পাহাড়ি তরুণীদের নগ্ন ফুটেজ ইন্টারনেটে : অভিভাবকরা আতঙ্কে

পাহাড়ের তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর গোপন ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য সম্মতির ভিত্তিতে বা গোপনে ধারণ করে ফুটেজ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মোবাইলে-ইন্টারনেটে। এভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে পার্বত্য রাঙ্গামাটি এলাকার অর্ধশত তরুণী স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। একের পর এক প্রতারণার
ঘটনা ফাঁস হওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়ছে গোটা পার্বত্য এলাকায়। মেয়ের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। অপকর্মের হোতারা ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা নিজেরাই মোবাইলের ব্লুট্রুথের মাধ্যমে সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে সংশ্লিষ্ট তরুণী এবং তাদের পরিবার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক শ্রীলংকান কর্মকর্তা চাকরি শেষে রাঙামাটি ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রীংলকা থেকে রাঙ্গামাটিতে তার পরিচিতদের ইমেইলে একটি ভিডিও ফুটেজ এবং কিছু স্টিল ছবি পাঠায়। সেখানে রাঙ্গামাটি শহরের একজন চাকমা গৃহবধূর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের বেশ খোলামেলা দৃশ্য রয়েছে। এই ছবি এবং ফুটেজ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। বেকায়দায় পড়া গৃহবধূটি আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়।
এরপর শহরের চম্পকনগর এলাকার একটি অভিজাত পরিবারের এক মেয়ের ওয়েব ক্যামেরায় নিজের পরিচিত কারো সামনে নগ্ন হওয়ার দৃশ্য সম্বলিত একটি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলে শহরে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে মেয়েটির পরিবার শিক্ষিত এবং সচেতন হওয়ায় তারা ইউটিউব/ফেসবুকসহ বিভিন্ন সাইটে যোগাযোগ করে ফুটেজটি প্রচার কিছুটা বন্ধ করতে সক্ষম হন। পরে মেয়েটিকে গোপনে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে পর পর রাঙ্গামাটি পার্বত্য এলাকার কয়েকজন পাহাড়ি তরুণীর ভিডিও ফুটেজ বের হয় । এর মধ্যে শহরের তিনটি অভিজাত পরিবারের তিন মেয়ের ফুটেজ নিয়েই আলোচনা ছিলো বেশি। এদের মধ্যে রাজপরিবারের মেয়ে যেমন আছে, তেমনি একজন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মেয়েও আছে। আবার স্কুলপড়ুয়া দুই পাহাড়ি কিশোরীর ছবি এবং ফুটেজও আছে। এইসব ফুটেজের বেশিরভাগই পাহাড়ি তরুণ-তরুণীদের। তবে সম্প্রতি আবার তোলপাড় সৃষ্টি হয় গত সপ্তাহে পর পর পাওয়া দুইটি ফুটেজ নিয়ে। এই দুইটি ফুটেজের তরুণীরা পাহাড়ী হলেও অপরাধীরা বাঙালি। একটি ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণ রাঙ্গামাটি শহরের হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা এবং ফুটেজ প্রকাশের পর ঘটনার শিকার মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করে প্রতারক প্রেমিকের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এই ধরনের ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশী তৎপরতায় প্রতারক প্রেমিক পালিয়ে গেলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রাঙ্গামাটি শহরের রাজবাড়ী এলাকার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটির ঘটনার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তার পুরো পরিবার।পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এই ঘটনাটির পুরো ভিডিওটি ধারণা করা হয় কলেজগেট এলাকার মোটেল জর্জ নামের আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে। এ প্রসঙ্গে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন শরীফ বলেন, আমরা ঘটনার প্রকৃত চিত্র বের করার জন্য তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং একই সাথে অপরাধীকে আটক করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
একই সপ্তাহে রাঙ্গামাটি বনরুপা এলাকার এক মোবাইল বিক্রেতার সাথে শহরের এক সুন্দরী চাকমা তরুণীর কিছু স্থির ছবি প্রকাশ পায়। শিক্ষিতা এই সুন্দরী মেয়েটিকে বখাটে এই তরুণের পটিয়ে ফেলার ঘটনায় বিস্মিত হন সবাই।
ট্রাইবেল আদাম নামক এলাকার এক তরুণ-তরুণীর ‘মোটর সাইকেল সেক্স’ এর ফুটেজটিও সাড়া ফেলে সর্বত্র। এগুলো ছাড়াও জাতিসংঘের একটি সহযোগী সংস্থায় চাকরিরত দুই পাহাড়ি সহকর্মীর ভিডিও ফুটেজ, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ছবি, ঢাকার একটি বাসায় পাঁচজন পাহাড়ি তরুণীর ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্তের ছবি, ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটির এক মারমা তরুণী মডেল -এর ব্যক্তিগত জীবনের ছবি এখন ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল থেকে মোবাইলে।
এই মুহূর্তে অর্ধশত তরুণীর স্থির ছবি বা ফুটেজ শত শত যুবকের হাতে হাতে আছে। এসব ফুটেজ ও ছবির একটি বড় অংশই গোপনে ধারণ করা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সম্মতির ভিত্তিতেই করা।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান বলেন, পাহাড়ি সমাজ শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিজ্ঞানেও সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেয়েরা। তবে কেবল শিক্ষিত হলেই হবে না, সেই সাথে মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তিনি বলেন- মোবাইল ফোন ব্যবহারের একটি নীতিমালা থাকা জরুরী আর এসব সামাজিক অপরাধ নির্মূলে প্রশাসনিক উদ্যোগের অনেক বেশি প্রয়োজন। আর সবচে বেশি প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতনতা।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান বলেন, সারাদেশে মোবাইল এবং ভিডিও ক্যামেরায় যে পর্ণোগ্রাফির গোপন ব্যবসা চলে তার থেকে পার্বত্য এই শহরও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে, আমি রাঙামাটির সকল থানার ওসিকে নিয়ে এই বিষয়ে বৈঠক করেছি। ইতিমধ্যে আমরা ভিডিও ফুটেজ এবং স্থির ছবি দেখে অভিযুক্তদের সনাক্ত করেছি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে এই বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি অনেক বেশি জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন। সুত্র: পার্বত্য নিউজ

,
Powered by Blogger.