আমার দেশ-এর সব সাংবাদিকের জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নিতে পুলিশের আবেদন

amar-desh.jpgপুলিশি কর্তব্য কাজে বাধার অভিযোগে সোয়া দুই বছর আগে দায়েরকৃত এক মামলায় আমার দেশ-এর সাংবাদিকদের জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। ২০১০ সালের ২ জুন দায়েরকৃত মামলায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, প্রধান
সহকারি সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আলাউদ্দিন আরিফ ও অফিস সহকারি সাইফুল ইসলামের নাম এজাহারভুক্ত করে আরও ৪০০ সাংবাদিক কর্মচারিকে আসামি করা হয়। এই মামলায় আসামিরা প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে সিএমএম কোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। কিন্তু হঠাত্ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক অপূর্ব হাসান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন বাতিল করে রিমান্ড চেয়ে ওই আবেদন জানান। তবে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ড আবেদনের বাইরে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার ২২ অক্টোবর মামলাটির হাজিরার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ। আমার দেশ-এর সাংবাদিকদের জামিন বাতিল ও রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমার দেশের সব সাংবাদিক কর্মচারি হাজির হবেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল আমার দেশ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, মামলাটি আড়াই বছরের পুরনো। ওই মামলায় এজহার নামীয় প্রত্যেক আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। সিএমএম আদালত থেকেও জামিন নিয়েছেন। প্রতিমাসে নির্ধারিত হাজিরার তারিখে সিএমএম কোর্টে স্বশরীরে হাজির হয়ে প্রত্যেক সাংবাদিক হাজিরা দিয়েছেন। এরকম একটি মামলায় শুধু স্থায়ী ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। মামলায় প্রত্যেকের অফিসের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। তারা সবাই প্রথিতযশা সাংবাদিক। এদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদও রয়েছেন। তারা নিয়মিত অফিস করছেন। নাম জানার জন্য এভাবে রিমান্ডের আবেদন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। রিমান্ড যেন এখন ডালভাতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি একটি জিডির ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদনের ঘটনার পর এখন নাম জানার জন্য একটি পত্রিকার এতো সাংবাদিকের নামে রিমান্ড আবেদন জাননো হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসেও এর নজির পাওয়া যাবে না। বর্তমান মহাজোট সরকার মিডিয়া দলনের যে পথ বেছে নিয়েছে, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি বড় প্রমাণ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি মনে করি সরকারের সংবাদপত্র দলন নীতি ও আমার দেশ পত্রিকা পুণরায় বন্ধের চক্রান্ত হিসেবে এই রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। এর আগে আমাকে গ্রেফতার করে ১৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এবার সব সাংবাদিককে ভীত সন্ত্রস্ত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে সাংবাদিকরা সরকারের অপকর্মের সংবাদ তুলে ধরে ভয় পান। তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে টকশো নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও হয়নি। এক জজ মিয়ার জায়গায় ৭ জজ মিয়া নাটক সাজানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আমার দেশকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বহু আগে থেকেই ডাকা হয় না। সর্বশেষ আমার দেশ সাংবাদিকেদের রিমান্ডের আবেদন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য আরেকটি অশনি সংকেত হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ২০১০ সালের ১ জুন আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকাশ করে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলাম। ওইদিন রাতেই শত শত পুলিশ সাদা পোশাকে ও রণসাজে সজ্জিত হয়ে আমার দেশ কার্যালয় থেকে আমাকে গ্রেফতার করে। আমাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের কতর্ব্যকাজে বাধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ এনে পরদিন ২ জুন তেজগাঁও থানায় আমার দেশ এর সিনিয়র সাংবাদিকদের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলায় এখন জামিন বাতিল করে রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য ওই মামলার নম্বর ২ তারিখ ২/৬/২০১০ ইং। মামলার ধারা দণ্ডবিধির ১৪৩/ ১৪২/ ৩৩২/ ৩৫৩/ ১৮৬/ ৫০৬/ ১১৪।
তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অপূর্ব হাসানের করা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সুপারিশকৃত রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, ‘এজহার নামীয় আসামি (১) সহকারি সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী (৬০), পিতা- সুশীল দাস চৌধুরী, সাং- বিএসইসি ভবন (১১তলা) ১০২, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, থানা- তেজগাঁও, ঢাকা, (২) ক্রামই রিপোর্টার আলাউদ্দিন আরিফ (৩৮), পিতা- মৌলভী আরিফুর রহমান, (৩) চীফ এডিটর সৈয়দ আবদাল আহমদ (৪৮), পিতা- মৃত সৈয়দ শায়েস্তা মিয়া, (৪) সিটি এডিটর জাহিদ চৌধুরী, পিতা- মৃত আব্দুর নূর চৌধুরী (৫) অফিস পিয়ন সাইফুল (৩০), পিতা- মৃত আব্দুল খায়ের সরকার গং বিজ্ঞ আদালতে উল্লেখিত কর্মস্থলের ঠিকানা উল্লেখ করে আত্মসমর্পণ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তন্তের স্বার্থে আসামিদের স্থায়ী ঠিকানা আবশ্যক। এমতাবস্থায় আসামিদের তাদের সঠিক ও পূর্ণ নাম ঠিকানার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামিন বাতিলপূর্বক এক দিনের পুলিশ রিমান্ড আবশ্যক।’
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদেরকে তাদের সঠিক ও পূর্ণ নাম ঠিকানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের জামিন বাতিলপূর্বক একদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করিতে মর্জি হয়।’
জামিনে থাকা প্রায় আড়াই বছর পুরনো মামলায় জামিন বাতিল করে রিমান্ড চাওয়ার ঘটনায় আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি : আমার দেশের সাংবাদিকদের জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নেয়ার পুলিশে আবেদনের প্রতিবাদে আজ আমার দেশ-এর সব সাংবাদিক কর্মচারি আদালতে বিচারিক এজলাসে উপস্থিত থাকবেন। হাজিরা শেষে আজ দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আমার দেশসহ গণমাধ্যমের সব সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়ার জন্য ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আমার দেশ-এর ইউনিট প্রধান বাছির জামাল অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও বিক্ষোভ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনসহ সব সাংবদিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেবেন।

Powered by Blogger.