হাজার কোটি টাকার দেবযানী ফের অসুস্থ, জনতাকে আড়াল করে এবার পিজিতে

সারদা গোষ্ঠীর মালিক সুদীপ্ত সেনের আরও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পেল দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ। সুদীপ্তকে জেরা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সারদা কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে আবার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সারদা-কর্ণধার সুদীপ্তের পাশাপাশি সংস্থার উচ্চ পদাধিকারী
দেবযানীর বিরুদ্ধেও বারুইপুর থানায় আর্থিক প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সূত্রেই এ দিন বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছিল দেবযানীকে। ওই মামলায় তাঁকে আট দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। দু’দিন আগে ওই আদালত সুদীপ্তকে ১০ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। ২৮ মে দু’জনকে বারুইপুর আদালতে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বারুইপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় দেবযানীকে। তাঁর পরনে ছিল জলপাই রঙের কামিজ, পায়ে হাওয়াই চটি। দেবযানীকে এজলাসের পাশের একটি ঘরে বসিয়ে রাখা হয়। ‘ওআরএস’ মেশানো জলের বোতলে মাঝেমধ্যেই চুমুক দিয়েছেন তিনি। বেলা আড়াইটে নাগাদ তাঁকে ওই আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক দেবদীপ মান্নার এজলাসে হাজির করানো হয়।
বারুইপুর আদালত থেকে নিউ টাউন থানা যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন দেবযানী। নিউ টাউন থানার কাছে একটি ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে বলে চিকিৎসকদের অনুমান। রাত ৯টার কিছু আগে পুলিশের একটি টাটা সুমো গাড়িতে দেবযানীকে নিয়ে যাওয়া হয় পিজি-তে। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। জরুরি বিভাগে পরীক্ষা করার পরে দেবযানীকে ভর্তি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। পিজি-র মেন ব্লকের মহিলা ওয়ার্ডে রাখা হয় তাঁকে।
হাসপাতালে দেবযানীকে দেখতে ভিড় জমে যায়। ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রবিবার সুদীপ্তকে আদালতে তোলার সময় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আমানতকারীরা। তাঁদের হটাতে লাঠি চালায় পুলিশ। সে-কথা মাথায় রেখে এ দিনও আদালতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছিল র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স। তবে বিক্ষোভ হয়নি।
এ দিনই তদন্তকারীরা জানান, সুদীপ্তকে জেরা করে বারুইপুরের ফুলতলা এলাকায় তাঁর বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকায় নামে-বেনামে বাগানবাড়ি, জমি ও সিনেমা হল কিনেছিল সারদা গোষ্ঠী। ওই সব সম্পত্তিতে তল্লাশি চালানোর জন্য বারুইপুর আদালতে আবেদন জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই এবং মঙ্গলবার দুপুরে জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী দফায় দফায় জেরা করেন সুদীপ্তকে। পুলিশি সূত্রের খবর, বারুইপুর ছাড়াও ক্যানিং, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালিতেও সারদার নামে কয়েক কোটি টাকার জমি ও বাড়ি রয়েছে বলে জেরায় কবুল করেছেন সুদীপ্ত। আত্মীয়দের নামেও বহু অ্যাকাউন্টে অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলেন তিনি। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতর আগেই সারদার ২৫৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছিল। নতুন আরও প্রায় ৫০টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। সুদীপ্তের একাধিক আত্মীয়ের নামেও অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে।

,
Powered by Blogger.