প্রেম প্রতারণার শিকার মিম-মিথ্যা অপবাদ নিয়ে প্রাণ দিতে হলো

মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মিমকে প্রাণ দিতে হলো। তার অপরাধ সে সরল ভাবে মন দিয়েছিল তার এক প্রতারক প্রেমিককে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রেমিক নগ্ন ছবি তুলে বিক্রি করেছে অন্যদের মোবাইলে। টাকা না দেয়ায় ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে নগ্ন ছবি। সারা দুনিয়ার মানুষ জানবে তাদের যৌন সম্পর্কের কথা। শেষে লজ্জা, ক্ষোভ আর অভিমান আতঙ্কেই রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে
নেয় মিম। এ ঘটনার জন্য দায়ী প্রতারক প্রেমিককে গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল এখন সাঘাটা উপজেলা। মিমের পিতা বিএনপির সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ মোহাম্মদ আলী। তার পুরো নাম মাহফিজ ইয়াসমীন মিম। স্থানীয় একটি স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মিম দেখতে সুন্দরী। স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে মেধাবী ছাত্রী হিসেবে বিশেষ প্রীতির পাত্রী। পাশের বাড়ির বখাটে ছেলে আরিফ তাকে বিয়ে করার জন্য ফুঁসলাতে থাকে। প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রেম অথবা বিয়েতে রাজি না হলে পরিণতি ভাল হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এ ধরনের হুমকির পর মিম তার বাবা-মাকে ঘটনাটি বলে। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি মিমের। এক পর্যায়ে মিমকে বাধ্য করা হয় প্রেম করতে। কিন্তু প্রতারক প্রেমিক বিষয়টি ভালভাবে মেনে নেয়নি। সে ভালবাসার ভান করে তার দেহ ভোগ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। এক পর্যায়ে আলাপ করার কথা বলে স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে যায় নির্জন গোডাউনে। তারপর আরিফ কিছু বোঝার আগেই মিমকে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানি করতে থাকে। আর সে ছবি তার বন্ধুদের দিয়ে মোবাইলে ধারণ করা হয়। তারপর মোবাইলে তোলা ছবি দেখিয়ে মিমকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। একবার বলে ২ লাখ টাকা না দিলে তার নগ্ন ছবি বাজারে পণ্য হিসাবে ছেড়ে দেবে। তারপর বলা হয়, তাকে ভাল না বাসলে এ ছবি বাজারে ছাড়া হবে। ভয়ে মিম শেষে আরিফের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে। আরিফ তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় এবং মিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌন হয়রানি করতে থাকে। আর চতুর আরিফ তার বন্ধুদের দিয়ে নগ্ন ছবি ভিডিও করে রাখতে থাকে। একদিন চতুর আরিফ মিমের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে। না হলে ভিডিও ছবি বাজারে বিক্রি করা হবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু টাকা দিতে রাজি নয় মিম। ফলে চতুর প্রেমিক আরিফ বিভিন্ন স্থানে প্রচার করতে থাকে মিমের সঙ্গে তোলা নগ্ন ছবি। সেই দিন থেকে মিম বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রতারক প্রেমিকের সঙ্গেও বন্ধ করে দেয় যোগাযোগ। কিন্তু আরিফ মানতে রাজি নয়। টাকা না হয় মিমের শরীর চাই তার। এ অবস্থায় মিম তার বাবা ও মাকে সব ঘটনা খুলে বলে। বিষয়টি যাতে বেশি দূর না গড়ায় সেজন্য মিমের পিতা আলহাজ মোহাম্মদ আলী আরিফ ও তার বাবার সঙ্গে পারিবারিক ভাবে মীমাংসার জন্য বৈঠকও করেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বখাটে আরিফ তার নেশার টাকা যোগাতে কোন ভাবেই ছবি হাতছাড়া করতে রাজি নয়। উপরন্তু হুমকি দেয় এ ছবি সে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। কিন্তু মিম কোনভাবেই সমঝোতায় রাজি নয়। আরিফ মোবাইলে তোলা ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এ খবর পৌঁছে যায় মিমের সহপাঠী ও স্বজনদের কাছে। মিম তখন কিছুদিন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু বোনারপাড়া ও সাঘাটা উপজেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। মানুষের মুখে মুখে ও সব মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে মিমের নানা ছবি, কথা। এক পর্যায়ে বাবা মা আত্মীয়-স্বজনদের অগোচরে লজ্জা, ক্ষোভ আর অভিমানে গত ২রা মার্চ বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরদিন স্থানীয় কবরস্থানে তাকে কবর দেয়া হয়। ১০ই মার্চ তার পিতা মোহাম্মদ আলী তার মেয়ে মিমকে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা জজকোর্টে মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নিদের্শে গত ২২শে মার্চ ২০ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। তবে মামলার পর থেকে বখাটে আরিফ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এদিকে নিহত মিমের পিতা মোহাম্মদ আলী জানান, আমার মেয়েকে ব্ল্যাক মেইল করা হয়েছে। এ কারণে সে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এখন হত্যার জন্য দায়ী বখাটে আরিফের শাস্তি দাবি করেন তিনিসহ হতভাগ্য মিমের সহপাঠীরা।

Powered by Blogger.