‘কুমতলবে কথায় কথায় স্যার আমার শরীরে হাত দিতেন’

‘কুমতলবে আমার শরীরে হাত দিয়েছিলেন স্যার। যৌন কামনা চরিতার্থের অপচেষ্টা করেছিলেন।’ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করলেন এসএসসি পাস করা এক ছাত্রী। গত সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করছেন তিনি। এরপর পুলিশ বাসুদেব কুমার রায় নামে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে। পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি। মামলার বিবরণীতে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সেন্ট্রাল হাইস্কুলে পড়াশোনা করি। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেছি। এখন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায় আছি। ২০১১ সালে আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলাম। তখন থেকেই আমার স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক বাসুদেব কুমার রায়ের বাসায় নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে যেতাম। দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই ওই শিক্ষকের আচরণে অসঙ্গতি দেখতে পাই। কথায় কথায় গায়ে হাত দিতেন। নানা ধরনের অরুচিকর মন্তব্য করতেন। এরই একপর্যায়ে গত ২৭শে মে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসুদেব আমার মোবাইল ফোনে কল করেন। যেতে বলেন তার বাসায়। এ সংবাদে আমার বাবা তার ভাড়া বাসা কাজী আবদুর রউফ রোডের ১০/এ নম্বরের গেটে পৌঁছে দেন। বাবা ফিরে গেলে আমি একাই বাসায় ঢুকি। সিঁড়ি বেয়ে উঠি ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে। ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারি, স্যার ছাড়া বাসায় কেউ নেই। স্যার তখন খাতা দেখার কথা বলে তার বেডরুমে নিয়ে যান। বসতে বলেন বিছানার ওপর। একটি টুল নিয়ে তিনি বসে পড়েন আমার মুখোমুখি। খাতা দেখতে দেখতেই স্যার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। বলেন, আমি যদি তোমার শরীরে হাত দিই তুমি কি রাগ করবে? তুমি কি বাসায় বলে দেবে? তার মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর হতবাক হয়ে পড়ি। বলি, আপনি আমার বাবার মতো। কেন বলছেন এসব কথা। আমি তখন পরিমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিই। তিনি তখন পরিমলের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানোর চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে কু-মতলবে আমার শরীরে হাত দিয়ে বসেন। আমি তাকে বাধা দিই। বাসায় জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিই। তখন তিনি পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, বিষয়টি কাউকে জানালে ভবিষ্যতে আমার পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হবে। তার হুমকিতে ভয় পেয়ে যাই। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাবা-মা ছাড়া আর কাউকে জানাইনি। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের পর স্কুল সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ পত্রসহ ছাড়পত্র সংগ্রহ করি। এরপর স্থানীয় একজন ঘনিষ্ঠ বড় ভাই রিপন আহম্মেদের সহায়তায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে মৌখিক অভিযোগ করি। স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিলে আমার পিতা-মাতা ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করেছি। সূত্রাপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক বাসুদেব কুমার রায় যৌন নিপীড়নের কথা অস্বীকার করেছেন। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ওই শিক্ষককে ভাল বলেই জানেন। এর নেপথ্যে অন্য কোন ঘটনা জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জামিন পেলেন বাসুদেব: ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক বাসুদেব কুমার রায়কে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল সূত্রাপুর থানার এসআই মনির হোসেন মোল্লা অভিযুক্ত শিক্ষককে আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে আইনজীবী তাপস চন্দ্র দাস জামিন দেয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা আলী অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষকে রিমান্ডে নেয়ার কোন আবেদন করেনি।

,
Powered by Blogger.