মাওলানা সাঈদী তিনবার অবিচারের শিকার হয়েছেন : ব্যারিস্টার রাজ্জাক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামিপক্ষের পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ রোববার দিনব্যাপী যুক্তি উপস্থাপন
করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
এসময় তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তিনবার অবিচারের শিকার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় আইনের ১৯.২ ধারায়। এর মাধ্যমে তিনি প্রথমবার অবিচারের শিকার হন। এরপর আমরা ১৫ সাক্ষী বিষয়ে সেফ হাউজের সব ডকুমেন্ট হাজির করে দেখিয়েছি যে, এসব সাক্ষীর অনেকে রাষ্ট্রপক্ষের হেফাজতে ঢাকায় ছিল। তারা তাদের শেখানো মতে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে ইচ্ছা করে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে হাজির করেনি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ৪৩ দিন পর্যন্ত কয়েক দফায় সেফ হাউজে ছিল। তার সব ডকুমেন্ট আমরা হাজির করেছি এবং তাদের সাক্ষ্য বাতিলের জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হলো আমরা নিজেরা ওইসব ডকুমেন্ট তৈরি করেছি এবং তা জাল। আমাদের আনীত ডকুমেন্টকে অস্বীকার করে তাদের সাক্ষ্য বহাল রাখা হলো। এর মাধ্যমে মাওলানা সাঈদী দ্বিতীয়বার অবিচারের শিকার হয়েছেন।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের পর আমরা তা ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুনরায় বিচার দাবি করেছি। কিন্তু পুনরায় বিচারের আবেদন গ্রহণ না করে তার প্রতি তৃতীয়বারের মতো ঐতিহাসিক অবিচার করা হল তার ওপর। আশা করছি চতুর্থবার তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে ট্রাইব্যুনাল-১-এ নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রেক্ষাপটে মাওলানা সাঈদীর মামলায় পুনরায় পাঁচদিন শুনানির জন্য ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষের জন্য বরাদ্দ করা নির্ধারিত তিন দিন পার হয়ে গেলেও তাদের যুক্তি পেশ শেষ না হওয়ায় তা অব্যাহত রয়েছে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরোধিতা করে আইনি যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগের ধারে কাছেও নেই মাওলানা সাঈদী। রাষ্ট্রপক্ষ গণহত্যার মতো মারাত্মক একটি অভিযোগকে খুব হালকাভাবে নিয়েছেন। ইচ্ছা হলো আর তাই বসিয়ে দেয়া হয়েছে গণহত্যার অভিযোগ। গণহত্যার যেসব উপাদান এবং সংজ্ঞা রয়েছে তার কোনো কিছুরই ধার ধারেননি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা বিষয়ে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডন করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বের অনেকগুলো মামলার নজির তুলে ধরেন ট্রাইব্যুনালে।
ট্রাইব্যুনাল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে অনুরোধ করেছিলেন রোববারের মধ্যে তার যুক্তি উপস্থান শেষ করার জন্য। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আগামীকাল (সোমবার) দুপুরের মধ্যে তিনি শেষ করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী এরপর রাষ্ট্রপক্ষ এক ঘন্টা সময় পাবে জবাব দেয়ার জন্য। মামলায় যুক্তি উপস্থান শেষ করার মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শেষ হয়ে যায় এবং নিয়ম অনুযায়ী এরপর মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে আজ সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এদিকে দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি), জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় স্বাস্থ্যসম্মত গাড়ি ব্যবহারের জন্য আবেদন করা হয় আসামিপক্ষ থেকে। আজ দায়ের করা এ আবেদন বিষয়ে শুনানিশেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গাড়ি থাকলে তার জন্য আবেদন অনুযায়ী গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। এভাবে আবেদনটি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
আগামীকাল মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে (১) হাজির করার কথা রয়েছে মামলার তারিখ উপলক্ষে।

Powered by Blogger.