এ কোন তিন্নি!

শ্রাবস্তীর কারুকার্য শোভিত সেই তিন্নি আর এই তিন্নি! এ যেন রীতিমতো আকাশ-জমিনে কানাকানি। হায় শ্রাবস্তী! আহা তিন্নি!! এমন তো কথা ছিল না। তবুও কথা না রাখার দলে অনেক আগেই ফিরে গেছেন শ্রাবস্তী তিন্নি। গতকাল নিজের তোলা এই ছবিটি নিজেই প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে। যে ছবিটি দেখে তিন্নির অগুনতি ভক্ত হতাশ হয়েছেন। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, প্রিয় মানুষটির এমন মুখ কিংবা পরিণতি
  দেখার চেয়ে না দেখাই শ্রেয় ছিল। অনেকেই আবার প্রত্যাশা করেছেন, সব গুছিয়ে ফের ফিরে আসার। অবশ্য ভক্তদের এমন মন্তব্যে ফেসবুকে তিন্নির ছিল না কোন উত্তর। হয়তো এখনও তিনি আগের মতোই- ড্যামক্যায়ার। তাই তার এই অবিশ্বাস্য বর্তমান ছবিটি দেখে কে কি ভাবলো, আর কে কি বললো- সেটা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন।
তিন্নি এখন অনেকটাই নজরবন্দি রয়েছেন তার বাবা-মা’র। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, যেন আপন ঘরেই পরবাসী সময় পার করছেন তিনি। বাসা থেকে বড় জোর যাওয়া হয় রিহ্যাবে। অথবা রিহ্যাব থেকে বাসা। যেন খাঁচায় বন্দি হলো আকাশমাতানো সেই রাঙা ঠোঁটের টিয়া পাখিটি। খবরটি আপাত দৃষ্টিতে আফসোসের হলেও, বাস্তবতার ঊর্ধ্বে তো আর কেউ নন। গেল বৈশাখে ‘নীল কুয়াশা’ নামের একটি নাটকে উঁকি দিয়ে ফের আড়াল হলেন তিন্নি। যেখানে তিন্নি অভিনয় করেছিলেন নোবেল ও তারিনের সঙ্গে। এই নাটকের মধ্য দিয়ে প্রায় দু’বছর পর ফিরেছিলেন ক্যামেরার সামনে কিংবা ফেলে যাওয়া গ্ল্যামার অধ্যায়ে। নাটক সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় পাওয়া যাবে নতুন তিন্নিকে। কারণ ‘নীল কুয়াশা’ নাটকের মধ্য দিয়ে ফেরার আগে টানা এক বছর তাকে থাকতে হয়েছে দেশে ও বিদেশের বেশ ক’টি রিহ্যাব সেন্টারে (নেশাগ্রস্তদের চিকিৎসালয়)। তার বাবা-মা-ই সন্তানের সুস্থতার লক্ষ্যে বেশ ক’বার রিহ্যাব সেন্টারে পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এমনকি, ‘নীল কুয়াশা’ নাটকে অভিনয়ের ব্যাপারেও তিন্নির বাবা-মায়ের ঘোরতর আপত্তি ছিল। তাইতো নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে শর্ত দেয়া হয়েছে, শুটিং শুরুর আগে তিন্নিকে বাসা থেকে নিয়ে যেতে হবে। শুটিং শেষ করে আবার তাকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। এমন শর্তেই মূলত নাটকে অভিনয় করার অনুমতি পান তিন্নি। উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, লম্বা বিরতি, বাবা-মায়ের শর্ত আর নির্মাতার কড়া নজরদারির মাঝেও তিন্নি শিডিউল ফাঁসিয়ে দেন তখন। প্রথম দিন ঠিক ঠিক শুটিং করলেও, পরের দিন থেকে লা পাত্তা! শুটিং ফাঁসানোর ওই