স্রেফ রাত্রি কাটাতেই হোটেলে ছিলেন প্রিয়াংকা,পাচারের সাথে জড়িত নয়

প্রিয়াংকা জামান। দেখতে খুবই সুন্দরী, স্মার্ট। বয়স ২২ বছর। অভিনয় করেন নাটকে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘আজিজ মার্কেট’ নামক নাটকে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন। নিয়মিত অংশ নেন ‘ফ্যাশন শো’ এবং মডেলিং-এ। বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। থাকেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি
পাস। বাবা নেই। মা গৃহিণী। কোন ভাই নেই। বড় এক বোন আছে। এরই মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন আন্তর্জাতিক পাচারকারী ও প্রতারক দলের সদস্যদের সঙ্গে। মঙ্গলবার রাতে তিনি ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজধানীর অভিজাত হোটেল ‘লেক শোর’ থেকে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় ৩ লিবীয় নাগরিককে। তাদের একজনের সঙ্গে ওই হোটেলে রাত্রি যাপন করছিলেন প্রিয়াংকা। দাবি করছেন- তিনি লিবীয় নাগরিক সামির আহমেদ ওমরের গার্লফেন্ড। ওমরেরও দাবি একই ধরনের। উভয়ের পরিচয় ৭ মাস আগে।
প্রিয়াংকা ও ওমর ছাড়া ওই হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমারা মোহাম্মদ আমারা এবং মোবারক ফার্গ সেলিম-কে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শহিদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন একটি টিম তাদের গ্রেপ্তার করে। সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ ছাড়াও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্লাহ নজরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি- গুলশানস্থ লেক শোর হোটেলে অবস্থান করে কতিপয় লিবিয়ান নাগরিক লিবিয়ায় পাঠানোর নাম করে দেশীয় লোকজনের কাছ থেকে অর্থ ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে। এ খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ডিবি’র একটি চৌকস টিম হোটেলের ২০৮ ও ৩১২ নম্বর কক্ষে অভিযান চালায়। তারা প্রথমে ডিবি’র দলকে চ্যালেঞ্জ করে। প্রায় ১ ঘণ্টা বাক-বিতণ্ডার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৬৮৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ১ লাখ ৮১ হাজার ৩০৪ ডলার, ১০ লাখ ৬৬ হাজার হাজার ৫০২ টাকা, ৮ লিবিয়ান দিনার, ২ কাতারীয় রিয়াল, ৭টি মোবাইল সেট, ১টি ল্যাপটপ, ২টি আইপ্যাড, ১টি ব্ল্যাকবেরি নোটপ্যাড, ২ বোতল সুইডিশ ভদকা, ২টি মাস্টার কার্ড এবং ৭টি আইডি কার্ড জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত অর্থের কোন বৈধতা তারা দেখাতে পারেনি। তাদের নিজের কোন পাসপোর্টও নেই। মোল্লাহ নজরুল ইসলাম জানান, লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে তারা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অবৈধভাবে লিবিয়ায় গিয়ে গত রমজানের ঈদের আগে প্রায় ৬০০ লোক দেশে ফেরত এসেছে। তাদেরকে এ চক্রটিই লিবিয়া পাঠিয়েছিল।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, এ চক্রের সঙ্গে দেশীয় কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব এজেন্সির বেশির ভাগই ভুয়া। বিষয়টি ভালভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন বা এসবি’র কোন দুর্বলতা আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রিয়াংকাসহ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হবে। অধিকতর তথ্য পেতে আজ বৃহস্পতিবার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
ডিবি’র এসি তারেক বিন রশিদ জানান, একজনের পাসপোর্ট আরেকজনের বহন করার কোন নিয়ম নেই। হোটেলে বসে টাকা লেন-দেনের কোন নিয়ম নেই। বিদেশে লোক পাঠাতে হলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেন-দেন করতে হয়। তারা অবৈধভাবে শ’ শ’ পাসপোর্ট নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। পরস্পর যোগসাজশে নানা কৌশলে বাংলাদেশ সরকারের কোন অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ও অর্থ সংগ্রহ করে মুদ্রা পাচার করে এ চক্রটি। এরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচারকারী দলের সদস্য। পাসপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও কেন বিদেশী নাগরিকদের এ ধরনের কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে তা জানতে হোটেল কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
লিবীয় পাচারকারী দলের প্রধান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রায় ১ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছি। আমরা বৈধভাবেই লিবিয়ায় লোক পাঠিয়ে থাকি। অফিস না থাকার কারণে আমরা হোটেলে বসে আনুষঙ্গিক কাজ করছিলাম। নিছক গার্লফ্রেন্ড হওয়ার কারণেই প্রিয়াংকাকে কাছে রেখেছিলাম। প্রিয়াংকাও একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর মডেলিং-এ যোগ দিই। এরপর আর পড়ালেখা করতে পারিনি। বিদেশে লোক পাঠানো সংক্রান্ত কোন কাজে আমি জড়িত নই। কয়েক মাস আগে ওমরের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমরা দু’জন ভাল বন্ধু। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দু’জনও আমার পরিচিত। তিনি জানান, অমার বড় বোনেরও একাধিক বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। তিনিও মডেলিং করেন। আমাদের দু’ জনের আয় দিয়েই সংসার চলে।

Powered by Blogger.