পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে উত্তরাঞ্চল সফরে খালেদা

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত মানুষের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে উত্তরাঞ্চল সফরে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রাত ৯টায় তিনি বগুড়া পৌঁছেন। আজ তিনি বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার কয়েকটি উপজেলা সফর করবেন। তিনটি শোক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। গতকাল বিকালে গুলশানের কার্যালয় থেকে বগুড়ার পথে রওনা হন। রাতে পৌঁছান বগুড়া সার্কিট হাউসে। সেখানে রাত কাটান। যাত্রাপথে নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতাকে স্বাগত জানান। মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টে
নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সরকারবিরোধী স্লোগান সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়াকে। আজ খালেদা জিয়া বগুড়ায় দু’টি ও জয়পুরহাটে একটি শোকসভায় বক্তব্য রাখবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরতলীর মাটিডালী বিমান মোড়ে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি সমবেদনা জানাবেন এবং শোকসভায় বক্তৃতা করবেন। এরপর জয়পুরহাট যাবেন। জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিতে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পর এক শোকসভায় বক্তৃতা দেবেন। সেখান থেকে বগুড়ায় ফিরে সার্কিট হাউজে মধ্যাহ্নভোজ শেষে গাবতলীর সোনারা ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পরিদর্শন এবং হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলার শিডিউল রয়েছে তার। পরে বিকাল সাড়ে চারটায় শাজাহানপুরের আড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক শোকসভায় বক্তৃতা এবং শাজাহানপুর ও গাবতলীতে পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বজনকে সমবেদনা জানাবেন। আজ সন্ধ্যার পরই তিনি ঢাকার উদ্দেশে বগুড়া ছাড়বেন।
ঢাকার উত্তরের প্রবেশদ্বার উত্তরা থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়। বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উত্তরা আসনে গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম এবং যুবদলের মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে দলের নেত্রীকে অভিনন্দন জানান। এরপর টঙ্গী ও গাজীপুরে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ্‌, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর এমএ মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের সমর্থকরা, টাঙ্গাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি সভাপতি এডভোকেট আহমেদ আজম খান, জেলা বিএনপি’র সম্পাদক শামসুল আলম তোফা, যমুনা ব্রিজ পার হয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সিরাজগঞ্জে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সমর্থকরা ব্যাপক গণজমায়েত করে। শোকার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত শুক্রবারই বেগম খালেদা জিয়ার বগুড়া ও জয়পুরহাট সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় শোক পালনের লক্ষ্যে এ সফর একদিন পিছিয়ে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমসহ অঙ্গদলের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে রাত সাড়ে ৯টায় বগুড়ায় পৌঁছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন  ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া সার্কিট হাউজে পৌঁছার পর তাকে স্বাগত জানান জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহ আলম, সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, পৌর মেয়র এডভোকেট মাহবুবুর রহমান, সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, গাবতলী পৌর মেয়র ও থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিল্টন প্রমুখ।
এদিকে চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে আড়িয়া বাজার, মাটিডালী মোড়ে শোক সভার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি ও বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা গাবতলীর সোনারায়ের সাবেকপাড়ায় ও রামেশ্বরপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার আরেকটি অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে, গাবতলী পৌর মেয়র ও থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিল্টন। তিনি আরও জানান, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার গাবতলীতে এসে হরতালে নিহতদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সমবেদনা  জানানোসহ আর্থিক সহযোগিতা করবেন। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে এর আগে বগুড়ার প্রবেশপথ চান্দাইকোনা থেকে শেষ স্থান গাইবান্ধার রহবল পর্যন্ত শ’ শ’ তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হলেও এবারের চিত্রটা ছিল ভিন্ন ধরনের। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান মারা যাওয়ার পর যেমন তিন দিনের শোকের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার তার বগুড়ার সফরসূচি পরিবর্তন করেছিলেন, তেমনি বগুড়ায় নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বগুড়ায় আসার আগে তিনি সাজ সাজ রব থেকে বিরত থাকার কথাও নেতৃবৃন্দদের জানিয়েছিলেন।

,
Powered by Blogger.