দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে মায়ের আত্মহত্যার নেপথ্যে ফ্লেক্সিলোডে কাবু তরুণীরা

দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে মায়ের আত্মহত্যার নেপথ্যে স্বামীর একাধিক পরকীয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে তাকে ধরতে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুল ইসলাম বলেন, মা ও দুই মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন জাহানারা বেগমের পিতা মিজানুর রহমান। সোমবার দুপুরে তিনি তার মেয়ে ও দুই নাতনির মৃত্যুর খবর শুনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা এলাকা থেকে ছুটে আসেন। তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ঘটনায় তিনি কাউকে সরাসরি আসামি করেননি। তবে আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন ও প্ররোচনাকারীদের শাস্তি দাবি করেছেন। কাফরুল থানার ওসি মো. আবদুল লতিফ বলেন, প্ররোচনাকারী হিসেবে জাহানারার স্বামী ইসলাম ও তার একাধিক প্রেমিকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত সূত্র জানায়, ইসলামের লন্ড্রির দোকানে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্থা ছিল। সেখানে গার্মেন্টকর্মীসহ এলাকার অনেক মেয়ে মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জ করতে যেতো। ওই সুযোগে ইসলাম ১০-১২ তরুণীকে বাছাই করে তাদের নম্বরে নিয়মিত ফোন দিতো। মাঝে-মধ্যে বাকিতে কিংবা ফোনে টাকা রিচার্জ করে দিতো। আবার অনেক মেয়ের মোবাইল নম্বরে ইচ্ছা করেই ৫০ কিংবা ১০০ টাকা পাঠিয়ে দিতো। পরে ওই নম্বরে ইসলাম ফোন করে বলতো, ভুলে টাকাটা তার নম্বরে চলে গেছে। এ সূত্র ধরেই ইব্রাহিমপুর এলাকার এক গার্মেন্টকর্মীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তা ঘনিষ্ঠতার দিকে গড়ায়। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ খবর শুনে স্ত্রী জাহানারা প্রতিবাদ করেন। ওই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বারণ করেন। কিন্তু ইসলাম তার কথা না শুনে প্রকাশ্যেই ওই মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। এ নিয়ে গত দু’মাস ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। সূত্র জানায়, ইসলাম একই সঙ্গে তিন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এদের একজনকে গোপনে বিয়ে করেছে। তার নাম সোনিয়া। মাস তিনেক আগে তাকে ছেড়ে দিয়ে রাশিদা নামে আরেকজনকে বিয়ের কথা দিয়েছে। এছাড়া সুফিয়া নামের আরও এক তরুণী তার দোকানে মাঝে-মধ্যেই আসা-যাওয়া করতো। তার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। ইসলাম তার বোন বলে পরিচয় দিলেও কখনও বাসায় নিয়ে যেতো না। তবে মাঝে-মধ্যেই ঘুরতে বের হতো। তবে মা ও দুই মেয়ের আত্মহত্যার পরপরই ওইসব তরুণী এলাকা ছেড়েছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ইসলামও পালিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুল ইসলাম বলেন, ইসলামের প্রেমিকাদের সন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা সদস্য ও সোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আনারস ও দুধে বিষ মেশানো ছিল: এদিকে পুলিশের জব্দ করা আনারস ও দুধে কীটনাশক জাতীয় বিষের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তদন্ত সূত্র জানায়, আনারস ও দুধে তরল জাতীয় তীব্র কীটনাশক জাতীয় বিষ মেশানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে প্রথমে দুই মেয়ে হাবীবা আক্তার ওরফে হাওয়া ও শারমিন আক্তার জয়াকে ওই বিষ মেশানো আনারস ও দুধ খাইয়ে দেয় মা। এরপর তিনি নিজেও বিষযুক্ত খাবার খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
বানিয়াচং গ্রামে দাফন: জাহানারা বেগম ও তার দুই মেয়ে হাবীবা ও শারমিনের লাশের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল রাতে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বানিয়াচং গ্রামে দাফন করা হয়েছে। জাহানারার পিতা মিজানুর রহমান বলেন, দুপুর ২টায় লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে।
মহিলা পরিষদের উদ্বেগ: এদিকে কাফরুলে স্বামীর পরকীয়ায় দুই মেয়েসহ মায়ের আত্মহত্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

Powered by Blogger.