অনন্ত-বর্ষার কারণে রাহার আত্মহত্যা!

শুক্রবার রাতেই নিজ বাসায় রহস্যজনকভাবে নিহত হয়েছে লাক্সতারকা সুমাইয়া আজগর রাহা। তার এ আত্মহত্যার কারণ ত্রিভুজ প্রেম। অনন্ত-বর্ষার তোপের মুখে পড়ে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন লাক্সতারকা খ্যাত এই তরুনী।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছেন, অনন্তর প্রথম চলচ্চিত্র  ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ এ অভিনয়ের সূত্রধরে রাহা-অনন্তর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

 পরে অনেকটা গোপনে সেটি প্রেমের সম্পর্কে রূপ ধারণ করে। এরই মধ্যে ২০১১ সালে অনন্ত-বর্ষার বিয়ে হয়।
দিনদিন নারী সঙ্গতে অভ্যস্ত অনন্ত স্ত্রী বর্ষার প্রতি মোহ কাটতে থাকে। একাধিক নারী সঙ্গের পাশাপাশি রাহার সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক গোপনে গোপনে চলতে থাকে। এ নিয়ে বর্ষার মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এক পর্যায়ে অনন্ত-বর্ষা-রাহার ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্কে তৈরি হয় ভয়াবহ জটিলতা।
অল্পবয়সী তরুনী রাহা, অনন্ত-বর্ষার তোপের মুখে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক চাপে পড়ে তার এ আত্মহত্যা। শনিবার রাতে পুলিশ রাহার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পেরে তদন্ত শুরু করে। প্রথমে তারা এর সত্যতা খুঁজে না পেলেও গভীর রাতে পরিবার ও সহকর্মীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হন।
এর আগে শনিবার স্বামী অনন্ত তার সামনেই অন্য নারী নিয়ে আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠেন। স্ত্রী বর্ষা তার অগোচরে বয়ফেন্ড নিয়ে অভিসার করে চারিত্রিক সমস্যা ঘটিয়ে এক সাথে সংসার করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এধরণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে।
বর্তমান সময়ের দেশের সিনেমা জগতের আলোচিত-সমালোচিত দম্পতি জুটি অনন্ত-বর্ষা শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পাল্টাপাল্টি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন।
বিকালে করা জিডিতে অনন্ত অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী বর্ষার চারিত্রিক সমস্যা আছে। তাই তিনি বাড়ি থেকে চলে গেছেন। বর্ষা তাঁর ক্ষতি করতে পারেন, এ আশঙ্কা থেকেই থানায় অভিযোগ করে।
একইদিন রাতে করা জিডিতে বর্ষা অভিযোগ করেন, অনন্ত তাঁকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার রাতে নিজ বাসাতেই অনেকটা রহস্যজনকভাবে মারা যান রাহা। রাহার এই হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনা মিডিয়ার কেউ না জানার আগেই শনিবার দুপুরে অনেকটা চুপিসারে রাহাকে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়।
তার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবার ও কাছের কয়েকজন সহকর্মীরা জানলেও মিডিয়ার কাছে গোপন রাখেন।
রাহার মৃত্যুর খবর জানতে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিম অর রশিদ তালুকদার জানান, ফোন দেওয়ার পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জাপান গার্ডেন সিটিতে সকাল থেকে কোন লাশ দাফন করার জন্য আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেখান কোনো নিরাপত্তা প্রহরী বলতে পারেনি এধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা। আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আদাবর থানাধীন এলাকায় এধরণের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা।
একই তথ্য জানতে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছিলেন। তবে মধ্যরাতে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে রাহার মৃত্যুর খবরটি।
তবে পুলিশের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, অনন্ত-বর্ষার বিবাদ ও রাহার মৃত্যুর যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা প্রকট, তদন্ত করে দেখা হবে রাহার মৃতুর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে কিনা।
প্রয়োজনে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বাবা-মার বড় সন্তান রাহা লালমাটিয়া কলেজের ছাত্রী। সে রাজধানীর আদাবর থানাধীন জাপান গার্ডেন সিটিতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে বাবা-মার বাসায় যায় না। অন্য এক কোনো এক বন্ধুর বাসায় থাকতেন।
