আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আমার কাছে তথ্য আছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। সুতরাং আগামী ছয় মাস মানুষের কাছে
গিয়ে বিএনপি’র অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে।
গতকাল যুবলীগ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে জয় দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুবলীগ নেতাদের দিক-নির্দেশনা দেন। আসন্ন দশম জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি গত ১৬ই জুলাই সপরিবারে দেশে আসেন। দলীয় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতেই তার দেশে আসা। দেশে আসার পর গতকালই তিনি কোন রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখেন।
জয় বলেন, বিএনপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরকেও প্রচারণায় নামতে হবে। এখন থেকে আগামী ছয় মাস বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে হবে। মানুষ যদি আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কথা বলে, তাহলে তখন বলবেন, আসুন আমরা বিএনপির আমলের দুর্নীতির সঙ্গে এ আমলের তুলনা করি। তাহলেই মানুষ সহজে বুঝবে। কারণ তাদের কোন সফলতা নেই। তাদের সময় বাংলাদেশ পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণায় আমরা এখন দুর্নীতিতে ৪০তম কোঠায় আছি। আর বিএনপি পাঁচ বছরে এক নম্বরে ছিল। আজ আমরা সেখান থেকে কোথায় এসেছি? আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি। তাদের সময় দুর্নীতির কথা বলাই যেতো না। চার বছর আমরা কিভাবে দেশ চালিয়েছি তা দেশবাসী দেখেছে। বিএনপি আমলের  মতো এমন কোন ভবন হয়নি যেখানে ব্যবসায়ীদের চাঁদা দিতে হয়। বিএনপি আমলে এমন কোন ছোটখাটো ব্যবসা ছিল না যেখান থেকে হাওয়া ভবনকে চাঁদা দিতে হয়নি। তারা শুধু খাম্বা দিয়েছে। বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকায় কতগুলো ফ্লাইওভার তৈরি করেছে। একটা ফ্লাইওভারের জন্য কাউকে কোন চাঁদা দিতে হয়নি। হাতিরঝিল তৈরি করে ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে দেয়া হয়েছে। সেখানে গেলে মনে হয় দেশের বাইরে কোথাও এসেছি। ঢাকাকে আন্তর্জাতিক শহরের মতো মনে হয়। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিয়েছি। এভাবে অর্থনীতি এগোলে ২০২১ ভিশন-২১ বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, রমজানে কোন খাদ্যের দাম বাড়তে দেয়নি সরকার। হয়তো অনেকে ভুলে গেছে বিএনপি সরকারের আমলে রমজানে কিভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তো। এটা ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ এগিয়েছে বিএনপির দুই আমলেও সে পরিমাণ দেশ এগোয়নি। এই দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে সব আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে। বিএনপির সময় হাওয়া ভবনের মাধ্যমে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি হয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। ১০ মাসের শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি আমলে যেভাবে নির্যাতন হয়েছে তা কোনভাবেই মানুষকে ভুলতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা ২১শে আগস্টের কথা ভুলিনি। আমার মায়ের ওপর বোমা হামলা করা হয়েছিল। আমাদের দলের ২৩ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং ৪০০ জনকে আহত করা হয়েছিল। আমি ছোটবেলায় যাদের সঙ্গে খেলতাম তাদের মা আইভী রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছিল। হাওয়া ভবন থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নিজে পরিকল্পনা করে এ হামলা করে। এর বিচার হবেই। সামনে নির্বাচন। অনেকে চিন্তা করছেন আওয়ামী লীগ জিততে পারবে কিনা। আমার কাছে তথ্য আছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবেই। বিএনপির মিথ্যা প্রচার আমরা মোকাবিলা করবোই। তরুণ নেতারা হয়তো ভুলে গেছে, বিএনপি আমলে কিভাবে নির্যাতন হয়েছিল। আগামী ছয় মাস যুবলীগকে সারাদেশে বিএনপি আমলের দুর্নীতি প্রচার করতে হবে। সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে তাদের সন্ত্রাসের কথা। আজ বাংলার মাটিতে কোন সন্ত্রাস নেই। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আগামী ৮ বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার কালো দিন শুরু হবে। আমার বিশ্বাস মানুষ তাদের আর ভোট দেবে না। আমরা তাদের কথা ভুলিনি, আর ভুলবো না। আবার ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় আনতে পারলে আমরা দেশের চেহারা পাল্টে দেবো। কোথায় নিয়ে যাবো দেশকে তা দেশবাসী চিন্তাই করতে পারবে না। রমজানে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সেবায় কাজ করে। ইফতার মাহফিলের প্যান্ডেলের দিকে ইঙ্গিত করে জয় বলেন, আজ আমার খুব ভাল লাগছে এই তাঁবুর মধ্যে ফ্যান চলছে। বিদ্যুৎ আছে। লোডশেডিংয়ের ভয় নেই। যা আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন দেশের অবস্থা কি ছিল, অর্ধেক দিন অন্ধকার থাকতো। বিএনপি পাঁচ বছরে একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ কোথায় ব্যর্থ হয়েছে? বিএনপির সঙ্গে তুলনা করলে তাদের কোন সফলতা নেই। ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুস সোবহান গোলাপ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্ম নিয়ে বিভ্রন্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কৌশলে নেমেছে তারা। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দায়িত্ব তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। রমজান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও সংযমের মাস। ক্রোধ, ক্ষোভ, হিংসা, লোভকে আমরা এ মাসে বর্জন করার চেষ্টা করি। অথচ এই রমজান মাসে জামায়াত, হেফাজত ও বিএনপি টানা চারদিন হরতাল দিলো। এ ঘটনাই প্রমাণ করে জামায়াত, হেফাজত, বিএনপি ও তার সহযোগীরা ইসলাম কয়েম নয়, ইসলাম ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীরও সমালোচনা করেন। source:mzamin

, ,
Powered by Blogger.