আসাদকে ২শ’ টন সিরিয়ান নোট দিয়েছে রাশিয়া

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থের জোগান দিতে বাশার আল আসাদের অর্থসঙ্কট অনেকটাই আপাতত কেটে যাবে। তার কারণ, রাশিয়া ২শ’ টন নগদ সিরিয়ান ব্যাংক নোট পাঠিয়েছে দামেস্কে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি ভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা প্রোপাবলিকার এক অনুসন্ধানী
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে চ্যানেল এনবিসি নিউজ। প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কো থেকে আসা সিরিয়ার একটি সরকারি বিমান এই ২শ’ টন নগদ টাকা বহন করে আসছিল। বিমানটির ফ্লাইট ও অন্যান্য রেকর্ড থেকে এই তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। দুই বছরের চলমান সহিংসতায় সিরিয়ার অর্থনীতি প্রায় ভঙ্গুর হতে চলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্রতর করতে অর্থের জোগান আরও ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবরোধে আসাদের অর্থনীতিতে ধস নামে। এ অবরোধ সিরিয়ান মুদ্রার ওপর থাকায় দেশটি টাকা ছাপানোর অধিকারী অস্ট্রিয়ান ব্যাংকেও প্রবেশাধিকার হারিয়ে ফেলে। ট্রেজারি ফর টেররিস্ট ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমসের অ্যাসিসটেম্লট সেক্রেটারি দানিয়েল গ্লাসের জানান, ‘এটা নিশ্চিত যে, সিরিয়ার সরকার কিছু করতে চায়, সিরিয়ার সরকার চায় সৈনিকদের কিংবা অন্য যে কাউকে কিছু দিতে।’ ফ্লাইটের রেকর্ড অনুযায়ী, ওই বিমানটির আটবার যাতায়াত হয় দামেস্কের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মস্কোর নুকোভো বিমানবন্দরের মধ্যে। এতে প্রতিটি ফ্লাইটে ৩০ টন করে সিরিয়ান ব্যাংক নোট সিরিয়ায় পাঠানো হয়। রেকর্ডগুলো আরবি ও ইংরেজিতে। এমনকি ফার্সিতে অনুবাদ করে ইরানেও পাঠানো হয়। তবে সিরিয়া এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা এসব রেকর্ডকৃত তথ্যের সত্যতার ব্যাপারে প্রোপাবলিকার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে কোনো জবাব দেয়নি। এদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়ায় ফ্রান্স সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ। প্যারিস সফরের শুরুতেই তিনি বলেছেন, যখন একটি দেশের স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো শক্তি সংঘাতে নামে তখন সে শক্তিকে সরাসরি সমর্থন দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্স হচ্ছে সিরিয়ার বিরোধী জোটকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশ। গত ১৪ নভেম্বর দেশটি এ স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপর ফরাসি সরকার বলেছে, তারা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এখন থেকে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দেয়ার চেষ্টা করবে। ফ্রান্স সরকারের এ অবস্থানের বিরোধিতা করে রুশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অন্য রাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক শক্তিকে মদত দিয়ে সে দেশের সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা আমার কাছে সম্পূর্ণ অসভ্য চিন্তা বলে মনে হয়।’
সিরিয়া সরকারকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মেদভেদেভ বলেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য মস্কো বাশার আল-আসাদ সরকারকে অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটা বাস্তব যে সিরিয়ার জনগণই দেশের ভাগ্য ঠিক করবে। অপরদিকে তুরস্ক সীমান্তের কাছে দুটি বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করেছে সিরীয় যুদ্ধবিমানগুলো। হামলার পর ঘাঁটি দুটির কয়েকশ’ বাসিন্দা প্রতিবেশী রাষ্ট্র তুরস্কে পালিয়ে গেছে। সোমবার বাব আল হাওয়া সীমান্ত পারাপারের কাছে আতিমা এলাকায় ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) একটি ঘাঁটিতে ছয়টি বোমা নিক্ষেপ করা হয় বলে জানিয়েছে এক সরকারবিরোধী আন্দোলনকারী। এফএসএ সদস্য মাহমুদ আহমদ বলেন, ‘অনেক মানুষ আহত হয়েছে। সীমান্তে আমি অনেক আহত মানুষকে দেখেছি।’ বোমা হামলায় সিরীয় শরণার্থীদের জন্য স্থাপন করা অনেক তাঁবুও বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে হামলার সময় সেগুলোর ভেতর কেউ ছিল না। ঘাঁটিটির কাছে কয়েকটি ভবনেও হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান আহমদ। বিমানগুলোকে লক্ষ্য করে বিদ্রোহীরা বিমান বিধ্বংসী কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করলেও সেগুলো কামানের গোলার আওতার বাইরে দিয়ে উড়ছিল বলে জানান আহমদ।

Powered by Blogger.