৬ রানে ৬ উইকেট সাকিবের

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে সাকিব শো’ চলছেই। বারবাডোস ট্রাইডেন্সের হয়ে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো রেড স্টিলের বিপক্ষে ৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন এই বাংলাদেশী অল রাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা বোলিং পরিসংখ্যানের মালিক এখন সাকিব। মাত্র ১ রান বেশি দেয়ার কারণে সেরা
বোলিং পরিসংখ্যানের মালিক হতে পারেননি তিনি। ওই রেকর্ডের মালিক এভি সুপ্পিয়াহ নামের এক ক্রিকেটার। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ইংলিশ কাউন্টি দল সমারসেটের হয়ে তিনি ৬ উইকেট তুলে নেন ৫ রানের বিনিময়ে।
বারবাডোস ট্রাইডেন্টসের হয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তুলেছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা ওয়ানডে অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। শনিবার টুর্নামেন্টে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠল তার হাতে। সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ে তার দল বারবাডোস ট্রেইডেন্টস ৪ উইকেটে হারিয়েছে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো রেড স্টিলকে। দুর্দান্ত ভয়ঙ্কর বোলিং করে সাকিব ৪ ওভার বল করে এক মেডেন আদায় করে মাত্র ৬ রানের বিনিময়ে দখল করেছেন ৬ উইকেট। পাশাপাশি সাকিব দুর্দান্ত দু’টি ক্যাচ ধরে দিনের সবটুকু আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচেই জয় পেল সাকিবের বারবাডোস। তিন ম্যাচের দু’টিতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে সাকিবের হাতে।
শনিবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দুই দল মিলে খেলে মাত্র ২০.৫ ওভার। দুই দল মিলে রান করে ১০৫। অথচ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে রান উঠেছিল ৩০০ ওপরে। বোলারদের রাজত্বের লো-স্কোরিং ম্যাচে সাকিবের ৬ উইকেটের সঙ্গে প্রতিপক্ষের ফিডেল এডওয়ার্ডসও দখল করেছেন ২২ রানে ৫ উইকেট। ব্যাটসম্যানদের মরণকূপে দুই দলের মাত্র চারজন ব্যাটসম্যানের রান দুই অঙ্কের কোটা পার হয়েছে। বারবাডোজের জোনাথন চার্টারের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ১৪ রান আসে। টি-টোয়েন্টির মারমার কাটকাট খেলা এদিন যেন ভুলে যায় ব্যাটসম্যানেরা। দুই ইনিংসে এদিন এসেছে মাত্র ৫টি চারের মার। শনিবার ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো টসে জিতে ব্যাট করতে নামলে সাকিবের স্পিন বিষে মাত্র ৫২ রানে অল আউট হয়ে যায় তারা। দলীয় ২৫ রানের মধ্যে টোবাগোর তিনটি উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়ে টোবাগোকে চাপে ফেলে দেন জেসন হোল্ডার ও গ্যাব্রিয়েল। কিন্তু সাকিব বলে এসে সেই চাপকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। ৪০ রানে চার উইকেট হারানোর পর সাকিব তাদের স্কোর লাইন ৭ উইকেটে ৪০ রান করে দেন। পরের উইকেটগুলোও সাকিব একাই তুলে নেন একে একে। সর্বোচ্চ ১৩ রান আসে ডেভি জ্যাকবসের ব্যাট থেকে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ রান করেন রস টেইলর। এ ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানরে রান দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছেনি। সাকিব ছাড়া গ্যাব্রিয়েলও হোল্ডার নেন দু’টি করে উইকেট।
রেড স্টিলের বেঁধে দেয়া জয়ের জন্য ৫৩ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে বারবাডোজের শুরুটা ভালই ছিল। দলীয় ২৫ রানের মাথায় কার্টারের প্রথম উইকেটটি পড়ে। কিন্তু মাঝপথে আকস্মিক ধাক্কা খায় বারবাডোজ। ফিডেল এডওয়ার্ডসের গতির ঝড়ে মাত্র ৩৯ রানেই ছয় উইকেট হারিয়ে বসে সাকিবের দল। ২৫-এর পর ১৪ রানের মধ্যেই তারা হারায় ৫ উইকেট। লো-স্কোরিং ম্যাচে উত্তেজনার পারদ তখন ঊর্ধ্বমুখী। চাপে পড়ে যায় সাকিবের দল। পেন্ডুলামের মতো তখন দুলছে ম্যাচের ভাগ্য। ৫৩ রানের মামুলি টার্গেট তখন পাহাড়সম মনে হচ্ছিল বারবাডোসের কাছে। আগের দুই ম্যাচের মতো তৃতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে ব্যর্থ হন সাকিব। বিদায় নেন মাত্র এক রান করে। তবে শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অ্যাশলি নার্স। অষ্টম ওভারের শেষ বলে তার হাঁকানো চারের মারেই শেষ হাসি হাসে বারবাডোজ। নার্স অপরাজিত ছিলেন ১০ রানে। সঙ্গে এক রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। ছয় দলের টুর্নামেন্টে তিন খেলার তিনটিতেই জয় পেয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে বারবাডোজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ত্রিনিদাদ: ৫২ (জ্যাকবস ১৩, টেইলর ১১, কেভিন ৯, বেন ৬, ব্রাভো ৫, সাকিব ৬/৬, হোল্ডার ২/১৯, গ্যাব্রিয়েল ২/১৮)
বারবাডোস: ৫৩/৬ (কার্টার ১৪, নার্স ১০, স্মিথ ৬, মালিক ৫, এডওয়ার্ডস ৫/২২, বেন ১/২৫)
ফল: বারবাডোস ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।

,
Powered by Blogger.