কাকার কুদৃষ্টি এড়াতে ঠাঁই গির্জায়

কাকার নজর পড়েছিল ভাইঝির ওপর৷ ধর্ষণের চেষ্টা বিফল হলেও শ্লীলতাহানি করেছেন একাধিক বার৷ বাবা-মাকে বলে লাভ তো হয়ইনি, উল্টে কপালে জুটেছিল কিল-চড়-লাঠি৷ পরিবারের দোহাই দিয়ে এবং লোকলজ্জার ভয়
দেখিয়ে মুখ বন্ধ করতে বলা হয় তাকে৷ দিনের পর দিন মা এবং দুই কাকিমাকেও ছোট কাকার হাতে ধর্ষিতা হতে দেখেছে সে৷ তাই বাড়ি ছেড়ে মুম্বই পালিয়েছিল ওই নাবালিকা৷ মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার পুলিশ ফিরিয়ে আনে তাকে৷ তবে বাড়ির পরিবেশে আর ফিরতে চায়নি সে৷ গুণধর কাকাটিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ সেলিনা আপাতত আশ্রয় পেয়েছে মাসির বাড়িতে৷
মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী ছোট থেকেই দেখে এসেছে, কাকা ইয়াসিন শেখ নিয়মিত জবরদস্তি করে মা-কাকিমাদের সঙ্গে ৷ কিন্ত্ত কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না৷ সমাজের ভয়ে৷ সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে৷ বড় হতেই কাকার কুনজরে পড়ে সে-ও৷ একবার ধর্ষণের চেষ্টাও করে ইয়াসিন শেখ৷ কিন্তু সে যাত্রায় পালিয়ে বাঁচে। তবে কাকা শ্লীলতাহানি করে একাধিক বার৷ নিজেকে বাঁচাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ছাত্রীটি৷ ডায়রির পাতায় রেলপথের ম্যাপ দেখে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ-সাঁইথিয়া হয়ে হাওড়া আসে সে৷ এর পর উঠে বসে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে৷ পৌঁছে যায় মুম্বই৷
আশ্রয় চেয়েছিল সেখানকার এক গির্জায়৷ ভেবেছিল সন্ন্যাসিনী হবে৷ কিন্ত্ত সব শুনে গির্জার তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ এ দিকে, ছাত্রীটির বাবাও যোগাযোগ করেছিলেন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে৷ দিন দুয়েক পর মুম্বই থেকে ফোন পেয়ে পুলিশের একটি দল রওনা দেয় সেখানে৷ সঙ্গে ছিলেন ছাত্রীটির বাবাও৷ প্রথমে আসতে রাজি ছিল না সে। পুলিশ অফিসারদের সব কথা খুলে বলে সে৷ তাকে বুঝিয়ে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আসা হয়৷ তবে বাড়ি ফেরেনি ছাত্রীটি৷ ডেকে পাঠানো হয় মাকেও৷ তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে জানান, সংসার ভাঙার ভয়ে মুখ বুজে থাকতে হয়েছে তাকে৷  মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইয়াসিন শেখকে৷ ছাত্রীটি বলে, ‘এই রাজ্যে কোথাও গেলে, বাড়ির লোকে ঠিক খুঁজে বের করত৷ ঘরবন্দি করে রাখত আমাকে৷ গলা টিপে মেরে ফেলত৷’
বহরমপুর সিজেএম আদালতে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়ে মা-বাবার কাছে ফিরতে অস্বীকার করে ছাত্রী৷ শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের ভাবতায় মাসির বাড়িতে তার থাকার ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ৷ নতুন সিমকার্ড-সহ মোবাইলও দেয়া হয়েছে তাকে৷ তাতে সেভ করা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার, পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর এবং তদন্তকারী অফিসার মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোবাইল নম্বর৷ যাতে কোনও বিপদ হলেই যোগাযোগ করতে পারে সে৷ বাবা-মা নয়, মেয়েবেলা খুঁজে পেতে পুলিশকাকুদেরই বেশি বিশ্বাস করে ছাত্রীটি৷

,
Powered by Blogger.