গৌরনদীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ১, অবরোধ, ভাঙচুর

বরিশালের গৌরনদীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক রুমান ফকির (২২) মারা যান। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত
ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও ১৫ নেতা-কর্মী। সংঘর্ষে উভয় পক্ষ একাধিক গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় ৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গতকাল রুমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশ বহনকারী একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে। স্থানীয় প্রশাসন হত্যাকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে এক ঘণ্টা পর সাড়ে ১১টায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া (২৮)-কে গ্রেপ্তার করেছে। নিহত ছাত্রলীগ নেতা রুমানের বাড়ি পৌর এলাকার বড় কসবা মহল্লায়।
গৌরনদী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল সরদার ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া, সহসভাপতি লুৎফর রহমান দ্বীপ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আতিকুর রহমান শামীমসহ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা দীর্ঘ দিন ধরে বালুর ব্যবসা করে আসছে। এ নিয়ে সান্টু ও লুৎফরের গ্রুপের বিরোধ চলে আসছিল। লুৎফরের সমর্থক তছলিম কবিরাজ জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় দিকে ৫টি মোটরসাইকেল যোগে ১০ থেকে ১২ জন উপজেলা ছাত্রলীগের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড কার্যালয়ে আসে। এসময় জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ও তার সমর্থকেরা রামদা, চাপাতিসহ ধারালো দেশী অস্ত্র দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক রুমান ফকির (২২), ছাত্রলীগ নেতা ফেরদাউস তালুকদার (২৫) ও  হিরা বেপারীকে (২৩) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে লুৎফরের সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। হামলা ও সংঘর্ষে তছলিম কবিরাজ গুলিবিদ্ধ, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাসেল হাওলাদার, রাসেল বেপারী, আসাদুজ্জামান বাবু, সুমন মোল্লা, বেল্লাল মিয়া, রবিউল খান, ইমরান হোসেন, মতলেব কাজীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় একাধিক গুলিবর্ষণ ও ১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়। গুলি ও বোমার বিকট শব্দে গোটা বাসস্ট্যান্ড এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। গভীর রাতে বরিশাল পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গুরুতর আহত রুমান ফকিরের বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার রাত তিনটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রুমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে গৌরনদীতে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে টরকী বাসস্ট্যান্ড ও নিহত রুমানের বাড়ি সম্মুখে কসবা এলাকায় গাছের টুকরো ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় অবরোধ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী পুলিশ বহনকারী ঈশা পরিবহনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ  হত্যাকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা শামীমা বেগম বাদী হয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া, পৌর ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মামুন মিয়া, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাহাবুল খানসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টাা চলছে।
অপর দিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ ছাত্রলীগ নেতা রুমান ফকিরের হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।

 source:mzamin

Powered by Blogger.