‘নিবন্ধন বাতিল ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাথমিক প্রক্রিয়া’

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণাকে দেশে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সরকারি উদ্যোগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া মনে করছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনপ্রাপ্ত অন্যান্য ইসলামি ও সমমনা দল। এই দলগুলোর নেতারা মনে করছেন যে গ্রাউন্ডে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে একই গ্রাউন্ড অন্য ইসলামি দলগুলোরও রয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল চূড়ান্তরূপ
ফেলে একই অজুহাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনও বাতিল করা যাবে।
তাদের মতে, দেশকে ইসলাম ও ইসলামি রাজনীতিশূন্য করার নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সর্বশেষ জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দলগুলো উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এর ফলে দেশের পরিস্থিতি আরো জটিল রূপ নেবে বলেও তাদের আশঙ্কা। জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনপ্রাপ্ত কয়েকটি ইসলামি ও সমমনা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গতকাল এই মত দেন।
জামায়াত ছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনকৃত অন্য ইসলামপন্থী দলগুলো হচ্ছে- খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।
এসব দলের অনেক নেতা মনে করেন সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে ইসলামশূন্য করার যে চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে সব ইসলামি দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। ইসলামি দলের নিবন্ধন বাতিলসহ ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাথমিক এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালনের কথা জানিয়ে নেতারা বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কেউ ইসলাম তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলে রাজনীতি করতে পারবে না- এটা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। রায়ের বিস্তারিত জানার পর ইসলামপন্থী দলগুলো এ ব্যাপারে নিজেদের করণীয় ঠিক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে তারা জানান।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, যে অজুহাতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আপিল বিভাগের এই রায় বহাল থাকলে অন্য ইসলামি দলগুলোরও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। কারণ সব ইসলামি দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন। আশা করি আপিল বিভাগ সেটা করবে না। তিনি বলেন, এই রায় দেশের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফর উল্লাহ খান বলেন, জামায়াতের সাথে এ দেশের আলেম-ওলামাদের অনেক মতপার্থক্য থাকলেও জামায়াত একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল এতে কোনো সন্দেহ নেই। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, মূলত দেশে যাতে ইসলাম না থাকে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল চূড়ান্ত করতে পারলে তারা একই অজুহাতে অন্য সব দলের নিবন্ধনও বাতিল করবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এ দেশে দেখা যাবে কেউ ইসলামি নামও রাখতে পারবে না। ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে না তুললে এ দেশে ইসলামি রাজনীতির পথ রুদ্ধ হবে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের এই ঘটনা অবশ্য নিন্দনীয়। জামায়াত দেশে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছে। সংসদে তারা প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। এভাবে একটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বাতিলের কারণগুলো এখনো পরিষ্কার নয়। যদি আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বের কথা জামায়াতের সংবিধানে থাকার কারণে নিবন্ধন বাতিল করা হয়ে থাকে তবে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস না থাকলে ঈমানই থাকবে না। তিনি বলেন, এই ঘটনায় ইসলামি দল হিসেবে অবশ্যই ইসলামী আন্দোলনও উদ্বিগ্ন। ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অশুভ মতবলবের অংশ হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মেনে নেয়া যায় না।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাহীনুর পাশা বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এ দেশে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ। যে যুক্তিতে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে একই যুক্তিতে অন্য সব দলের নিবন্ধনও বাতিল হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। ইসলামি দল হিসেবে আমরা অবশ্যই এতে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। এ দেশকে ইসলামশূন্য করার এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফতে ইসলামীর মহাসচিব মাওলানা ফজলুল রহমান বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত একাটি অশনিসঙ্কেত। এর এক দিকে যেমন জামায়াতকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য আছে তেমনি পর্যায়ক্রমে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দুরভিসন্ধিও রয়েছে। বাম নাস্তিকদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং প্রতিটি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল জামায়াতের হঠাৎ নিবন্ধন বাতিলকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা বলা যায় না। সরকারের এই অশুভ পদক্ষেপ এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। সরকার ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পথে অগ্রসর হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এ দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি অবশ্যই অন্যান্য ইসলামি দলের জন্য চিন্তার বিষয়।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এ ব্যাপারে বলেন, ৪২ বছর ধরে দেশে রাজনীতি করে আসা একটি দলের হঠাৎ নিবন্ধন বাতিল কোনোভাবেই সঙ্গত নয়। যে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলের সাথে এক সাথে আন্দোলন করে আসছে। ইসলামি দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের ঘটনায় অবশ্যই অন্য ইসলামি দলগুলোর জন্য শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে। সূত্র : নয়া দিগন্ত

Powered by Blogger.