সপ্তাহেই তাকে ভারতের একটি রিহ্যাব সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সব মিলিয়ে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হিল্লোলের সঙ্গে বছর দুই আগে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই তিন্নির কেটেছে রিহ্যাব সেন্টারে। আর রিহ্যাব থেকে খানিক সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও, দু’দিন বাদেই উচ্ছৃক্সখলতা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারণে তাকে যেতে হয়েছে রিহ্যাবে।
তিন্নি আপাতত বাসায় নজরবন্দি হয়ে আছেন বাবা-মা-স্বজনের। এর মধ্যে অনেক নির্মাতা নাটক-চলচ্চিত্রের অফার নিয়ে বাসায় হাজির হলেও একদমই অনুমতি মিলছে না অভিনয়ের। কারণ পারিবারিক সূত্রে অভিযোগ রয়েছে, গ্ল্যামার মিডিয়ার কারণেই শ্রাবস্তী তিন্নির আজ এই করুণ পরিণতি। তাই আর কোন নাটক-সিনেমা নয়। এদিকে জানা গেছে হিল্লোল-তিন্নি ক্ষণিক সংসারের একমাত্র কন্যা ওয়ারিশা এখন তার নানা-নানীর (তিন্নির বাবা-মা) হেফাজতে আছে। যদিও হিল্লোলের অনেক দিন ধরে অভিযোগ, মেয়ে ওয়ারিশার প্রতি মা শ্রাবস্তীর নজরদারি বরাবরই ছিল অবহেলার। এখনও কি তাই? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বোকামি বটে। কারণ, যেখানে গেল ক’বছর ধরে তিন্নিকেই সামাল দিতে পারছে না কেউ, সেখানে তার সন্তানের বিষয়টি বড় বেশি তুচ্ছ বলেই মনে করছেন অনেকে।
গ্ল্যামার মিডিয়ায় শ্রাবস্তী তিন্নির জমকালো অভিষেক ঘটেছে বছর দশেক আগে। তার পর তর তর করে কেবলই এগিয়ে যাওয়া। মডেলিং, টিভি নাটক এমনকি চলচ্চিত্রেও তিন্নির গ্ল্যামার দ্যুতি আর অভিনয় রোশনি ছড়িয়েছে। বছর পাঁচেক ঠিকই চলছিল শ্রাবস্তীর জয়যাত্রা। এর পরই শুরু হয় তার ভাঙা-গড়া কেন্দ্রিক গল্প। প্রেমে পড়া এবং সেখান থেকে উঠে আসা। সংসার গড়া এবং সেটা এক লহমায় ভেঙে ফেলা। শুটিং শিডিউল দিয়ে সুন্দর করে ফাঁসিয়ে দেয়া। এর সবই একজন শ্রাবস্তী তিন্নি’র স্বভাবগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বছর তিনেক হলো তিন্নি পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন নেশাকেন্দ্রিক অন্ধকার জগতে। তার এসব ননস্টপ অপ্রকৃতিস্থ কার্যকলাপে যারপরনাই বিরক্ত নির্মাতা-কুশলী-সতীর্থ-স্বজনরা। একই সঙ্গে তিন্নির জন্য এখনও আফসোসের সুর কথায় কথায় ভেসে বেড়ায় গ্ল্যামার মিডিয়ায়। যেই সুরে নতুন মাত্রা যোগ হলো গতকাল ফেসবুকে আপলোড করা তিন্নির বর্তমান ছবিটি। মিডিয়ার অনেকেই বলেন, তিন্নিদের এই করুণ পরিণতির জন্য মিডিয়ার কিছু মুখোশধারী গডফাদাররা দায়ী। যারা বরাবরই তিন্নিদের মতো সুন্দরী-মেধাবীদের টার্গেট করে নিয়ে যায় ক্রমশ অন্ধকার গহ্বরে। যে গহ্বর থেকে বেরিয়া আসা বড্ড দুষ্কর।

,
Powered by Blogger.