প্রতারক ইমার নিজ ফ্ল্যাটে পর্নো ছবির গোপন স্টুডিও

ছিপছিপে গড়নের মেয়েটি মধ্যবিত্ত পরিবারের। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তাই মাঝে-মধ্যেই চিত্রনির্মাতাদের
কাছে ধরনা দিতো। ঘটনাচক্রে দেখা পায় ইমা’র। প্রথম পরিচয়েই ভাল লাগে। কথা ও মায়ার জালে বন্দি হয়ে পড়ে। এর পরের ইতিহাস কেবলই প্রতারণার। মেয়েটির ছদ্মনাম বেউনিকা (২২)। দফায় দফায় ইমা তার কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ক্যামেরার সামনে বিবস্ত্র পোজ দিতে বাধ্য করেছে। হতে হয়েছে পর পুরুষের শয্যাসঙ্গী। সবই করেছে ইমা’র নির্দেশনায়। কিন্তু নায়িকা হতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তার নগ্ন ছবি ই-মেইলে প্রকাশের হুমকি দেয়। এতে ভড়কে যায় সে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তবে ইমা’র গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ছুটে যান। বর্ণনা করে ঘটে যাওয়া তার জীবনের সর্বনাশা কাহিনী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ইমা প্রথমে বিনোদনমূলক একটি ইংরেজি পত্রিকার কাভার মডেলের প্রস্তাব দেয়। সেখান থেকে নায়িকার স্বপ্ন দেখায়। নিয়ে যায় রাজধানীর ডিওএইচএস’র বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বাড়িতে। বেউনিকা আরও বলে, ফ্ল্যাটে গিয়ে রুমের পর রুম পেরিয়ে দেখা মেলে সজ্জিত গোপন স্টুডিও’র। আগে থেকেই সেখানে ছিল ব্যক্তিগত মেকআপ ও ক্যামেরাম্যান। তাদের সামনে ধীরে ধীরে বিবস্ত্র হতে থাকি। একদিকে ইমা’র জাদুকরী প্রলোভন অন্যদিকে আরও ডজনখানেক মডেলের উৎসাহে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ি। কখনও নায়কের শয্যাসঙ্গী, কখনও পর্নো নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করি। এভাবে অন্তত ছয় রাত কেটে গেছে ওই গোপন স্টুডিওতে। কিভাবে, কখন, কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারিনি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রতারিত বেউনিকা ব্যাংক থেকে লোন করে ও নিজের জমি বিক্রি করে সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিয়েছিল ইমাকে। পরে প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে ওই টাকা ফেরত চাইলে ইমা ইন্টারনেটে তার ছবি প্রকাশের হুমকি দেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মেয়েটির কাহিনী শুনে ইমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে ইমা দাবি করে, ওই মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে রাত কাটিয়েছে। টাকা দিলে তাকেই দিয়েছে। এভাবেই নানা প্রলোভনে ইমার ইন্দ্রজালে আটকে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। বাদ যাননি প্রভাবশালী চিত্রপরিচালকরাও। এদিকে গতকাল গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। শুনিয়েছেন ইমার প্রতারণার কৌশল। বলেন, ইমা ও তার পরিবারের সঙ্গে প্রায় ৭ বছরের পরিচয়। কখনই তাদের ফ্রড মনে হয়নি। মাঝে-মধ্যেই তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে গিয়েছেন। ইমা’র ভাই তানভীর খালেদের প্রযোজনায় ‘ওয়ান ফোর থ্রি’ নামে একটি সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে নায়ক নীরব ও নায়িকা কেয়া অভিনয় করেছেন। আর্থিক অনটনের কথা বলে ছবির কাজ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে ছবি সম্পন্ন করার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। সোহান বলেন, তার কাছে একটি পুরনো গাড়ি বিক্রি করেছিল। নগদ ২ লাখ টাকার বিনিময়ে গাড়ি দিয়েছিল। আর বাকি টাকা ধীরে ধীরে শোধ করতে বলেছিল। কিন্তু ওই গাড়ি নেয়ার পর বুঝতে পারি সেটি রেন্ট-এ কার থেকে ভাড়া নেয়া। এ ছাড়া গাড়িটি স্টার্ট নিচ্ছিল না। পরে টাকা ফেরত চাইলে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের একটি চেক দিয়েছিল। ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি, ওই নম্বরের অ্যাকাউন্টে কোন টাকা নেই। উল্টো ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে তারা লাপাত্তা হয়েছে। একই সময় উপস্থিত হয়েছিলেন বাড্ডা শাখা অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার। তার অভিযোগ, ইমা ও তার ভাই তানভীর খালেদ বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে পাঁচটি ভুয়া ভিসা দিয়েছে। তদন্ত সূত্রমতে, সমপ্রতি আমেরিকা প্রবাসী এক যুবককে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইমা। পারিবারিকভাবে আংটি বদলের পরদিনই তাদের আর খুঁজে পাননি তিনি। একইভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মামুন ও সাগরের কাছ থেকে ৬ লাখ, স্বপ্নার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার, নাহারের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, সায়েমের কাছ থেকে ২ লাখ, রহমত উল্লাহ ও ওয়াকিলের কাছ থেকে ৯ লাখ, মনি’র কাছ থেকে ২ লাখ ও আনোয়ারের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইমা ও তার পরিবার। প্রতারিত মামুন, সাগর ও সায়েম জানান, পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে ইমা তাদের সবার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে। নারী নির্যাতনের অভিযোগ দিয়েছে র‌্যাবের কাছে। পরে তারাও রাজধানীর গুলশান ও রামপুরা থানায় মামলা করেছেন। তদন্ত সূত্রমতে, ইমা’র অন্ধকার জগতের সহচারীদের তালিকায় রয়েছে র‌্যাম্প মডেলবেশী দ্রুবেলা। সে তানভীর খালেদের কথিত স্ত্রী। তার সঙ্গে আরও আছে লুনা, স্মৃতি ও ব্রিটনিকা। তবে মাসখানেক পরপরই মডেল বদল করে তারা। পুরনোদের বাদ দিয়ে নতুন তরুণীদের সংগ্রহ করে। এখন পর্যন্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ২০ মডেলের নাম-ঠিকানা পেয়েছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। এদের পাশাপাশি পলাতক তানভীর খালেদ ও তার পিতা আলমগীর খালেদকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, পলাতক তানভীর খালেদ ও আলমগীর খালেদকে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। আশা করছি, শিগগিরই তারা ধরা পড়বে।

,
Powered by Blogger.