==> কুষ্টিয়ায় ৯ দিন মা ও মেয়েকে আটকে রেখে পুলিশের নির্যাতন

কুষ্টিয়ায় এক কলেজছাত্রী ও তার মাকে ৯ দিন থানায় আটকে রেখে চরম নির্যাতন করেছে পুলিশ। চরমপন্থি কানেকশনের অভিযোগে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। খোকসা থানা ও ডিবি অফিসে আটকে রেখে কলেজছাত্রীর ওপর দৈহিক নির্যাতন
চালিয়েছে পুলিশ। ৯ দিন পর ১৮ই সেপ্টেম্বর ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে মা ও মেয়েকে আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে নির্যাতনের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে ওই কলেজছাত্রী। কয়েক বার আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছে সে। সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চরমপন্থি যোগসূত্রের অভিযোগে গত ৯ই সেটেম্বর রাত আড়াইটার দিকে রাজবাড়ীর বেড়াডাঙ্গা এলাকার বাড়ি থেকে রাজবাড়ী আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এইচএসসির ছাত্রী ও তার মা আলেয়া বেগম আলোকে পুলিশ আটক করে। আটককালে কুষ্টিয়ার খোকসা, কুমারখালী থানা ও ডিবি পুলিশের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিল। ওই রাতে তাদের খোকসা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক বছর আগে এনকাউন্টারে নিহত সালাম মোল্লার স্ত্রী ও কন্যা এরা। সালাম নিহত হওয়ার পর খোকসার আমবাড়িয়া থেকে পরিবার নিয়ে রাজবাড়ীতে চলে যায় তারা। সেখানে কলেজপড়ুয়া মেয়ে ও ছেলে আরিফকে নিয়ে বাস করেন তিনি। ১০ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আরিফকেও খুজছে পুলিশ। আলেয়া বেগম আলো বলেন, আটকের পর খোকসা থানায় দু’দিন রাখা হয় তাদের। সেখানে রাতে কয়েক দফায় কারেন্ট শক দেয় পুলিশ। এতে তার ও মেয়ের হাত পুড়ে যায়। দু’দিন পর রাতে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এখানে ঘুটঘুটে ছোট অন্ধকার রুমে আটকে রেখে অমানিবক নির্যাতন চালানো হয়েছে তার কলেজপড়ুয়া মেয়ের ওপর। তিনি বলেন, পাক সেনাদের মতো অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ। রাতের বেলা ওই ঘর থেকে তার কাছে থাকা তার মেয়েকে তিন দিন নিয়ে গেছে পুলিশ।  ৩ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা রেখে মেয়েকে তার কাছে নিয়ে আসা হতো। এ সময় মেয়ের শরীরের পোশাক পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলে তারা। বিধ্বস্ত ও অসুস্থ হয়ে ওই রুমের মধ্যে তিন দিন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় তার মেয়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, তার মেয়ের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা কোন মা সহ্য করতে পারে না। ওর সব শেষ হয়ে গেছে। আমার মেয়ে যে কোন সময় আত্মহত্যা করতে পারে। ডিবির এএসআই মাসুদসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেত বলে অভিযোগ করেন তিনি। আটক রেখে তাদের কাছে ক্রসফায়ারে নিহত সন্ত্রাসী মোতালেবের স্ত্রী শীলার সন্ধান জানতে চায় পুলিশ। খোকসার আমাবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামসহ তার দুই সহযোগিকে হত্যার ঘটনায় মোতালেবের স্ত্রী শীলা জড়িত বলে পুলিশ ধারণা করে। শীলা তাদের আত্মীয় হওয়ায় পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, এখন এসব কথা কাউকে না বলার জন্য পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ঘটনা প্রকাশ হলে আমাদের গুম করে ফেলবে। ৯ দিন আটক রাখার পর তেমন কোন অভিযোগ না পাওয়ায় ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয় মা ও মেয়েকে। পরের দিন জামিনে ছাড়া পান তারা। এ ঘটনার পর কলেজছাত্রী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাড়ি গিয়েও কয়েক দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে সে। বর্তমানে সে বোনের বাড়িতে অবস্থান করছে। মোবাইল ফোনে কথা হলে ওই কলেজছাত্রী বলেন, আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। পুলিশ আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। পুলিশের অত্যাচার সব সময় তাড়া করছে আমাকে। এ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৯ তারিখে আটক করা হলেও কুষ্টিয়া পুলিশ আদালতে চালান দেয়ার আগে ১৭ই সেটেম্বর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন খলিফা জানান, ৯ তারিখে আটক হলেও আমি পরের দিন ঘটনা জানতে পারি। আমাদের না জানিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ তাদের আটক করে। খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, আমি ওই সময় ছুটিতে ছিলাম। আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবদিন সব জানেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এদিকে কলেজছাত্রী ও তার মাকে আটক ও নির্যাতনের বিষয়টি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের একটি দল তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। তদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে দলটি। দলের তথ্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কোরবান আলী বলেন, অলিখিতভাবে ডিবি হেফাজতে রেখে কলেজছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, কলেজ ছাত্রীকে দৈহিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার পোশাক ছেঁড়া পাওয়া গেছে। কোরবান জানান, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে যাই। তিনি এ সময় বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করার জন্য আমাদের অনুরোধ করেন। এতে পুলিশের কাজের ক্ষতি হবে বলে জানায় ওই কর্মকর্তা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একটি অপারেশনে আছি। পরে যোগাযোগ করেন। এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।

Powered by Blogger.