৫ মে রাতে অভিযানে অংশ নেয়া অনেক কর্মকর্তা আতংকে

আতংকে রয়েছেন গত ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশে অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার অনেক কর্মকর্তা।
আল-জাজিরা, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে
উঠেছিল ওই অভিযান। অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়।
সম্প্রতি হেফাজতের সমাবেশকে নিয়ে তথ্য দেয়ায় মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান গ্রেফতার হওয়ায় বিষয়টি আবারো জোরালোভাবে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলও এ বিষয়টি নতুন করে পর্যবেক্ষণ করছে।
নিজেদের রক্ষা করতে এরই মধ্যে হেফাজতের অভিযানে অংশ নেয়া অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন দেশের ভিসা নিয়ে রেখেছেন। তবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, হেফাজতের সমাবেশে অভিযান চালানো কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হয়নি। এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে দেশের জনগণের জানমাল রক্ষা এবং শান্তি বজায় রাখার জন্যই করা হয়েছে।
শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশে অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ-র‌্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযানে অংশ নিয়েছি। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোন সুযোগ ছিল না। তবে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে তদন্ত বা অন্য কোন কারণে বিষয়টি আবার সামনে চলে আসতে পারে। এ জন্য তারা বেশ চিন্তিত বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
ওই কর্মকর্তারা আরো বলেন যে, শুধু পেশাদারিত্ব নয়, এর বাইরে আরো কিছু বিষয় মাথায় রেখেই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছিল।
পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশে অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ-র‌্যাবের কর্মকর্তাদের আতংকিত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর সংবিধান অনুযায়ী যে অর্পিত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওই রাতে তারা ওই অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। এটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। হেফাজতের মহাসমাবেশে অভিযানের সময় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে যে সব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো সত্য নয়।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার আরো বলেন, এ ধরনের বড় অভিযানের আগে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে তা করা হয়েছে। মিডিয়ার অনেক কর্মী অভিযানের সময় পুলিশের সাথে ছিলেন। অভিযানের কোন অংশই গোপন ছিল না। অভিযানের আগে বা পরে যাদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কোন গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয়নি। এটি নিয়ে কোন প্রকার বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। সরকার দেশের সর্বস্তরের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সবসময় আন্তরিক, আগামীতেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে এ ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে মতিঝিল থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের তুলে দিতে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে দাবি করে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করা হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, হেফাজতের সাংবিধানিক অধিকার ৫ মে শাপলা চত্বরে পাইকারি হত্যাকান্ড চালিয়ে বহু মানুষকে আহত করেছে সরকার।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের বিরুদ্ধে নেয়া অভিযান নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ করেন আদিলুর।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই ঘটনার আগে-পরে একজন পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু ‘অধিকার’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে পুলিশ বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে ওই ঘটনায় ৬১ জন নিহতের তালিকা তৈরি করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কাল্পনিক তথ্য প্রকাশ করে। সূত্র: ইনকিলাব।

,
Powered by Blogger.