অলৌকিক অসংগতির দাবি সাঈদীর আইনজীবীর

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেশ কিছু অসংগতি তুলে ধরেছেন তার আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। গতকাল যুক্তি-তর্ক উত্থাপনকালে তিনি বলেছেন, এ মামলার একটি প্রধান  অভিযোগ
শেফালী গোরামীকে ধর্ষণ। ওই ধর্ষণের ফলে তিনি সন্তানের জন্ম দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেরার জবাবে জানিয়েছিলেন, শেফালী গোস্বামীকে কবে ধর্ষণ করা হয়েছে তার দিন-তারিখ তিনি বলতে পারবেন না। তবে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ধর্ষণ করা হয়। অন্যদিকে, শেফালী গোস্বামীর স্বামী মধুসূদন গোস্বামী এ ট্রাইব্যুনালে এসে বলে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বছর অগ্রহায়ণ মাসে শেফালী গোস্বামী সন্তানের জন্ম দেন। অর্থাৎ নভেম্বর মাসে তিনি সন্তানের জন্ম দেন। এ নিয়ে নানা বঞ্চনার প্রেক্ষিতে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ধর্ষণের কারণে কারও দ্বারাই নভেম্বর মাসে সন্তান জন্মদান সম্ভব নয়। এটা একটা অলৌকিক অসংগতি। বিচারপতি মো. নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ মিজানুল ইসলাম গতকাল এ যুক্তি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মধুসূদন গোস্বামী অসুস্থই ছিলেন। তাকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করাই প্রসিকিউশনের উচিত হয়নি। প্রসিকিউশন মধুসূদন গোস্বামীকে নিয়ে লকোচুরি খেলা খেলেছে। আজও যুক্তি-তর্ক উত্থাপন হবে।
ইয়ে মুক্তি হ্যায়, ইসকো হঠাও ইহাসে: মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন প্রসিকিউশনের ৭ নম্বর সাক্ষী রঞ্জিত কুমার নাথ ওরফে বাবুনাথ। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ গতকাল তিনি জবানবন্দি দেন। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউশনের কৌঁসুলি মোখলেছুর রহমান বাদল। সাক্ষী বাবুনাথ ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট (রথখোলা) গ্রামের বাসিন্দা। জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল ফরিদপুর শহরে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা এলে সবার সঙ্গে তিনিও শহরতলিতে গিয়ে আশ্রয় নেন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় রাজাকার হবি মাতব্বর, আবুল কালাম আযাদ, আবুল মিয়া, কালু বিহারী- এদের হাতে ধরা পড়েন। সাক্ষী বলেন, ধরা পরার পর আমাকে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাকিস্তানি মেজর কোরাইশির সঙ্গে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে আমি দেখতে পাই। মুজাহিদ আমাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় সে বলছিল ‘ইয়ে মালাউন মুক্তি হ্যায়, ইসকো হঠাও ইহাসে’। পরে আমাকে জবাই করার জন্য চোখ বেঁধে মোল্লা বাড়ি রোডে বছির মিয়ার দোকানের পিছনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে উল্টো করে পা দু’টো গাছে ঝুলিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তাতে আমার একটি দাঁত ভেঙে যায়। নাক ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর পাশেই রশীদ মিয়া নামের একজনের ঘর থেকে জানালার শিক ভেঙে কুমার নদী সাঁতরিয়ে পালিয়ে আমার গ্রামে চলে যাই। পরে আমার বন্ধুরা খবর পেয়ে নগরকান্দা চাঁদের হাটের একটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নিয়ে আমার চিকিৎসা করায়। জবানবন্দি শেষে অভিযুক্ত মুজাহিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ২৯শে নভেম্বর সাক্ষীকে জেরার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২। একই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও পলাতক জামায়াতের সাবেক রুকন মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের তিন জন সাক্ষী।
 source:mzamin

Powered by Blogger.