প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তো তাই একটু- আধটু দুষ্টুমি করতেই পারেন!

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ডের ছেলে প্রকাশ দাহালের প্রেম-পরকীয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। কমলের কাছে তার ছেলে রাজকুমার। তিনি একটু-আধটু দুষ্টুমি করতেই পারেন। কিন্তু প্রকাশের নষ্টামি সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নেপালে। নেপালের মিডিয়ায় তিনি প্রায়ই আলোচিত হচ্ছেন। একাধিক বিয়ে, বিচ্ছেদ, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক, ছাত্রীনেত্রীকে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় জেরবার নেপালের রাজনীতি।
তার ওপর রয়েছে তার অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি। বাবা মাওবাদী বিপ্লবী প্রচন্ডের শান্তি প্রস্তাবনা নেপালে এখনো শান্তি আনতে পারেনি। তৈরি হয়নি নতুন সংবিধানও। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ। সব আলোচনা ছাপিয়ে নেপালের সর্বত্র আলোচনায় প্রচ-পুত্র প্রকাশ দাহাল।
প্রেম-পরকীয়ায় একীভূত নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএনসিপি) থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও দল থেকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে পার্টিতে তার সদস্যপদও স্থগিত করা হয়।
তবে কোনো বাধাই আটকাতে পারেনি প্রকাশকে। মিডিয়ার মুখরোচক আলোচনাকেই সত্য প্রমাণ করলেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী ও পরিবারের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বীণা মাগারকে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান প্রকাশ। বীণা মাগার নিজেও বিবাহিতা। তিনি ফ্রি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব সরস্বতী ক্যাম্পাসের সভাপতি এবং অল নেপাল ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। দেশব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নতুন সংবিধানের জন্য তারা লুম্বিনি মাউন্ট এভারেস্ট শান্তি যাত্রা ২০১২ শিরোনামের একটি প্রচারাভিযান চালাচ্ছিলেন। এই শান্তি স্থাপনে প্রকাশের সঙ্গী হয়েছিলেন বীণা।
সেই থেকেই তাদের সম্পর্ক। মনের লেনদেন। তা ধীরে ধীরে গড়ায় শরীরিক সম্পর্কেও। নেপালের মিডিয়ায় সপ্তাহজুড়েই এ নিয়ে তোলপাড়। বীণা থাপা মাগারকে নিয়ে পাটনার কোনো এক স্থানে প্রকাশ লুকিয়ে আছেন এমনটাই জনশ্রুতি। তাদের মুঠোফোন দুটোই বন্ধ।
প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দুই মাস আগে প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরা ৯ সদস্যের একটি দলকে মাউন্ট এভারেস্টে পাঠানোর জন্য ২ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু যে ৯ সদস্যের দল পাঠানোর পরিকল্পনা হয়েছিল তার একজন প্রচন্ডের ছেলে প্রকাশ দাহাল। সমালোচনা ওঠে, এর মাধ্যমে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।
সমালোচনা যখন তুঙ্গে তখন প্রকাশ দাহাল ঘোষণা দেন, তার অর্থের প্রয়োজন নেই। এরপর সেই বিতর্ক স্তিমিত হয়। কিন্তু শুরু হয় কেলেঙ্কারির আরেক অধ্যায়। বীণা থাপা মাগার ছিলেন মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের ৯ সদস্যের একজন। তবে তার আসল বয়স কত তা জানা যায়নি। প্রকাশ দাহালের বয়স এখন ৩১ বছর।
প্রকাশ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন পাটনা শহরে। সেখানেই তিনি কোনো এক স্থানে বীণাকে সঙ্গে নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এর আগেও তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম বিয়ে করেছিলেন ২০০৬ সালে। তখন বিয়ে করেন মাওবাদী নেতা, প্রচন্ডের অনুগত ও বর্তমান মন্ত্রী পোস্তা বাহাদুরের মেয়েকে। তবে সেই বিয়ে টিকে ছিল মাত্র ১৬ মাস। সেই বিচ্ছেদের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই জাতীয় মিডিয়াগুলোতে একটি ছবি প্রচার হয়। তাতে দেখা যায়, ছেলের বিয়েতে নাচছেন পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড।
এরপর বিয়ে হয় গ্রামের মেয়ে শ্রীজানা পাঠকের সঙ্গে। এই ঘরে তাদের এক বছরের সন্তান আছে। ওদিকে বীণা থাপা মাগারেরও এর আগে বিয়ে হয়েছিল শঙ্কর অধিকারী নামের এক মাওবাদী আন্দোলনের ছাত্রনেতার সঙ্গে। তারা রাজনৈতিক কারণে বিচ্ছেদ ঘটান। কিন্তু বীণা থাপা মাগারের সঙ্গে প্রকাশ দাহালের মন দেয়া-নেয়া হয়ে যায় মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের সময়।
তাদের টিম যখন মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে; তখন ওই দলেরই কমপক্ষে দুজন প্রকাশের বাবা-মাকে জানিয়ে দেন, বীণার সঙ্গে প্রকাশের সম্পর্কের কারণে তাদের পারিবারিক সুনাম ও দলের সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে। কিন্তু প্রচন্ড ও তার স্ত্রী এ অভিযোগ গায়ে মাখেননি। এর কারণও আছে। তাদের তিন মেয়ের পর একমাত্র ছেলে প্রকাশ দাহাল।
স্বাভাবিক কারণেই তার প্রতি তাদের নমনীয়তা থাকবে। ফলে প্রকাশ দাহালের বয়স যখন ১৪ বছর; তখন তাকে কাঠমান্ডুর একটি সরকারি স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে পাটনায় ভর্তি করা হয়। এর কারণ, তার এক বোন সেখানে থাকতেন। সেখানে স্কুলের পড়া শেষ করে প্রকাশ যোগ দেন তার বাবা প্রচন্ডের রাজনৈতিক আন্দোলনে। ২০০৬ সালে মাওবাদী গেরিলারা রাজনীতির মূলধারায় ফেরার পর প্রকাশ যোগ দেন রাজনীতিতে। এক পর্যায়ে প্রকাশের ছবি তিন বছর আগে স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশ পায়। তাতে তাকে দেখা যায় মদ্যপ অবস্থায়।

Powered by Blogger.