি বলেই মনে করি। ভাল ডিরেক্টর হওয়ার জন্য এটার প্রয়োজন রয়েছে। তারা পড়ালেখা করছে, একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। এখান থেকেই ভাল ছেলেরা বেরিয়ে আসবে। স্বাধীনতার এতটা বছর কেটে গেল অথচ একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠল না লেখাপড়া ছাড়া। তাদের মধ্য থেকে এই ছেলেগুলো লেখাপড়া করার চেষ্টা করছে, নতুন কিছু ভাবছে, এটাকে আমি ইতিবাচকই বলব।
বর্তমানে প্রচুর নাটক সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, এগুলো কি দর্শকের চাহিদা মেটাতে পারছে?
এখন নাটকে বাঁদরামি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। আর সিনেমা- এগুলোর নামগুলোই প্রমাণ করে দেয় সিনেমা কেমন হচ্ছে। বাসর ঘরে কি ঘটে তাই দেখাতে পরিচালকরা ব্যস্ত। না আছে সোশাল কমিটমেন্ট না আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বহুবার আপনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। তো সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে আপনার কেমন অনুভূতি হয়?
বর্তমান সাংবাদিকদের কথা আর কি বলব? পড়ালেখাহীন, বিবেক বোধহীন একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। সাংবাদিকরাওতো এর বাইরে নয়। আমি একটা সিনিয়র আর্টিস্ট, আজও তারা আমাকে প্রশ্ন করে আমি কি খাই, আমাকে দেখে মানুষ হাসে কিনা? আমার ঈদের স্মৃতি কেমন ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব উত্তর দিতে দিতে এখন আমি ক্লান্ত। বাবারে আমি দু-দিন পরে কবরে চলে যাবো- এখনও যদি আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিই তাহলে নিজের কথা বলব কবে। আমি এখন আমার নিজের কথাগুলো বলে যেতে চাই।
আপনার জীবনের এই শেষ মুহূর্তে আপনার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা জানতে চাই।
আমার কোন প্রাপ্তি নেই। চলচ্চিত্রে এসেছিলাম কিছু করার জন্যে, কিন্তু ফিরে যাচ্ছি শূন্য হাতে। ভাল কোন পরিচালক পেলাম না, পেলাম না ভাল কোন চরিত্রে ভাল কোন গল্পে অভিনয় করতেও। সুযোগ পেয়ে যদি ফেল করতাম তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু আমি কোন সুযোগই পেলাম না। আমার প্রাপ্তি হল আমি একটা ভাঁড়, নামের আগে শুধু গোপাল নেই।

,
Powered by Blogger.