ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে নাইট পার্টি আবারো জমজমাট!

বেশ কিছুদিন ধরে অভিজাত পাড়ার কথিত নাইট পার্টির উদ্যোক্তারা পর্দার আড়ালে থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর অভিজাত পাড়া গুলশান, বনানী ও বারিধারার কিছু কিছু হোটেল-রেসত্মোরাঁয় “নাইট পার্টি” আবারো জমজমাট হয়ে উঠেছে।
নাইট পার্টির উদ্যোক্তারা আবার সক্রিয় প্রায় প্রতিরাতেই তারা আয়োজন করছেন ড্যান্স ও ড্রিংকস পার্টি। প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি অল্প বয়েসী অনেক কিশোর-কিশোরীকেও
দেখা যায় এসব পার্টিতে। রাতভর উন্মাতাল নাচগান শেষে নেশায় বুঁদে হয়ে শেষরাতে ঘরে ফিরে যায় তারা। এ ধরনের নাইট পার্টিতে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
বিরাট হলরুম - বড় সারাউন্ড স্পিকারগুলোতে বিটের তাল এমনিতেই মন-প্রাণ চঞ্চল করে তোলে। সেখানেই মিনি বারে বিয়ার এবং হার্ডড্রিংসের হরদম সরবরাহ হচ্ছে। গ্লাস বা বিয়ারের ক্যান নিয়ে অনেকেই চলে আসছেন ড্যান্স ফ্লোরে। স্বল্প বসনা উচ্চবিত্ত ঘরের তরুন-তরুনীর ততৰণে উপচে পড়া ভিড় ড্যান্স ফ্লোরে। রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে উঠছে পার্টি।  নামে গেস্ট হাউস হলেও এর ডেকোরেশন যেকোন থ্রী স্টার বা ফাইভ স্টার হোটেলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনিবার উইকএন্ড পার্টির ছদ্মানামে এসব পার্টির আয়োজন করা হলেও বেশ কিছু গেস্ট হাউসে নিত্যই এ ধরনের নাইট পার্টির আয়োজনের তথ্য মিলেছে।
রাত গভীর হবার সঙ্গে সঙ্গে যেন বদলে যায় নগরীর চিত্র। ভাসমান লোকগুলো সারাদিনের কর্মক্লান্তিতে আচ্ছন্ন মানুষগুলো একটি ইট মাথায় দিয়ে হলেও ঘুমোবার এক টুকরো জায়গা খুঁজতে থাকে। ঢুলু ঢুলু চোখে কোন ফুটপাথ বা আইল্যান্ডের ওপর জায়গা পেলে সেখানেই অচেতনের মতো পড়ে ঘুমিয়ে যায়। অন্যদিকে অভিজাতপাড়ায় যেন দিনের শুরু হয়। রাত যত গভীর হয়, অনেকেরই বিলাসী জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ানো নাইট পার্টি যেন রঙিন হতে থাকে। অতীতে কেবল ‘ফু ওয়াং’ ক্লাবের ডিসকোতে পুলিশের অভিযান এবং অবৈধ মাদকদ্রব্যসহ তরুন-তরুণী আটকের সংবাদ মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে দেখা যেত। এখন অভিজাত পাড়াগুলোতে পাল্লা দিয়ে এই জমজমাট পার্টি ব্যবসা চলছে। বহুতল এ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে এবং বিভিন্ন গেস্ট হাউসে নিয়মিতই চলছে রাতের জলসা। এরমধ্যে বেশ কিছু চিহ্নিত গেস্ট হাউসকে মিনি পতিতালয় বললেও অতিরিক্ত বলা হবে না । রূপালি জগতের উঠতি চলচ্চিত্র তারকা থেকে টিভি মডেলদের অনেকেই এসবে নিয়মিত অংশ গ্রহণকারী।
ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলশান আবাসিক এলাকার ভিয়েতনামি রেস্তোরা ‘লে সাইগান’ এ রাতের বেলায় নিয়মিত ড্যান্স পার্টির আয়োজন করা হয়ে থাকে। মূলত মাদক-পানীয় বিক্রির জন্যই আয়োজন করা হয় এ ধরনের পার্টির। গুলশান,বনানী, বারিধারার কয়েকটি রেস্তরোঁয় প্রতিরাতেই এ ধরনের ড্যান্স পার্টির আয়োজন করা হয়। এছাড়া রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতেও সপ্তাহে এক বা একাধিক রাতে ড্যান্স পার্টির আয়োজন থাকে।
অভিযোগ রয়েছে যে, মাদক পানীয় নির্ভর এসব পার্টিতে অংশগ্রহণের বয়সের কোনো বাছ-বিচার নেই যে কোনো বয়সের লোকজন, এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও অনায়াসেই অংশ নিতে পারে উন্মাতাল পার্টিগুলোতে এর ফলে সামাজিক অবক্ষয় যেমন বাড়ছে, তেমনি অশানি সংকেত সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারের মধ্যে। ড্যান্স পার্টির উদ্যোক্তাদের বেপরোয়া তৎপরতায় অভিজাত এলাকার অভিভাবকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
গুলশান ৫৫ নম্বর সড়কের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্লাসমেটের বাসায় থাকার কথা বলে তার কিশোরী কন্যা কিছুদিন আগে একরাতে বাসায় ফেরেনি। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন যে, তার মেয়ে এবং মেয়ের ক্লাসমেট কেউই সেই রাতে বাসায় ছিল না। তারা দুইজনেই ওইরাতে বন্ধুদের সঙ্গে একটি হোটেলের পার্টিতে অংশ নেয়। তারপর থেকে মেয়েকে আর রাতের বেলায় বাসার বাইরে যেতে দিচ্ছেন না তিনি।
অভিজাত এলাকার আরো অনেক পরিবারেই সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সন্তানের স্বাধীন চলাফেরা নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অসামাজিক কর্যকলাপ চলে আসলেও এ সম্পর্কে পুলিশের উর্ধতন মহলের বক্তব্য হচ্ছে, বিভিন্ন গেস্ট হাউসে যে পার্টি হয় তার অনেকগুলোই পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা হয়। যেমন, বাচ্চার জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা, বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের নামে করা হয়।  এসব পার্টির আয়োজকদের চিহ্নিত করে অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের উর্ধতন মহল এ বিষয়ে ভালভাবেই অবগত। তবে এই সব নাইট পার্টির উদ্যোক্তারা প্রায় সকলেই প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকে। সেই সাথে প্রশাসন পায় মাসিক মাসোহারা। তাই প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আসছে। আর অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের সাথে যোগসাজগেই আয়োজন করা হয় এসব পার্টির।

Powered by Blogger.