যৌন কর্মীদের ঈদ আনন্দ, ঠোঠে গাড়ো লাল লিপিষ্টিক পরে মেহেদির রঙ্গে হাত রাঙ্গিয়ে খদ্দের ধরতে পাড়া ময় ঘুরে বেড়াবে

মেহেদি পরার সখ তার সেই ছোট্ট বেলা থেকে। তার কাছে ঈদ মানেই মেহেদির রঙ্গে হাত রাঙ্গিয়ে পাড়া ময় ঘুরে বেড়ানো। ছোট্ট বেলা যখন গ্রামে ছিলো সমবয়সীরা মিলে অন্যের বাড়ির মেহেদির গাছ থেকে পাতা চুরি করে শিল পাটায় পিষে হাতে লাগাতো সকলে মিলে। কত ধরনের যে নক্সা আকঁতো। এখনও ঈদে মেহেদি পরার সখটা মিয়িঁয়ে যায়নি তার। এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে সেলিনা বললো, ভাই
এখনও ঈদ আসলে মেহেদি পরি,বাড়িয়ালী বাজার থেকে এনে দেয়। ঘরে বসে হাতে লাগাই। ঘুরতে তো আর পারি না। আগে যৌন পল্লীর মেয়েরা হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিতো কিন্ত এখন আর ওদের দিয়ে লাগাই না। ওরা ভালো নক্স্রা করে দেয় না। আকা বাকা করে দেয়। বুঝলেন, হিংসা করে আমার নক্সাটা ভালো হলে যদি ওদের খদ্দের আবার আমার কাছে চলে আসে, সেই হিংসা। এখানে কেউ কারও বন্ধু নয়। এবারও ঈদে মেহেদি কিনেছে সেলিনা। চাঁদ রাতের আগেই হাতে মেহেদি পরবে সে। তার পর ঈদের নতুন জামা গায়ে দিয়ে, ঠোঠে গাড়ো লাল লিপিষ্টিক পরে যৌন পল্লীর গলির মাথায় দাড়াঁবে খদ্দের ধরতে। এবার সে পার্লারে যাবে না। বাড়িয়ালী বলেছে সাজিয়ে দেবেন। এ ভাবেই ঈদ আনন্দের কথা জানালেন সেলিনা। যশোরের কোন এক গ্রামে তার বাড়ি। এখন ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌন পল্লীর যৌন কর্মী। বয়েস আঠারো কি উনিশ। আরও আট বছর আগে অভাবের তাড়নায় যশোর শহরে কাজ খুজঁতে এসে এক বুড়ির খপ্পরে পড়ে তার ঠাঁই হয়েছে এখানে। এবার ঈদে দুই সেট নতুন জামা পেয়েছে সে। একজন ভালোবাসার লোক আছে তার। ভালবাসার লোকটি তাকে আড়াই হাজার টাকায় থ্রিপিচ কিনে দিয়েছে। তার বাড়িওয়ালী দিয়েছে একটি জিন্সের প্যান্ট আর গেঞ্জি। লাল রঙ্গের লিপিষ্টিক আর গোলাপী রং এর নেইল পালিশও কিনেছে। সেলিনা জানালো ঈদের দিনে সে ভালোবাসার মানুষের দেয়া থ্রিপিচটাই পরবে।
মালতি বেগমের এখন মধ্য বয়স ছ্ুঁই ছুঁই। একজন বাবু আছে তার। এখানে বাবু মানে তার নিজের মানুষ। অলিখিত স্বামীই বলা চলে। মালতি বেগমের বাবু এবার তাকে একটি শাড়ী কিনে দিয়েছে ৩ হাজার টাকা দিয়ে। মালতিও বাবুকে ঈদের উপরহার দিয়েছে টিয়া রং এর একটি পাঞ্জাবি একটি দামী লুঙ্গি। মালতির অধীনে তিনটি মেয়ে আছে। এরা তার কেনা। তাদের আয় রোজগার যায় মালতির কাছে বিনিময়ে মালতি তাদের ভরনপোষন সহ কিছু হাত খরচ দেয়। জামা কাপড় কিনে দেয়। যৌন পল্লীর নিয়মই এমন,এখানে প্রথমেই এসে কেউ স্বাধীন ভাবে ব্যাবসা করতে পারে না। তাকে কারও না কারও অধীনে থাকতে হয়। এক সময়ে সেও স্বাধীন হয়ে নিজে দেহ ব্যবসা করে। বয়স বাড়লে নিজেই বাড়িওয়ালী হয় তখন তার অধীনে আবার নতুন যৌনকর্মী থাকে। মালতি তার অধীনের তিন মেয়েকে থ্রিপিচ এবং জিন্স প্যান্ট ও টপস কিনে দিয়েছে। নিজে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি থ্রিপিচ কিনেছে। মালতি জানালেন ঈদে তার প্রায় কুড়ি হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে পোষাক এবং কসমেটিকস কিনতে। এখনও বাকী আছে ঈদের দিনের বাজার এবং তার নিজের ও মেয়েদেরকে খদ্দেরের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে পার্লারের খরচ। পার্লারেই খরচ হবে প্রায় ৫ হাজার টাকা। কেন পার্লারে যেতে হবে? মালতি বললেন, ভাই গ্রামে একটা কথা আছে ‘আগে দর্শনধারী তার পর গুনবিচারী” মেয়েদের