সতীত্বের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ, অতল আঁধারে তরুণী

দুঃসময় কখনও একা আসে না। এই কথাটা সোনা বাইয়ের থেকে ভাল আর কে জানবে?

কুড়ি বছরের সোনা গোন্দ উপজাতির মেয়ে। বাড়ি মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার নেহারপুর গ্রামে। এখানেই বসেছিল গণবিবাহের আসর। সরকারি উদ্যোগে। যেখানে বিয়ের আগে পাত্রেদের সতীত্বর পরীক্ষা দিতে হয়। প্রমাণ দিতে হয় তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা নন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি সোনা বাই। সরকারি দাই জানিয়ে দিয়েছেন সোনা বাই গর্ভবতী।

সোনার মতো অনুত্তীর্ণ আরও আটজন। উপজাতি সমাজ এখন তাঁদের এক ঘরে করে দিয়েছে। কোরকু এবং গোন্দ সম্প্রদায়ের এই তরুণীদের বাস বেতুল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। তাঁরা সবাই এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কন্যাদান যোজনার অধীন প্রকল্পে বিয়ে করতে। সেখানেই সতীত্বের পরীক্ষায় ফেল করেছেন তাঁরা। ফলে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে না বাকি সমাজ।

এই সমস্যায় নাক গলাতে নারাজ রাজনীতিকরাও। স্থানীয় বিধায়কের বক্তব্য,আদিবাসীদের সামাজিক রীতিনীতির মধ্যে তাঁরা ঢুকতে চান না। ফলে এই পরিবারগুলোর সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

গ্রামের পঞ্চায়েত বিধান দিয়েছে,একটি মাত্র উপায়ে উঠতে পারে বয়কটের খাঁড়া। যদি ওই তরুণীর পরিবারের তরফে 'জটমিলনা'-র আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ গ্রামের সবাইকে একসঙ্গে ডেকে নেমন্ত্তন্ন করে খাওয়ানো। গ্রামে বাস করেন হাজারের উপর মানুষ। তাদের সবাইকে খাওয়ানো এই হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে অসম্ভব।

এই অবস্থায় সোনার পাশে আছেন একমাত্র দীপক। তাঁর মনের মানুষ। দীপক সোনাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। কিন্তু অনুমতি দিচ্ছে না সমাজ। ফলে দীপকের অপেক্ষা,কবে এই খারাপ সময় কাটবে। সেইসঙ্গে আশঙ্কা,তাঁর অপেক্ষার প্রহর যেন অন্তহীন না হয়।

দিনমজুরি করে আয় করা সোনার পরিবার এখন অতল অন্ধকারে। একঘরে হয়ে যাওয়া সোনাও ফতোয়ার ভয়ে পা রাখতে পারছেন না বাড়ির বাইরে। দীপক হত্যে দিয়েছে মহাজনের কাছে। যদি কোনওভাবে গ্রামবাসীদের খাওয়ানোর উপায় বের করা যায়। অতল খাদ থেকে উদ্ধার করা যায় তাঁর সোনাকে। মনের মানুষকে আনা যায় নিজের কাছে। সমাজকে তুষ্ট করে।

, ,
Powered by Blogger.