পর্দায় স্বীকৃতি, বাস্তবে অসহায় সমকামিতা

ইংলিশ চ্যানেলের দু’পারে দু’রকম স্রোত।
গত সপ্তাহে সমকামী বিয়েতে আইনি সিলমোহর দিয়েছে ফ্রান্স। রবিবার ছিল আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন। সে মঞ্চেও ‘পাম দোর’-এর সম্মান পেল দুই মহিলা সমকামীর প্রেমকাহিনি নিয়ে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র ‘ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার’। আর ঠিক এমন সময়ই
ব্রিটেনে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে রাজনৈতিক আশ্রয় ভিক্ষা করছেন দুই পাকিস্তানি মহিলা সমকামী। মে মাসের গোড়ায় আইনি বিয়ে সেরেছেন তাঁরা। সে খবর দীর্ঘ পথ উজিয়ে পৌঁছেছে তাঁদের আপন দেশেও। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খুনের হুমকি পেতে শুরু করেছেন রেহানা কৌসার এবং সোবিয়া কমার নামে ওই দম্পতি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বছর তিনেক আগে বার্মিংহামে আলাপ হয়েছিল রেহানা-সোবিয়ার। তার পর বছর খানেক দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারে এক সঙ্গে থাকেন তাঁরা। তখন থেকেই অবশ্য আঁচ করেছিলেন সমকামিতার কট্টর বিরোধী পাকিস্তানে তাঁদের সম্পর্কের স্বীকৃতি মেলার সম্ভাবনা প্রায় নেই। দেশ থেকে খুনের হুমকি আসার পর তাঁরা বুঝে যান সেখানে ফেরার সব পথ বন্ধ। আপাতত তাঁরা ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায়। কিন্তু এই ব্রিটেন থেকেও তো প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ওই দম্পতি। তা হলে?
রেহানা বললেন, “এ দেশ আমাদের অধিকার দিয়েছে এবং এটা(বিয়েটা) ভীষণ রকম ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কী করছি, সেটা কারও দেখার দরকার নেই।” এই মানসিকতার জেরেই হয়তো ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম সমকামী দম্পতির তকমা পেয়েছেন রেহানা-সোবিয়া। হ্যালো-টুডের জন্য সম্পাদনা করেছেন তামান্না।
বাস্তবের প্রথাভাঙা প্রেমকেই রুপোলি পর্দায় তুলে ধরেছেন ‘ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার’-এর দুই মহিলা চরিত্র। গল্পটা মূলত বছর পনেরোর এক কিশোরীর। যে কি না নিজের থেকে বড় বয়সের এক মহিলার প্রেমে পড়ে। ১৮৭ মিনিটের ছবিতে সেই ‘অসামাজিক’ প্রেমেরই গল্প বলেছেন ফরাসি-তিউনিশীয় পরিচালক আব্দেললতিফ কেশিশে।
সে গল্পে মুগ্ধ স্টিভেন স্পিলবার্গ। নজিরবিহীন ভাবে পুরস্কার মঞ্চে তাই পরিচালকের সঙ্গে দুই অভিনেত্রীকেও ডেকে নিলেন তিনি। গোটা প্রেক্ষাগৃহ তখন ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ দিচ্ছে।
পর্দার সমকামী প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করা অ্যাডেল এক্সারকোপাউলো এবং লি সেদো-র মুখে তখন চওড়া হাসি।
তবে সমালোচনাও কুড়িয়েছেন এঁরা। যেমন পর্দায় বারো মিনিটের যৌনদৃশ্য মানতে পারেননি পশ্চিমী দুনিয়ার অনেক সমালোচকই। সেই প্রেমকেই সম্মান জানালেন স্পিলবার্গরা। দেশের মাটিতে বিদেশি বিচারকের হাত থেকে স্বীকৃতি পেলেন কেশিশে। ফ্রান্সে আইনি স্বীকৃতির সঙ্গে সম্মানও পেল সমকামিতা।
ইংলিশ চ্যানেলের ও পাড়ে যে স্বীকৃতির জন্য আর্জি জানিয়ে চলেছেন রেহানা-সোবিয়া।

Powered by Blogger.