প্রবাসী কোটিপতি স্বামীকে পথের ফকির বানিয়ে প্রেমে মত্ত স্ত্রী

স্ত্রীর প্রতারণার শিকার হয়ে কোটিপতি প্রবাসী আক্তারুজ্জামান সোম এখন পথের ফকির। সর্বহারা এই মানুষটি এখন জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একমাত্র সন্তানকে কাছে না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা তার। এক দিকে কোটি কোটি টাকা হারানোর ব্যথা, অন্যদিকে একমাত্র কন্যা সন্তানের প্রিয় মুখটি দেখতে না পারায় যন্ত্রণায় কাতর মানুষটি এখন
ন্যায়বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অন্য দিকে প্রবাস জীবনে রক্ত পানি করে আয় করা প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক লাবণী এখন তার পুরানো প্রেমিকের আস্তানায়। এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে গুম আর খুন করে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে লাবণী। প্রবাসী আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ২টি অপহরণ মামলা দিয়ে তাকে পুলিশি হয়রানি করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতারক স্ত্রীর বিরুদ্ধে। চৌগাছা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আক্তারুজ্জামান ওরফে সোম ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন মহেশপুর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কন্যা ফাতেমা ফারহানা লাবণীকে। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। এর তিন বছর পর জীবন-জীবিকার সন্ধানে জমিজমা বিক্রি করে আক্তারুজ্জামান দক্ষিণ কোরিয়া যান। বিদেশ বিভূঁইয়ে গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থ প্রতি মাসে তার স্ত্রী লাবণীর ব্যাংক হিসাবে এবং বিভিন্ন লোক মারফত দিয়েছেন। যার সর্বশেষ হিসাব মতে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয় স্ত্রী আর সন্তানকে ভালভাবে লালন পালন করার লক্ষ্য নিয়ে তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে দেন। এর পর এসএসসি পাস স্ত্রী লাবণীকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণার্থে ভর্তি করে দেন ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর মেয়ে সুচিকেও একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে লাবণী। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ওই প্রেমিককে লাবণী নিজ বাসাতে নিয়ে শুরু করেন লিভ টুগেদার। ফলে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে। একপর্যায়ে লাবণী স্বামী আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। নানা অজুহাতে সে স্বামীকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে। এর পরও একমাত্র সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সোম যশোর শহরের বকচরে ও ঢাকার মিরপুরে দুটি প্লট ক্রয় করেন। বিদেশে থাকার কারণে এই জমি রেজিস্ট্রি করার দায়িত্ব দেন স্ত্রী লাবণীকে। প্রতারক লাবণী দুটি প্লটই তার নিজ নামে রেজিস্ট্রি করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে গত বছরের ২৯শে ডিসেম্বর আক্তারুজ্জামান সোম কোরিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে সোজা মিরপুরের বাসায় যান। দেখেন বাসায় তালা ঝুলছে। এর পর তিনি গ্রামের বাড়ি চৌগাছায় চলে আসেন। এক দিন পর তিনি শ্বশুর বাড়িতে যান। কিন্তু তার সঙ্গে স্ত্রী দেখা করা তো দূরের কথা নিজ কন্যাকে পর্যন্ত দেখা করতে দেয়নি প্রতারক ওই স্ত্রী। গত ১লা জানুয়ারি লাবণী তার স্বামী সোমকে ডাক মারফত ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়।
শুধু তাই নয় লাবণী বাদী হয়ে তাকে এবং তার কন্যা সুচিকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে মহেশপুর থানায় পৃথক দু’টি অপহরণ মামলা করে। ন্যায় বিচারের আশায় সোম স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম চঞ্চলের কাছে ঘটনাটি জানিয়ে বিচার প্রার্থনা করেন। সংসদ সদস্য চঞ্চল স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার সর্ব রকম চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় তিনি শেষ পর্যন্ত অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে গত ১২ই মার্চ আক্তারুজ্জামান সোম বাদী হয়ে যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্ত্রী ও কন্যাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়ে একটি নালিশি মামলা করেন। এ ব্যাপারে লাবণী আদালতে হাজির হয়ে সাফ জানিয়ে দেয়, সে সোমের সঙ্গে আর সংসার করবে না। এর পর থেকে লাবণী ও তার লোকজন সোমকে অপহরণ, গুম ও খুন করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী সোম। গত ২০শে সেপ্টেম্বর যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সোম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তার করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

Powered by Blogger.