রিমান্ডে মাহমুদুর রহমানকে এবার ভিন্ন পন্থায় নির্যাতন

তিন দিনের রিমান্ড শেষে দৈনিক আমার দেশ-এর মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রিমান্ড শেষে রমনা থানা পুলিশ ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করলে বিচারক এরফানুল্লাহ এ আদেশ দেন। এ আদেশের পরই তাকে ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে সেখান থেকে মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে প্রিজনভ্যান কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগে তিন দিনের রিমান্ডে রোজাদার মাহমুদুর রহমানের ওপর এবার ভিন্ন পন্থায় ভয়াবহ নির্যাতন চালানো এবং তার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। রিমান্ডের তিন দিন তাকে ডিবি অফিসের মাত্র ১২/১৫ ফুট আয়তনের একটি সেলে ৩৫ জন ক্রিমিনালের সঙ্গে একত্রে গাদাগাদি করে রাখা হয়।


এতে প্রচণ্ড সাফোকেশনে মাহমুদুর রহমানসহ আটক বন্দিরা এক ভয়ঙ্কর পরিবেশে দিনরাত পার করেন। রিমান্ডের তিন দিন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ছিলেন খাওয়া-দাওয়া, গোসল, ঘুম, টয়লেট ছাড়া এক নারকীয় পরিবেশে। তাকে শুধু পানি ও এক টুকরা রুটি ছাড়া সাহরি ও ইফতারে কিছুই খেতে দেয়া হয়নি।
প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের মধ্যেই টয়লেট, গোসলহীন ও নির্ঘুম দিনরাত অতিক্রম করতে হয়েছে আমার দেশ সম্পাদককে। গতকাল মাহমুদুর রহমান তার আইনজীবীদের কাছে তার ওপর সরকারের ভিন্ন পন্থার এসব নির্যাতনের কথা জানান। টানা রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে প্রচণ্ড দুর্বল দেখাচ্ছিল। মাহমুদুর রহমান তার আইনজীবীদের বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে একমাত্র আল্লাহর রহমত ছাড়া আমার এভাবে থাকা সম্ভব ছিল না। আল্লাহই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পরপরই তিনটি মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ইলেকট্রিক শকসহ ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। রিমান্ডে নির্যাতনের ভয়াবহতার কারণে ৬ দিনের মাথায় তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় দেড় মাস ধরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পুরোপুরি সুস্থ না হতেই সরকারের চাপে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।
গতকাল তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলেও সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তার জামিনের জন্য বিচারকের কাছে কোনো আবেদন করেননি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আদালত ভয়াবহ দলীয়করণের ফলে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না জেনেই নিজের জামিনের আবেদন করবেন না।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় দায়েরকৃত পত্রিকায় উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের কারণে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ভাংচুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার একটি সাজানো মামলায় গত ২৭ জুলাই ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সারাদিন রোজা থেকে ইফতার মুহূর্তে তিনি ইফতার করতে চাইলেও তাকে ইফতার করতে দেয়া হয়নি। সেসময় তাকে প্রিজনভ্যানে রাখা হয়। নামাজ আদায়ের সুযোগও দেয়া হয়নি তাকে।
গত ১২ জুন পুলিশের উস্কানির এ মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে চার মাস অবরুদ্ধ থাকার পর কোনো পরোয়ানা ছাড়াই গত ১১ এপ্রিল সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন রাতেই পুলিশ তেজগাঁওয়ে আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।
পবিত্র রমজান মাসে একজন রোজাদার ও মজলুম সম্পাদককে রিমান্ডে নেয়ার ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশফাক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাস নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন মাহমুদুর রহমান। ওই সময় তার বিরুদ্ধে রমনা থানার মামলাটিসহ ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তেজগাঁও থানার দুটি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছিল।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় দায়ের করা ৩৩ নং মামলায় মাহমুদুর রহমানকে ২৮ নং আসামি করা হয়েছে। পুলিশের এসআই মীর রেজাউল করিমের দায়ের করা ওই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর কয়েকজন নেতা, ১৮ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাহমুদুর রহমানের পত্রিকায় উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচার করার কারণে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ভাংচুরের উদ্দেশে রওনা হয় কিছু লোক। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিল করে স্লোগান, রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে। ওই মামলায় মাহমুদুর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।সুত্র: amardesh

,
Powered by Blogger.