জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩

অধ্যায়-৩
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ তোমাদের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অধ্যায়-৩ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

#নিচের উদ্দীপকটি দেখে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অধরা ও জান্নাতুল ফেরদৌস ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই খোঁজাখুঁজি করতে লাগলেন। হঠাৎ অধরার চোখে একটি বইয়ে কিছু অপরিচিত বাক্য দেখতে পেলেন। জান্নাতুল ফেরদৌস বললেন, ‘রাখ রাখ, এটাই তো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নমুনা।’ এই লেখাটাই “কা আ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল চঞ্চল চী পইঠা কাল” স্যার আমাদের এক দিন
ক্লাসে দেখিয়েছিলেন। ক্লাসে স্যার আরও বলেছিলেন, এ সাহিত্যকর্মের ধারাবাহিকতায় বাংলার অনেক কবিসাহিত্যিক আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।’

প্রশ্ন:
ক. চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?
খ. ‘কা আ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল চঞ্চল চী পইঠা কাল’-এর ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে অধরার অপরিচিত বাক্যগুলো বাংলা সাহিত্যের কোন সাহিত্যকর্মের নমুনা ফুটে উঠেছে? এ সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
ঘ. উদ্দীপকে স্যারের বক্তব্য এ সাহিত্যকর্মের ধারাবাহিকতায় বাংলার অনেক কবিসাহিত্যিক আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ সম্পর্কে তোমার বক্তব্য তুলে ধরো।
উত্তর: ক. পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।

উত্তর: খ. চর্যাগীতির বিখ্যাত রচয়িতাদের মধ্যে লুইপা ছিলেন একজন। ওই চর্যার এ নমুনাটি লুই পা লিখেছেন। বাংলায় এর শাব্দিক অর্থ হলো, শ্রেষ্ঠ তরু এই শরীর, পাঁচটি তার ডাল। চঞ্চল চিত্তে কাল (ধ্বংসের প্রতীক) প্রবেশ করে। এর ভাবার্থ হলো, শরীরের পাঁচটি ইন্দ্রিয় পাঁচটি ডালস্বরূপ। এই পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে বাইরের জগতের সঙ্গে জানাশোনা চলে। এতে বেশি আকৃষ্ট হলে বস্তুজগৎকেই মানুষ চরম ও পরম জ্ঞান করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
উত্তর: গ. অধরার অপরিচিত বাক্যগুলো বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদ সাহিত্যকর্মের নমুনা ফুটে উঠেছে। এগুলো পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে প্রথম নেপালের রাজদরবার থেকে আবিষ্কার করেন। পরে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ চর্যাপদের কাল নির্ণয় করেন। তিনি গবেষণা করে জানান, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকে বৌদ্ধসাধকেরা এগুলো লিখেছেন। ১৯১৬ সালে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদ আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়। আমাদের পক্ষে এগুলোর অর্থ বোঝা অনেক কঠিন। শাব্দিক অর্থ ছাড়াও এগুলোর ভাবার্থ রয়েছে। তাই এগুলো বুঝতে হলে শাব্দিক অর্থের পাশাপাশি ভাবার্থও বুঝতে হবে। অধরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে যে অজানা বাক্যগুলো দেখতে পেলেন, তা বাঙালির প্রথম সাহিত্যকর্ম চর্যাপদের কোনো বই। তাই তাঁর কাছে এটা অজানা মনে হয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস ঠিকই বলেছেন, এটা প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নমুনা।

উত্তর: ঘ. চর্যাপদের সাহিত্যকর্মের ধারাবাহিকতায় বাংলার অনেক কবিসাহিত্যিক আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে বর্তমান উন্নতি ও সমৃদ্ধ স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। আদিম বাংলা সাহিত্যের সেই সময় থেকে যেসব ব্যক্তির অবদানে শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পে আমাদের কৃতিত্ব আজ বিশ্ব পরিসরে সমাদৃত, তাঁদের নাম সবার আগে স্মরণ করতে হয়। তাঁরা হলেন বাংলা ভাষার গবেষকদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও ড. মুহম্মদ এনামুল হকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেছেন, চর্যাপদের কাল নির্ণয় করেছেন ও আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সংকলন করেছেন। এনামুল হক আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ইতিহাস লিখেছেন। বাংলার সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য ও পুঁথিসাহিত্য সংগ্রহ করে আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন আমাদের গ্রাম সমাজের সংস্কৃতিচর্চার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করেন। যুক্তিবাদী মননশীল প্রবন্ধসাহিত্যের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন আবুল ফজল, মোতাহার হোসেন চৌধুরী, আব্দুল হক প্রমুখ। উপন্যাস ও কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহসহ আরও অনেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। জসীমউদ্দীন, আহ্সান হাবিব, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদসহ বহু কবির অবদানে আমাদের কাব্যসাহিত্য উজ্জ্বল। মুনীর চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ আমাদের নাট্যব্যক্তিত্ব।
source : prothom-alo

Powered by Blogger.