যদি দেখতে আকর্ষনীয় না হয় তা হলে খদ্দের পাওয়া যাবে না। বুঝেন তো ্চাঁদ রাত থেকে শুরু করে পরের চার পাচ দিন হচ্ছে আমাদের আয় রোজগারের ভালো সময়। অনেক খদ্দের আসে এ সময়। সে কারনেই পার্লারে গিয়ে কালো চামড়াও মেয়েরা সাদা করে নিয়ে আসে। ওই যে পুরুষ মানুষ সাদা চামড়া দেখলে আর হুশ থাকে না। রথখোলা যৌন পল্লীর তিন তলা ভবনের দোতলার তিনটি রুমে থাকে পারভীন ও তার নিয়ন্ত্রনের দুই মেয়ে। তাদের ঈদের কেনাকাটা শেষ হয়েছে আগেই। পারভীন কিনেছে শাড়ী তিন হাজার টাকা দামের। মেয়েদের কিনে দিয়েছে থ্রিপিচ দুই সেট করে। বিছানার চাদর কিনেছে। ঘর সাজানোর জন্য কিনেছে রঙ্গিন কাগজ। তার এক অতিপরিচিত লোকের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী একটি জেলা থেকে কিনে এনেছে যৌন আবেদনময়ী পোষ্টার। ঈদের আগেই সেগুলো দিয়ে ঘর সাজিয়েছে খদ্দেরের মন ভোলাতে। রথখোলা যৌন পল্লীতেই জন্ম রহির। তার মা ও ছিলো এখানের যৌনকর্মী। রহির আয় রোজগার ভালো। জানা গেল পুরো যৌন পল্লীর ভেতরে এবার সবচে বেশী দামী ঈদ বাজার করেছে সে। তার অধীনে আছে পাচটি মেয়ে। যৌন পল্লীর ভাষায় ওই সকল মেয়েদের বলে ছুকরি। তাদের জন্য প্রায় তিন হাজার টাকা দামের দুইটি করে থ্রিপিচ কিনে দিয়েছে সে। রহি নিজের জন্য কিনেছে ৭ হাজার টাকা দামের শাড়ী। কসমেটিকস সহ অন্য বাজার তো আছেই। ঢাকা জেলার মেয়ে মর্জিনা। তার নিয়ন্ত্রনে থাকা দুইটি মেয়েকে এবার সে ভালো জামা কাপড় দিতে পারেনি। হাতে টাকা নেই। মর্জিনা জানালো রমজান মাসে যৌন পল্লীতে খদ্দের আসে খুব কম। এ মাসটা খুবই খারাপ সময় যৌনকর্মীদের জন্য। যারা আগে থেকে কিছু টাকা জমাতে পেরেছে ঈদে তাদের সমস্যা হয়নি। যারা টাকা জমাতে পারেনি তাদেরকে সুদে টাকা এনে ঈদ বাজার করতে হয়েছে। ঈদের সময়ে বেশী রোজগার থেকে হয়তো সুদের টাকা ফেরত দেবে। মর্জিনা আগেই এক বিপদে পড়ে সুদে টাকা নিয়েছিলো এখন পর্যন্ত সে টাকা শোধ করতে পারেনি বলে নতুন করে সুদে টাকা নিয়ে ঈদ বাজার করেনি। এবার ঈদটা খুব খারাপ তার জন্য। ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌন পল্লীতে বসেই কথা হয় শীলা,রুনা,পারভীন ,শাপলা, সালমা সহ আরো বেশ কয়েকজন যৌন কর্মীর সঙ্গে। ঈদ নিয়ে তাদের অভিব্যাক্তির কথা জানায় তারা। তারা জানান,ঈদ মানে আনন্দ। রথ খোলা যৌন পল্লীতে প্রায় এক হাজার যৌন কর্মীর বসবাস এখন। তাদের বেশীর ভাগই মুসলমান পরিবারে। যৌন কর্মীদের নেত্রী আলেয়া জানান,ঈদের দিন এখানের প্রতিটি ঘরে পাক হয় মাংশ পোলাও ,ঈদের সেমাই সহ উন্নত খাবার। ঈদের নতুন জামা পরে সেজেগুঁজে মেয়েরা খদ্দের ধরার পাশাপাশি ঘুরে বেড়ায় যৌন পল্লীর ভেতরে। একজন আরেকজনের ঘরে যায় কুশল বিনিময় করে। সেমাই খায় আনন্দ উপভোগ করে। যৌন কর্মীদের বাবুরা আসে কখনো কখনো বাবুরা সঙ্গে করে নিয়ে আসে তাদের বন্ধুদের। দিনভর হাসি ঠাট্টা চলে। বিত্তবান যৌনকর্মীদের ঘরে গান বাজে বড় ডেক সেটে। যৌনকর্মীদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়ায় পল্লীর ভেতরে। যৌন পল্লীতে বেড়ে ওঠা ছেলেদের মধ্যে যারা বড় হয়েছে তারা ঈদের নামাজ আদায় করে বাইরে শহরের লোকদের সঙ্গে ঈদের জামাতে। রথ খোলা যৌন পল্লীতে দেখা গেল ঈদের একদিন আগেই শুরু হয়ে গেছে ঈদ আনন্দ উপভোগ। একদল ষোড়শী যৌনকর্মী পল্লীর গলির ভেতরে দাড়িয়ে একজন আরেক জনের গায়ে ঢলে পড়ছে আর গাইছে যৌন পল্লীর প্রিয় গান‘ চৌধুরী আর ভূইয়া খন্দকার সব সাহেবের এক চেহারা যখন অন্ধকার।
মানবজমিন

,
Powered by Blogger.