অবশেষে অনন্ত-বর্ষার ডিভোর্স, বর্ষা বললেন অজানা কথা

স্ত্রী আফিয়া নুসরাত বর্ষার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চলচ্চিত্র নায়ক এম এ জলিল অনন্ত। মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইলের মনসুন রেইন ফিল্ম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অনন্ত সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে জানান।
কিন্তু তার সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ করেই ভারত থেকে বর্ষা ফোনে যোগাযোগ করেন একটি পত্রিকার সঙ্গে।

 তিনি জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বিচ্ছেদ স্বাভাবিক নিয়মে বা সমঝোতার মাধ্যমে হয়নি। অনেকটা জোর করেই তার কাছ থেকে সাইন করে নেওয়া হয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদনামায়।
বর্ষা ফোনে বলেন, “শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পর গত ২২ মার্চ আমি মোহাম্মদপুর থানায় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি অনন্তর বিরুদ্ধে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করি। এরপর আমাকে একটি আপসনামায় পারিবারিকভাবে সই করানো হয়। আমি সই না করতে চাইলে জোর করে আমাকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এরপর আমি কলকাতার একটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য গত ২৫ মার্চ বিকেলে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কলকাতা আসি। আর আসার আগে আমাকে অনেকটা জোরাজুরি করে বিচ্ছেদের জন্য সই করানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙে যাক। আর কলকাতায় আসার পর অনন্ত আমাকে অন্য কোনো চলচ্চিত্রে শুটিং না করার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমার কথা হলো, সে তো বিচ্ছেদের পর আর আমাকে এসব বলার অধিকার রাখে না। আমি দেশে ফিরে আমার শরীরে অনন্তের করা জখমের আঘাত দেখাতে চাই। এবং সেই সঙ্গে সে যেন আমাকে আর কোনো কাজে বাধা না দেয়, তার অনুরোধ করছি।”
এদিকে চিত্রনায়ক অনন্ত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমি সাংবাদিক ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি, এজন্য দুঃখিত।”
তিনি বলেন, “বর্ষা একা এই পরিস্থিতিতে গতকাল (সোমবার) কলকাতা গিয়েছে। একটা মেয়ের স্বামী ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া কতখানি স্বাভাবিক? আমার কথা ছিল সবকিছু সমঝোতার মাধ্যমে হোক।”
কেন এমন হল- এ প্রশ্নের জবাবে অনন্ত বলেন, “বর্ষা ফ্রিডম লাইফ লিড করতে চায়। সে যে কোনো সময় বাসা থেকে বের হয়ে যেতো। আমি বলতাম, তুমি এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যাও, এটা ঠিক না। উত্তরে সে বলতো, কাজ থাকলে বাইরে যাবোই। এভাবে এক কথা-দু’কথায় দুজনেই উত্তেজিত হই। বাসায় ওর মা, বাবা, ভাই, বোন, সবাই আসে। তারা আমাকে বোঝাতে থাকেন এবং এর মধ্যে বর্ষা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন আমি নিচে দারোয়ানকে বলি বর্ষা যেন বের না হয়ে যায়। কারণ এটা একটা মান-সম্মানের ব্যাপার। তারপরেও সে সকল বাধা উপেক্ষা করে বের হয়ে যায়।”

অনন্ত আরো বলেন, “বের হয়ে যাওয়ার পর আমি তার রুমের ড্রয়ার চেক করি এবং সেখানে একটি ফোন পাই, যেটির ব্যাপারে এর আগে আমার জানা ছিল না। ফোন খুঁজে দেখতে পাই ভারত, শ্রীলংকা ও আমাদের বাংলাদেশে মোট চার জনের সঙ্গে তার যোগাযোগ। পরে তার ল্যাপটপ সার্চ করে দেখি অনলাইনে সে বিভিন্ন নামে তাদের সঙ্গে সারারাত চ্যাট, ভয়েজ চ্যাট, ভিডিও চ্যাট করতো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি অনুভব করি, তার বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রায়ই বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা প্রয়োজন। এবং তখনই জিডি করি। এরপর রাতে থানা থেকে ফোন আসে যে বর্ষা থানায় গিয়ে জিডি করেছে। আমি তখন মীমাংসার জন্য বর্ষার মা, বাবা সবাইকে নিয়ে থানায় যাই। থানায় তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও সবাই ব্যর্থ হয়। পরে একসঙ্গে আমরা থানা থেকে বের হতে আসি। সে তার বাসায় যায় এবং আমি আমার বাসায়। পরবর্তীতে আমরা দু’জন একসঙ্গে থানায় গিয়ে আমাদের করা জিডি দুটি প্রত্যাহার করি।”
তিনি বলেন, “হঠাৎ জানতে পারলাম, বর্ষা সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কলকাতা গেছে। এয়ারপোর্টে কোনো এক ভক্ত তাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একটু আগে চিত্রনায়িকা বর্ষা জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে কলকাতা গেলেন, কিন্তু সঙ্গে অনন্ত নেই। বর্ষা একা। ব্যাপারটা কেমন হলো?’”
রাহার সাথে জড়িয়ে অনন্তকে জড়িয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম যে সংবাদ প্রচার করছে, তার সত্যতা নিয়ে জানতে চাইলে অনন্ত বলেন, “আমি রাহার ব্যাপারে বলি, আমার ঘৃণা ও লজ্জা লাগছে একজন মৃতের সঙ্গে আমাকে এভাবে জড়ানোর জন্য। বর্ষাও আমাদের মধ্যে এতো ঝামেলা সত্ত্বেও একটি জাতীয় দৈনিকে বলেছে যে রাহার সঙ্গে আমার কোনো রকম যোগাযোগ ছিল না বা নেই। রাহার পরিবার থেকেও একই স্বীকারোক্তি একটি দৈনিকে প্রচার হয়।”
রাহার সঙ্গে তাকে জড়ানোর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অপপ্রচার জানিয়ে তিনি বলেন, “রাহা আমার প্রথম ছবিতে, শুধু একটি গ্রুপ অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেছিল। তার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় বা যোগাযোগ ছিল না।”
সবশেষে অনন্ত বলেন, “বর্ষা ও আমার মধ্যে কয়েকদিন যাবৎ বোঝাপড়া ভালো না হওয়ায় আমাদের মাঝে এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আরও খোলামেলাভাবে বলতে চাই, আমাদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনন্ত ও বর্ষার বিয়ে হয়। অনন্ত-বর্ষার প্রথম ছবি ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ ব্যাপক আলোচিত হয়। এরপর তারা ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ও ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিতে জুটি হয়ে অভিনয় করেন।
অনন্ত জলিল ও বর্ষা নানা সময়ে তাদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নানা কথা বলেছেন। ডিভোর্সের পর আর কি ঘটে, এখন তা-ই দেখার পালা।

Powered by Blogger.