নেশার টাকা জোগার করতে নিজের শিশু সন্তানকে হিজড়ার কাছে বিক্রি

মাদকের নেশার টাকা জোগার করতে না পেরে নিজের শিশু সন্তানকে হিজড়ার কাছে বিক্রি করে দিলেন এক মাদকাসক্ত দম্পতি। মাত্র এক হাজার একশত এক টাকা এবং দু’টি শাড়ীর বিনিময়ে এই শিশুটিকে বিক্রি করা হয়।হাকিমপুর উপজেলার মধ্যবাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি গ্রামে এ
ঘটনাটি ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে।
চুরিপট্টি গ্রামের রেজাউল করিম জানান, দুলালি(কালি)হিজড়া (৪০) দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে আমার বাড়ীতে ভাড়া থাকে। শনিবার বিকেলের দিকে মাদকাসক্ত স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বাড়ীতে ঢুকে তাঁর কোলের শিশুপুত্রকে আমার বাড়ির ভাড়াটিয়া দুলালি হিজড়ার কাছে বিক্রি করে।
দুলালি (কালি)হিজড়া বলেন, বাচ্চার মা ও বাবা দু’জনই হেরোইন খায়। তাঁরা হেরোইন খাওয়ার টাকা না পেয়ে তাদের শিশু সন্তানকে আমার কাছে বিক্রি করে। আমার বড় বোনের কোনো ছেলে মেয়ে না থাকায় আমি বাচ্চাটিকে তাদের জন্য কিনে নেই। এক হাজার একশত এক টাকা এবং দু’টি শাড়ীর বিনিময়ে বাচ্চাটিকে আমি কিনি।
তিনি আরও জানান, বাচ্চাটিকে ঠিকমত দুধসহ অন্যান্য খাবার দিতে না পারায় বাচ্চাটি ওই সময় খুব কান্নাকাটি করছিল। এ কারণে আমার মায়া লাগায় আমি বাচ্চাটিকে লালন-পালনের জন্য কিনে নেই। শনিবার বাচ্চাটিকে কিনে নেওয়ার পর থেকে কৌটার দুধ, গরুর দুধ কিনে খাওয়াচ্ছি।যত্নকরায় বাচ্চাটি ফুটফুটে হয়েছে।
প্রতিবেশি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, নেশার টাকা যোগাড় করতে না পেয়ে মাদকাসক্ত স্বামী-স্ত্রী তাদের ফুটফুটে শিশু সন্তানটিকে বিক্রি করেছে। প্রতিদিন তাঁরা এই চুড়িপট্টিতে এসে হেরোইন খেয়ে আবার চলে যায়। বাচ্চার বাবার নাম শামছুল আর মায়ের নাম নুরজাহান বলে তিনি জানান।
দুলালি(কালি) হিজড়ার ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে দুলালি ফোন করে জানায় তোমাদের জন্য একটা বাচ্চা কিনেছি। তোমরা কাল (রোববার) চলে আসো। তাই নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাটিকামারী থেকে বাচ্চাটিকে নিতে এসেছি।
দুলালি (কালি) হিজরার বোন আলেয়া বেগম (৪৫) আবেগাপ্লাতু হয়ে বলেন, বাচ্চাটিকে পেয়ে আমার উজার কোল আলোকিত হয়েছে। আমার জীবন এখন পূর্ণ হলো। আমরা বাচ্চার নাম রেখেছি শাহা আলম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাদকসেবি বলেন, আমরা জানি বাচ্চার মা ও বাবার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সেখান থেকে তাঁরা প্রতিদিন ট্রেনে করে হিলিতে এসে এপার-ওপারে (ভারত) খালি বোতল, পলিথিনসহ কাগজ কুড়ে বিক্রি করে যা জুটতো তাই দিয়ে দু’জনেই হেরোইন খেতো। কোনোদিন এখানে থাকে, আবার কখনও পার্বতীপুরে চলে যায়।
স্থানিয় এলাকাবাসী রাশেদা বেগম ও মাছুদা বেগম বলেন, গত শীতের সময় হেরোইন খেতে এসে বাচ্চাটি পাশের একটি জায়গায় জন্ম নেয়। ওই সময় থেকে বাচ্চাটিকে দেখে আসছি। তাদের নেশার টাকা ও বাচ্চার খাবারের টাকা যোগাড় করতে না পারায় তারা বাচ্চাটিকে বিক্রি করেছে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আহসান হাবীব বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

,
Powered by Blogger.