ধর্ষক যখন দারোগা বেনাপোলে তোলপাড়-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কিছু করে কি বিপদে পড়বো?

একটি ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেনাপোল পোর্ট থানায় তোলপাড় চলছে। অভিযুক্ত দারোগা প্রকাশ চন্দ্র ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দু’হাতে টাকা উড়াচ্ছেন। এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোলের কতিপয় নামধারী সাংবাদিক দারোগা প্রকাশ চন্দ্রের কাছ
থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিরও কোন খোঁজ মিলছে না   
। মেয়ের সন্ধানে তার পরিবারের সদস্যরা গত ২ দিন ধরে বেনাপোল চষে বেড়াচ্ছেন। ছুটছেন থানা থেকে হাসপাতাল আর সম্ভাব্য সব স্থানে। অনেকে বলছেন, ঘটনাটির প্রমাণ মুছে ফেলতে মেয়েটিকে নিয়ে দারোগা প্রকাশ বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটিয়েছেন কি না তা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাটের হজরত আলী গাজীর মেয়ে দীর্ঘ দিন বোম্বে ছিলেন। ঈদ উপলক্ষে তিনি পরিবারের লোকজনের জন্য কেনাকাটা করে গত ২৭শে জুলাই বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু পাসপোর্ট ভিসা না থাকায় তিনি অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে সীমান্তের সাদীপুর ঘাট দিয়ে সন্ধ্যায় দেশে ঢোকেন। খবর পেয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার এএসআই প্রকাশ চন্দ্র সাদীপুর গ্রামের ঘাট মালিক সবুরের বাড়িতে হানা দেন। এ সময় দারোগা প্রকাশ মালামালসহ সবুর ও ওই যুবতীকে আটক করেন। ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সবুরকে ছেড়ে দেন দারোগা প্রকাশ। আর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যুবতীর ওপর। থানায় নিয়ে আসার কথা বলে দারোগা প্রকাশ মালামালসহ যুবতীকে নিয়ে ওঠেন পোর্ট থানা থেকে ১শ’ গজ দূরের হোটেল মাহাবুবে। দারোগা প্রকাশ এই হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষে আগে থেকেই বসবাস করতেন। তিনি হোটেল ম্যানেজারের মাধ্যমে কৌশলে যুবতীকে ৩০১ নম্বর কক্ষের বর্ডার দেখিয়ে নিজ কক্ষে তোলেন। এর পর জেলের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এদিকে সুন্দরী নাদুস নুদুস ওই যুবতীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হোটেলের ম্যানেজারসহ আরও ২-১ জনের। কিন্তু তাদের বঞ্চিত করে দারোগা একাই রাতভর সুন্দরীকে ভোগ করবেন- এটা মেনে নিতে পারেননি হোটেলের ম্যানেজারসহ অন্যরা। ফলে খবরটি পৌঁছে যায় এক সাংবাদিকের কাছে। তিনি তার দলের ক’জনকে ক্যামেরা দিয়ে পাঠিয়ে দেন হোটেল মাহাবুবে। তারা অডিও এবং ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে রাত ১১টার দিকে পৌঁছে যান হোটেল মাহাবুবে। স্বঘোষিত এই সাংবাদিক গ্রুপটি দারোগা প্রকাশ ও যুবতীর বেডের দৃশ্য গোপনে ক্যামেরা বন্দি করেন। একপর্যায়ে তারা দারোগা ও যুবতীকে ভেতরে রেখে ৩০২ নম্বর কক্ষটিতে তালা লাগিয়ে দেন। ঘটনাটি চাউর হয়ে গেলে দারোগা প্রকাশ ওই সাংবাদিকের দারস্থ হন। তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দারোগা প্রকাশ চন্দ্রের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। দারোগা প্রকাশ ভিডিওতে নিজের অপকর্মের দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি এই সংবাদ বা ভিডিওটি প্রকাশ না করার দাবি জানান। বিনিময়ে ওই দারোগার কাছে ঈদ খরচ হিসেবে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেনদরবার শেষে দারোগা প্রকাশ তার সহকর্মী এসআই নারায়ন চন্দ্রের মাধ্যমে ওই সাংবাদিকের হাতে নগদ ৬০ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু ততক্ষণে এ খবর পৌঁছে যায় বেনাপোল কেন্দ্রিক আরও কিছু সাংবাদিকের কাছে। ফলে তারাও দারোগা প্রকাশের কাছ থেকে পকেটস্থ করেন আরও প্রায় অর্ধলাখ টাকা। এদিকে শেষ রক্ষা করতে দারোগা প্রকাশ ভোর রাতেই মেয়েটিকে তার মোটরবাইকের পেছনে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান বলে জানান হোটেল বয় নজরুল। কিন্তু গত ৩ দিনেও মেয়েটি তার বাড়িতে না পৌঁছানোয় ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। এদিকে মেয়ের সন্ধানে তার পিতা গত ২ দিন ধরে বেনাপোল বন্দর এলাকায় ঘুরছেন। শেষে লোক মুখে তার মেয়েকে পুলিশ আটক করেছে মর্মে খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান বেনাপোল পোর্ট থানায়। কিন্তু থানার রেকর্ড পত্রে আটকের কোন তথ্য নেই। ফলে হতাশ হয়ে তিনি থানা থেকে ফিরে আসেন। তিনি আশঙ্কা করছেন দারোগা প্রকাশ তার মেয়ের বড় ধরনের কোন ক্ষতি করেছে। এদিকে দারোগা প্রকাশ চন্দ্র ঘটনার পর থেকে এ বিষয়ে কোন কথা বলছেন না। গতকাল এ রিপোর্ট লেখার সময় বেশ কয়েকবার দারোগা প্রকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে দারোগা নারায়ণ চন্দ্র বলেন, এএসআই প্রকাশ বেনাপোল পোর্ট থানায় নতুন। তিনি হোটেল মাহাবুবের একটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকেন। ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে প্রকাশ আমাকে ফোন করে তার রুমে আসার অনুরোধ করেন। সহকর্মীর বিপদের কথা শুনে দ্রুত আমি ওই হোটেলে যাই। সেখানে আগে থেকেই ৩-৪ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। রুমে ঢুকে দেখি তারা ভিডিও ক্যামেরায় কি যেন দেখছে। আমি নিজেও ভিডিওটি দেখি। এ সময় মেয়েটি খাটের এক কোণে বসে কাঁদছিল। শেষ পর্যন্ত প্রকাশের কথা মতো আমি একজন সাংবাদিকের হাতে ৬০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে হোটেল ত্যাগ করি। পরে কি ঘটেছে তা বলতে পারবো না। মেয়েটি কে বা কোথা থেকে এসেছে বা কোথায় যাবে সে সম্পর্কে কোন তথ্য তিনি দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এএসআই প্রকাশ ব্লাক মেলিংয়ের শিকার। বেনাপোলের একদল ভুয়া প্রতারক সাংবাদিক তাকে ব্লাক মেইল করেছে। মানুষের জীবনে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে সাংবাদিক নামধারী সন্ত্রাসী রাসু, চোরাকারবারী আশরাফসহ অন্যরা যা করেছে তা রীতিমতো অপরাধ। তারা দারোগা প্রকাশকে ব্লাক মেইল করে প্রচুর টাকাও নিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি মিজান বলেন, কি করবো বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কিছু করে কি বিপদে পড়বো? source: mzamin

,
Powered by Blogger.