সালমান এফ রহমান ভাড়া বাড়িতে থাকেন!

বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমানের নিজস্ব বাড়ি নেই ! ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি! বিষয়টি সবার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য। গুলশান দুই নম্বরে বিএনপির সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন সালমান এফ রহমান। প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা ভাড়া দেন। বিষয়টি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে

জনশ্রুতি আছে বর্তমান সরকারের আমলে সালমান রহমানের ব্যবসা বাণিজ্যে এমনভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন যে তিনি এই চার ব্ছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। এ জন্যই ভাড়া বাড়িতে তার থাকা নিয়ে বিস্ময় আর কৌতূহলের শেষ নেই।
তবে সালমান রহমানের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চার বছর ধরে গুলশানে তিনি অত্যাধুনিক বাড়ি নির্মাণ করছেন। বাড়িটি এতোটাই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ যে, নির্মাণ কাজে সময় বেশি লাগছে। তবে এর বাইরে অন্য কোনও কারণ আছে কি-না তা নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকার দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনি মিডিয়াতে মিডিয়াতে সালমান রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ঝড় তুলেছেন।
এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন সালমান এফ রহমান। তিনি এমপি রনিকে ‘বেকায়দায়’ ফেলতে অনেব চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ চেষ্টায় সফলও হয়েছেন।সালমান এফ রহমানের মালিকানাধিন টেলিভিশনের সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগে রনি এখন জেলে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালমান এফ রহমান সরকারের খুব ঘনিষ্ট হলেও তিনি থাকেন বিএনপির সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায়। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রয়েছে সালমান এফ রহমানের সখ্যতা।বিষয়গুলো সমালোচনায় বাড়িত ঘি ঢেলে দিচ্ছে।
এছাড়া শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারেরও ইমেজ সংকট তৈরি হয়। মিডিয়াতে গোলাম মাওলা রনিসহ বিভিন্ন মহল ব্যাপক সমালোচনা করে। এতে সালমান এফ রহমানের গোমর ফাঁস হয়ে যায়। এনিয়ে রনির উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন সালমান এফ রহমান।
জানা যায়, ২০১০ সালের পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের অন্যতম এক খলনায়ক হিসেবে তদন্ত রিপোর্টে প্রমাণিত হওয়ার পর সালমান এফ রহমান দেশব্যাপী একটি নিন্দনীয় নাম হিসেবে দেখা দেয়। তবে একসময় সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপটি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত ছিল। বেক্সিমকো ফার্মা এদেশের ওষুধ শিল্পে অন্যতম একটি স্থান দখল করেছিল। সেই সময় তাকে অনেকটা পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী হিসেবেই চিহ্নিত করা হতো।
কিন্তু যতই দিন গেছে একের পর এক তিনি জড়িয়ে পড়েছেন বিতর্কিত সব ঘটনায়। আরও সম্পদ বাড়িয়ে তোলার নেশায় পা বাড়িয়েছেন ঋণ খেলাপী, জমি জালিয়াতি এবং শেয়ার কেলেঙ্কারি ও প্রতারণার মত অনৈতিক পথে। আর এসবের মাধ্যমে মানুষের অশ্রু আর দীর্ঘশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এসব কারণে অনেককে এমনও বলতে শোনা যায়, একজন মানুষের আর কতটা সম্পদ অর্জিত হলে তিনি অবৈধ পথে এরকম অর্থ উপার্জন বন্ধ করবেন? তারপরেও তিনি মানুষের আই ওয়াস করছেন তিনি ভাড়া বাড়িতে থাকেন!
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকো তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো ১৯৭২ সালে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেক্সিমকো উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে। আশির দশকে ওষুধ শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ হবার পরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগ করে। এরপর আসে টেক্সটাইলসের খাতে বিনিয়োগ।
এখন বেক্সিমকো বিমান পরিবহন খাতকেও তাদের কোর বিজনেস-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু ৯০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সালমান এফ রহমান ঢুকে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে। রাজনীতিতে যোগ দেবার ফলে প্রথমদিকে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
বিশেষত ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বেক্সিমকোকে বেশ খারাপ সময় পার করতে হয়। আর ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে প্রায় দুইবছর জেলে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এর পরপরই তিনি এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় বসার পর কেবলই তরতর করে এগিয়ে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিশাল অংকের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের অধিকারী হন। এর ফলে ২০০১ থেকে দীর্ঘদিন যে আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে চলছিলেন তা থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসেন। সুত্রঃ ঢাকা টাইমস

, ,
Powered by Blogger.