স্পীকার জানিয়েছেন, সংসদে ‘চুদুরবুদুর’ চলবে

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের এক নারী সদস্যের মুখে যে শব্দ নিয়ে এতো হৈ চৈ, সেই ‘চুদুরবুদর’ শব্দটি সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সোমবার দুপুরে জাতীয় সংসদে নিজের কার্যালয়ে বসে
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “শব্দটি একটি কলোকোয়াল ল্যাঙ্গগুয়েজ। সংসদে ওই শব্দটি যখন উচ্চারিত হয় তখনো আমি বলিনি যে এক্সপাঞ্জ করা হবে। এটা অশালীন কোনো শব্দ নয়।”
গত ৯ জুন সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনার সময় বিএনপির সংরিক্ষত আসনের সদস্য রেহানা আক্তার রানু বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত ন।”
ফেনীর বাসিন্দা রেহানা তার অঞ্চলের ভাষায় সরকারকে হুঁশিয়ার করলে সরকারি সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ করেন। হুইপ আসম ফিরোজও রানুর বক্তব্যকে ‘অশোভন’ আখ্যা দিয়ে এক্সপাঞ্জের দাবি জানান।
ওইদিন স্পিকার বলেন, ওই বক্তব্য পরীক্ষা করে ৩০৭ বিধি অনুযায়ী কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
‘চুদুর-বুদুর’ শব্দটি নিয়ে সংসদে উত্তাপের পর আলোচনা গড়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারও শব্দটির উত্তপত্তি ও অর্থ বিচার করে তা অশ্লীল কি না- তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত বাংলা একাডেমীর অভিধান থেকে উদ্ধৃত করে এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, লেখক, গবেষক ও ভাষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারের বক্তব্যের ভিত্তিতে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুদুরবুদুর’ গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল নয়।
নোয়াখালীর বাসিন্দা শিরীন শারমিনও বলছেন, “শব্দটি অশালীন নয়।”
সংসদে অসংসদীয় বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দেশের প্রথম নারী স্পিকার বলেন, “সংসদে আমি রুলিং দিয়েছি। প্রতিদিন রুলিং দেয়া যায় না। সংসদ সদস্যদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমি সতর্ক করছি। প্রয়োজনে মাইক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। গতকালও (রোববার) সরকারি ও বিরোধী দলের দুইজন সদস্যদের মাইক বন্ধ করে দিয়েছি।”
সোমবারের অধিবেশনে ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ক্ষমতাসীন দলের জুনাইদ আহমেদ পলক জাতীয় সংসদে প্রতিটি ‘অশালীন’ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার দাবি তোলেন।
অশালীন বক্তব্য দিলে অন্তত একদিনের জন্য হলেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে অধিবেশন থেকে বহিষ্কারের অনুরোধ জানান তিনি।
এছাড়া বিরোধী দল বিজেপির সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ অসংসদীয় বক্তব্য বন্ধে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
এ বিষয়ে শিরীন শারমিন বলেন, “তারা তাদের অভিমত জানিয়েছেন। আমি বলতে চাই- কার্যপ্রণালি বিধির বহুস্থানে বক্তব্য দেয়ার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। এতোবার কেন বলা হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের দায়িত্ব রয়েছে। সব সদস্য অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেন না। যারা করছেন, তাদের ডিল করা হচ্ছে।”
এরপরও কাজ না হলে ২৭৩ বিধি প্রয়োগ করা হবে বলে স্পিকার জানান।
কার্যপ্রণালি বিধির ২৭৩ বিধিতে বলা হয়, “কোনো সদস্য অপ্রাসঙ্গিক কথা বলিতে থাকিলে বা তাহার নিজ যুক্তির বা বিতর্কের ব্যবহৃত অন্য সদস্যদের যুক্তিগুলির বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি করিতে থাকিলে, স্পিকার উক্ত সদস্যের আচরণের প্রতি সংসদের দৃষ্টি আকষর্ণ করিবার পর তাহাকে বক্তৃতা বন্ধ করিবার নির্দেশ দিতে পারেন, এবং এইরূপ অবস্থায় উক্ত সদস্য তাহার আসনে বসিয়া পড়িবেন।”
প্রয়োজনে সরকারি ও বিরোধী দল- সবার ক্ষেত্রেই কঠোর হবেন জানিয়ে স্পিকার বলেন, “এভরিবডি, যে কেউ হোক, তাদের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

Powered by Blogger.