জিয়া খানের ছয়পৃষ্ঠার নোট উদ্ধার

‘এ চিঠি যখন সবাই পড়বে, তখন হয়তো আমি আর এ পৃথিবীতে থাকব না’-সদ্য প্রয়াত বলিউডের অভিনেত্রী জিয়া খানের সুইসাইড নোটের একটি লাইন এটি। উঠতি এই
তারকার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ছয় দিন পর পুলিশের কাছে এটি হস্তান্তর করেছেন জিয়া খানের পরিবারের সদস্যরা।এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মুম্বাইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিশ্বাস নাগরে পাতিলের উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্দো-এশিয়ান নিউজ জানিয়েছে, ‘আমাদের কাছে নোটটি হস্তান্তর করেছেন জিয়া খানের মা। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জিয়ার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, গত শুক্রবার তাঁরা জিয়ার হাতের লেখা সুইসাইড নোটটি খুঁজে পান। ছয় পৃষ্ঠার নোটটিতে প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বিশদভাবে অনেক কিছুই লিখেছেন জিয়া। সুরজকে অনেক বিশ্বাস করলেও তাঁর কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার কথাও লিখেছেন তিনি।
অবশ্য নোটটি জিয়া কখন লিখেছিলেন কিংবা পরিবারের সদস্যরা সেটা কোথায় এবং কীভাবে খুঁজে পেয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এ নোটের সঙ্গে জিয়া খানের হাতের লেখা মিলিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যেই জিয়ার সুইসাইড নোটের কয়েকটি কপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে।
বলিউডের উঠতি অভিনেত্রী জিয়া খান পশ্চিম মুম্বাইয়ের জুহু বিচসংলগ্ন নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন ৩ জুন, সোমবার রাতে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গলায় ফাঁস লাগানোর কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওড়না গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জিয়া।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে জিয়ার প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলিকে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে জিয়া সর্বশেষ ফোনে কথা বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে। এ জন্য পুলিশি জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে সুরজকে। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে মুম্বাই পুলিশ।
এদিকে, জিয়া আত্মহত্যা করার পর থেকেই তাঁর মৃত্যুর জন্য সুরজকে দায়ী করার বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি সুরজের বাবা ও বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলি। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘সুরজ কী দোষ করেছে? অহেতুক কেন তাকে এ ধরনের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে? নানা কারণে ভালোবাসার মতো সুন্দর একটি সম্পর্কে দুর্যোগের ঘনঘটা আসতেই পারে। হিন্দি চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের জীবনেই এমনটা ঘটেছে।’
আদিত্য আরও বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েনের জন্য কখনোই একপক্ষকে দায়ী করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে একপেশে রায় দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। জিয়ার মৃত্যুতে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে সুরজ। সে গভীরভাবে মর্মাহত। শুধু সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণেই জিয়া আত্মহত্যা করেছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তার এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে।’
বলিউডে ডুবন্ত ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক দিন থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন জিয়া খান। আট মাস আগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কবজির রগ কেটে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করলেও, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন এই তারকা অভিনেত্রী। তাঁর ঘরে ভেষজ ঘুমের বড়িও খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ।
জিয়া খান শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিল সে’ ছবিতে। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৭ সালে অভিনয় করেন রাম গোপাল ভার্মার ‘নিঃশব্দ’ ছবিতে। ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন জিয়া। পরে অভিনয় করেন ‘গজনি’ (২০০৮) ও ‘হাউসফুল’ (২০১০) ছবিতে। ২৫ বছর বয়সী জিয়া খানের বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। কিছুদিন আগে মা রাবেয়া আমিনের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে মুম্বাইয়ে চলে আসেন তিনি। থাকতেন জুহু বিচসংলগ্ন সাগর সংগীত নামের একটি ফ্ল্যাটে।
সম্প্রতি জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর ‘নিঃশব্দ’ ছবির পরিচালক রাম গোপাল ভার্মা এক টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘জিয়া অভিনীত ছবিগুলো সাফল্যের মুখ দেখলেও তিন বছর ধরে তাঁর হাতে কোনো কাজ ছিল না। আমি ঠিক জানি না, জিয়ার ক্ষেত্রে কেন এমনটা ঘটেছিল। বিষয়টি নিয়ে তিনি দারুণ হতাশায় ভুগছিলেন। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচণ্ড শঙ্কিত ছিলেন জিয়া। তাঁর সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাতের সময় তিনি বলেছিলেন, আশপাশের সবার সাফল্য দেখে নিজেকে চরম ব্যর্থ মনে করছেন তিনি।’

, ,
Powered by Blogger.