সবার ধারণা অনন্ত’র দেয়া কোনো একটি ফ্ল্যাট সে বসবাস করতো।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, তদন্ত করতে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এক কথায় বলতে পারি দুজনই একে অপরের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করছেন।
ওসি আজিজুল হক জানান, দুজনই সিনেমার তারকা হওয়ায় পাল্টাপাল্টি এই অভিযোগ নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। কোনো পক্ষ হার মানতে রাজি নন। যার যার অভিযোগে অনড় তারা। তারপরও চেষ্টা করছি বিষয়টির সুষ্ট সমাধান করতে।
একে অপরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ গণমাধ্যমে চলে আসায় জনপ্রিয়তা নিয়ে তারা কিছুটা শান্ত হয়েছেন। মনে হচ্ছে বিষয়টি মিটমাট করা যাবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভাল সম্পর্ক যাচ্ছে না এই দম্পত্তির। ভালবেসে দুজন দুজনকে বিয়ে করলেও নানা কারণেই মনমালিন্য চলে আসছিলো দীর্ঘদিন।
ব্যবসায়ী স্বামী হিসেবে অনন্ত নাম্বার ওয়ান হলেও তার অন্যান্য যোগ্যতা মানুষের কাছে হাস্যরসের খোরাক। এসব নিয়েই মন কষ্টে ভুগতেন বর্ষা। তারপরও সব মেনে নিয়েছিলেন স্বামী হিসেবে।
কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই অন্য নারীদের সাথে অনন্ত’র খোলামেলা সর্ম্পক আহত করে বর্ষাকে। এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু হয়।
সূত্র মতে একাধিকবার অন্য নারীসহ বর্ষার হাতে ধরাও পড়ে অনন্ত। এর প্রতিবাদ করলেই করা হয় মারধর।
কর্মকর্তারা বলছেন, সমসাময়িক সময়ে বর্ষার বিরুদ্ধেও পরপুরুষের সাথে সর্ম্পকের অভিযোগ তোলেন অনন্ত। অনন্তের সিনেমা দিয়ে অভিষেক হওয়া এক চিত্র পরিচালকের সাথে সর্ম্পকের কারেন শুরু করেন বর্ষার উপর নির্যাতন। অনন্তর অনুস্থিতিতে বর্ষা ঐ চিত্র পরিচালকের সাথে মধু চন্দ্রিমায় গেলে আকস্মিকভাবে তা হাতে নাতে ধরেও ফেলেন অনন্ত। এনিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতনও করা হয় বর্ষাকে।
কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি মিটমাট করার অনুরোধ করা হলে তারা দুজনই নমনীয়তা দেখান। তবে তাদের দাবী পিছনের সব ঘটনা ভুলে পূরনায় ঠিকঠাক মতো করতে হবে এমন লিখিত দিতে হবে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্ষা গ্রামীনফোনের মডেল হওয়ার পর থেকে নিজেকে অনেক বড় তারকা বলে জাহির করায় অনন্ত’র আতে ঘা লাগে। অনন্ত’র দাবি বর্ষা তাকে অচল। এ নিয়ে তাদের মাঝে মনোমালিণ্য শুরু। পরবর্তীতে দুজন আলাদা থাকতে শুরু করেন। তবে মাঝে মাঝে দুজন একই ফ্যাটে সময় কাটান। দুজনের দূরত্বের মাঝে অন্যরা ঢুকে যায়। বর্ষাকে জড়িয়ে পড়েন এক তরুন চিত্রপরিচালকের প্রেমে এবং অনন্ত একাধিক নারীর সঙ্গে।
এসব ঘটনা বেশ কয়েকবার একে অপরের কাছে হাতেনাতে ধরাও পড়েন। বর্ষাকে নির্যাতন করার প্রতিবাদে সে বলতো তুমি অন্য নারীদের সঙ্গে মিশতে পারো তবে আমি কেনো অন্য পুরুষের সঙ্গে মিশতে পারবোনা। অনন্ত’র দাবি সে যা ইচ্ছা করবে কিন্তু সে ঘরের বাইরে যেতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের মুক্তি পাওয়া ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ ছবিটির মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় নায়ক ও প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অনন্ত। একই ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিষেক বর্ষার। এরপর তারা ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া সুপারহিট ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিতেও অভিনয় করেন। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর এই জুটি ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ-২’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২’ ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’, ‘স্পিড’ ও ‘নিস্বার্থ ভালোবাস’ সিনেমায় কাজ করজেন। এরমধ্যে কয়েকটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাহার উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক গুলো হলো- জল তরঙ্গ, স্বপ্নবাজার, পুতুলম খেলা, পাটিগণিত, উচ্চতর শারীরিক বিজ্ঞান, লাকি থারটিন, দিন বদলের পালা, কামিং সুন এবং এক খণ্ডের নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, জিম্মি, যত চিনি তত মিষ্টি, কাজী অফিস, ফোরটি টু মিনিটস, মেঘ ডেকেছে বেলায় বেলায়দ, টাইম বোম, মাকড়সা ও ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।

Powered by Blogger.