=>> রফিকুল আমীন, জেনারেল হারুনসহ ডেসটিনির ২২ কর্মকর্তার জামিন বাতিল

অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে করা মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ২২ জন কর্মকর্তার জামিন বাতিল করে দিয়েছেন আদালত। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জহুরুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এই মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত গত ৬ আগস্ট ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন,
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক ও পরিচালক সাঈদ-উর-রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ১৩ আগস্ট জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পুনঃশুনানির (রিভিশন) আবেদন করে। জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ১২ সেপ্টেম্বর আবেদন মঞ্জুর করে জামিন বাতিল করেন। পরদিন আসামিপক্ষ ভারপ্রাপ্ত বিচারকের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করলে বিচারক জহুরুল হক ওই আদেশ বাতিল করে আবার শুনানির আদেশ দেন। ৫ সেপ্টেম্বর ১৬ জন এবং ৯ সেপ্টেম্বর একজন জামিন পান। ওই আদেশের বিরুদ্ধেও দুদক পুনঃশুনানির আবেদন করে। গতকাল ওই ১৭ জনের জামিনও বাতিল করেন আদালত।
রফিকুল আমীন ও হারুন-অর-রশিদ ছাড়া অন্য যাঁদের জামিন বাতিল করা হয়েছে তাঁরা হলেন: রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারাহ দীবা, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান ও নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস; ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকরাম হোসেন, শিরিন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান ও আবুল কালাম আজাদ।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা গতকাল আদালতে বলেন, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি সঠিক নয়। তাঁরা বলেন, লভ্যাংশ নেওয়ার কারণে অপরাধ হলে কোম্পানি আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। তাই নিম্ন আদালত আইনানুগভাবেই জামিন দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারকের নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল করার এখতিয়ার নেই।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতে বলেন, জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত হিসেবেই ভারপ্রাপ্ত বিচারক আদেশ দিয়েছেন। তাই তাঁর এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এ অভিযোগ করতে হলে আসামিদের উচ্চ আদালতে যেতে হবে। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
মোশাররফ হোসেনকে সহায়তা করেন কবীর হোসেন, মীর আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। ডেসটিনির পক্ষে শুনানি করেন কাজী নজিবুল্লাহ, এহসানুল হক সমাজী, আহসানুল করিম ও আমিন উদ্দিন।
অবৈধভাবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা স্থানান্তরের অভিযোগে দুদক গত ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় দুটি মামলা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ডেসটিনি-২০০০-এর নামে ব্যাংকে জমা হয়েছে দুই হাজার ৮১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৮০০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের নামে জমা হয়েছে ৮৩৫ কোটি চার লাখ টাকা। এর মধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে ৮৩০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে জমা হয়েছে এক হাজার ৪৮৪ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে এক হাজার ৪৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারাহ দীবা, মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ হোসাইন, মেজবাহ উদ্দিন, সাঈদ-উর-রহমান, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, ইরফান আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জামসেদ আরা চৌধুরী, ফরিদ আক্তার প্রমুখের নামে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ ছাড়া ওই তিন প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হওয়া অর্থ পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অর্থাৎ ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে: রোটি হারবাল, রোটি ফার্মাসিউটিক্যালস, অটো স্পেস, রশিদ কৃষি খামার, প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড, সফটক অনলাইন (প্রাইভেট) লিমিটেড, ডেসটিনি সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং লিমিটেড। প্রচ্ছায়া (প্রা.) লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস থেকে ৭৮ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে।
কার নামে কত টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ১৭৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে সাঈদ-উর-রহমান, তাঁর স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রোটি হারবালের নামে। গোফরানুল হক ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৮৫ কোটি ৫৫ লাখ; রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৮১ কোটি ৬৫ লাখ; নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী মিতু রানী বিশ্বাস ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাপ্পী অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে ৩৪ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে।
শুধু ব্যক্তি নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছে মেজবাহ উদ্দিনের হিসাবে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, শেখ তৈয়েবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা রহমানের নামে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের নামে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, জামসেদ আরা চৌধুরীর নামে ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের নামে ১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ফরিদ আক্তারের নামে সাত কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ইরফান আহমেদের নামে এক কোটি আট লাখ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে হারুন-অর-রশিদ ও তাঁর স্ত্রী লাইলা নাজনীন হারুনের যৌথ হিসাবে জমা হয় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে রশিদ কৃষি খামারের হিসাবে। এই টাকার মধ্যে আট কোটি ৪৯ লাখ টাকা এসেছে ডেসটিনি গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাব থেকে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেসটিনির পক্ষ থেকে ৬৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।

Powered by Blogger.