‘তোমরা আমাকে ঠকবাজ বলো না’-ডিবির হাতে গ্রেফতার তরুণী ইমা

তোমরা আমাকে ঠকবাজ, প্রতারক বলো না। আমি এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নই। যারা অভিযোগ করছে তারাই আমাকে ঠকিয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।’-কথাগুলো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হওয়া
তরুণী রেজোয়ানা খালেদ ইমার। প্রতারণার অভিযোগে দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকরা প্রতারণার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমা উল্লিখিত ভাষায় জবাব দেন।গত শুক্রবার ডিবি পুলিশের একটি টিম প্রতারণার অভিযোগে হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান ও রামপুরা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনায় এসব মামলা করা হয়। একটি মামলা করেন রেন্ট-এ-কারের মালিক। অন্য মামলা করেন গাড়ি কিনে প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি।
গুলশান থানার মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ইমাকে। এ পর্যায়ে গতকাল তাকে হাজির করা হয়েছিল গোয়েন্দা কার্যালয়ে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে গতকাল মুখ খোলেন দুই মামলার বাদী।
ডিবি পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, জামালপুরের বাসিন্দা হলেও ইমা নিজেকে কখনো সিলেটের আবার কখনো চট্টগ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলেও বলে থাকেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।
ডিবি সূত্রের ভাষ্যমতে, ইমা একজন দক্ষ প্রতারক। প্রতারণার কৌশল হিসেবে কখনো তিনি বিয়ের পাত্রী সাজেন, কখনো সাজেন একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক। কখনো বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে পারদর্শী কর্মী। দাবি করে থাকেন ভিওআইপি, আইজি ডব্লিউ লাইন্সেস পাইয়ে দেয়ার মত ক্ষমতা তার রয়েছে। কখনো বলে বেড়ান তিনি মন্ত্রীর কাছের লোক।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি (দক্ষিণ) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ইমার বিরুদ্ধে প্রতারণা অভিযোগে গুলশান ও রামপুরা থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া ধরা পড়ার পর অনেকেই যোগাযোগ করছেন। তারাও অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ইমার প্রতারণার সঙ্গে তার ভাই তানভীর খালেদ জড়িত। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এডিসি (দক্ষিণ) আরো বলেন, ২০০৭ সালে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ইমা ফ্যাশন ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ কর্মকাণ্ডে। আর নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে দামি গাড়ি ভাড়া করে চলাফেরা করতেন। আর তার এ কাজে সহায়তা করতো তার বাবা ও ভাই তানভীর খালেদ।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে ইমা অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু রয়ে গেছেন পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ইমা কয়েক মাস আগে রাজধানীর জোয়ার সাহারা এলাকার আমীর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি রেন্ট-এ-কার থেকে একটি সিআরভি জিপ ভাড়া করেন। মাসিক ভাড়া ৭৫ হাজার টাকা। চুক্তি মোতাবেক কয়েক মাস ভাড়া পরিশোধ করার পর গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে নাট্যকার দীপংকর সেনগুপ্তের কাছে তা বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেন আমীর এন্টারপ্রাইজের মালিক আমীর হোসেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দফতরে গতকাল নাট্যকর দীপংকর সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ইমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তার কাছে মনে হয়েছিল সে একজন ভাল মনের মানুষ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বুঝতে পারেন সে একজন বড় মাপের প্রতারক। দীপংকর সেনগুপ্ত বলেন, ‘একদিন ইমা আমাকে জানায় তার নয়টি গাড়ি আছে। এত গাড়ি রাখার মতো জায়গা তার বাসার গ্যারেজে নেই। তাই সে সিআরভি জিপটি বিক্রি করবে। আমাকে কেনার জন্য সে অনুরোধ করে। আমি তাকে বলি আমার কাছে এত টাকা নেই। তখন ইমা আমাকে বলে ভেঙ্গে, ভেঙ্গে টাকা পরিশোধ করা যাবে। এ অবস্থায় কেনার জন্য ইমার সঙ্গে ৯ লাখ টাকায় চুক্তি করি। প্রথম দফায় ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তী সময়ে গাড়ির আসল কাগজপত্র চাইলে ইমা টালবাহানা শুরু করে। পরে গাড়ির মালিকানা খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি গাড়ির প্রকৃত মালিক আলাদা ব্যক্তি। বিষয়টি জানার পর জিপটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। এ ব্যাপারে ৩ জুন রামপুরা থানায় মামলা করি।
এদিকে আমির এন্টারপ্রাইজের মালিক আমীর হোসেন বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী কয়েক মাস ভাড়া পরিশোধ করার পরে এক পর্যায়ে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয় ইমা। গাড়ি ফেরত চাইলে ইমা ও তার ভাই আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে জানতে পারি ইমা নিজে মালিক সেজে দীপংকর নামে এক নাট্যনির্মাতার কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে।’
তবে মহানগর গোয়েন্দা দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইমা তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তিনি বরং বিভিন্ন জনের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন ।

,
Powered by Blogger.