প্রতারক ইমা’র কব্জায় ১৫০ চিয়ার্স গার্ল

সর্বনাশা ইমা শ’ শ’ তরুণীর জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। চিত্রজগতের মডেল কিংবা নায়িকা হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দলে ভিড়িয়েছে। বাধ্য করেছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। তৈরি করেছে চিয়ার্স গার্ল হিসেবে। প্রয়োজন মতো প্রভাবশালীদের হাতে তুলে দিয়েছে। গতকাল তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশ
ও ইমা’র ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য ইমা তার সব অপকর্মের জন্য দায়ী করেছে ভাই তানভীর খালেদকে। জেলগেটে তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে দাবি করেছে, তানভীর খালেদের প্ররোচনাতেই সে অন্ধকার জগতে নেমেছে। তার দাবি- তানভীর বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শোধ করত না। এতে পাওনাদাররা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত। টাকার জন্য চাপাচাপি করত। তখন তাদের সামাল দেয়ার ভার পড়ত আমার ওপর। ভাইয়ের নির্দেশে আমার যা আছে তাই দিয়ে তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। তাই বলে কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি। ওদিকে রাজধানীর বনানী থানায় প্রতারক ভাই ও বোনের বিরুদ্ধে আরও একটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। বাড্ডা শাখা অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রতারণার মামলা ঠুকেছেন ইমা ও তার ভাই তানভীর খালেদের বিরুদ্ধে। বনানী থানার ওসি ভুঁইয়া মাহবুব হাসান বলেন, ইতালিতে লোক পাঠানোর কথা বলে কয়েক দফায় ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইমা ও তার পরিবার। বিনিময়ে তিনটি ভুয়া ভিসা দিয়েছিল। এ নিয়ে ইমা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে চারটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে ইমার অসংখ্য প্রতারণার তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। সূত্র জানায়, পুরাতন ডিওএইচএসের যে বাড়িটি ইমা তার নিজের বলে দাবি করেছিল আসলে সেটি তার নিজের বাড়ি নয়। এ বাড়িটি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার। ইমা ও তার পবিার সেখানে ভাড়ায় থাকতো। পাশাপাশি বাড়ির মালিক ওই সেনা কর্মকর্তাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিত। এর বাইরে ইমা’র অন্ততপক্ষে আরও চারজন সাবেক স্বামীর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ। যাদের সঙ্গে বর্তমানে ইমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে প্রত্যেকের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। সূত্র মতে, বিভিন্ন কৌশলের প্রতারণার পাশাপাশি ভাই-বোন বিয়ে নিয়েও বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গোয়েন্দা তথ্যমতে- উদীয়মান মডেলদের কব্জা করে বিয়ের ফাঁদে ফেলতো তানভীর। পরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সান্নিধ্যে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতো। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। তদন্ত কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী রাহধানীর অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী অন্তত দেড়শ’ তরুণীর নাম-পরিবচয় জানতে পেরেছেন তারা। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ইমা ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। প্রকাশ্যে এরা সবাই পার্টি গার্ল ও চিয়ার্স গার্ল হিসেবে পরিচিত। আড়ালে কর্লগার্লের কর্মকাণ্ড করে বেড়াত। ইমা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরার বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে আয়োজন করতো জলসা নাইট ও ডিজে পার্টি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে ওই পার্টি গার্লদের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সামনে উপস্থান করতো। তাদের নিয়ে রাতভর চলতো আমোদ-ফুর্তি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘স্টারডম’ নামে একটি বিনোদন পত্রিকার কাভারপেজ মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত ডজন খানেক উদীয়মান মডেলের সর্বনাশ ঘটিয়েছে তারা। এদের কয়েকজনকে বিত্তশালীদের কাছে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গোপনে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তাদের নিপীড়নের ঘটনা বর্ণনা করেছে। অনেকে মান-সম্মানের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে সবকিছু হারিয়ে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইমা ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে অন্ততপক্ষে দেড়শ’ চিয়ার্স গালের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা সবাই বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। একজন তরুণ নাট্য নির্মাতার অভিযোগের সূত্র ধরে গত শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে রেজওয়ানা খালেদ ইমাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে প্রতারণার দুই মামলায় দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপরই ইমা, তার ভাই তানভীর ও পিতা আলমগীর খালেদের অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ জমা হতে থাকে পুলিশের কাছে। তবে এখন পর্যন্ত তানভীর খালেদ ও তার পিতা আলমগীর খালেদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। কখনও ফ্যাশন ডিজাইনার, কখনও ব্যবসায়ী, কখনও সরকারী কর্মকর্তার পরিচয় দিত তারা। কখনও মডেল ও নায়িকার ছদ্মবেশে ঘনিষ্ঠ হতো প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে। এছাড়া বিনোদন পত্রিকার সম্পাদক, চিত্র নির্মাতা, ভিওআইপি, গাড়ি ব্যবসায়ী, আদম বেপারী ও মৎস্য খামারী হিসেবেও পরিচয় দিত। এভাবে গত ৭ বছর ধরে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

Powered by Blogger.