হ্যালো বলছে হাতি

মোগলি দিব্যি বুঝতে পারতো তার নেকড়ে মায়ের কথা। ব্ল্যাক প্যান্থার বাগিরা আর ‘বালু’ ভালুক ছিল তার খেলার সঙ্গী। কিন্তু সে তো গল্পকথা। রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য জাঙ্গল বুক’। বাস্তবে কি আর এমন হয়? হয়েছে। এমনটাই হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো। মোগলির সন্ধান না মিললেও সাউথ কোরিয়ার ইয়নগিনের এভারল্যান্ড চিড়িয়াখানায় খোঁজ পাওয়া গেল কথা বলা হাতির ‘কোশিক
’। যে কি না দিব্যি বোঝে মানুষের ভাষা। মানুষের গলা নকল করে কথা বলে সকলের সঙ্গে।
তবে আপাতত কোশিকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলছে না পাঠকদের। কারণ তার আগে শিখতে হবে কোরিয়ান।
ভাষা নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা নেই বিজ্ঞানীদের। মানুষের গলা দক্ষতার সঙ্গে নকল করতে পারে ময়না ও টিয়া, এত দিন এটাই জানা ছিল। কিন্তু কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেও এই গুণ রয়েছে, জানা ছিল না কারও। শুধুমাত্র বেলুগা তিমি এবং হার্বার সিলের এই ক্ষমতা আছে বলে শুনতে পাওয়া যায়। তবে তেমন জোরদার প্রমাণ নেই তার। কারণ একটাই, মানুষের দেহে আওয়াজ তৈরির পদ্ধতিটা বেশ জটিল। সেটাকে নকল করার পদ্ধতিটা আরও জটিল।
তাই নয়া ‘আবিষ্কার’-এ রীতিমতো উত্তেজিত বিজ্ঞানীরা। রহস্য সমাধানে ময়দানে নেমে পড়েছেন তাঁরা। তবে ঘটনার সত্যতা নিয়ে যে কোনও প্রশ্ন নেই, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আঙ্গেলা স্টোয়েগার হরওয়াথ এবং তাঁর সহকর্মীরা। তাঁর দাবি, ২২ বছরের কোশিক এতটাই স্পষ্ট ভাবে কোরিয়ান শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারে যে, স্থানীয় লোকেরা সবাই তার কথা বুঝতে পারে। হাতির হুঙ্কার নিয়ে আঙ্গেলাদের গবেষণাপত্রটি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
মাহুতের সঙ্গে কোশিক। ছবি: এএফপি
‘অ্যানইয়াং’… পিছন ফিরে তাকাতেই, আরে এতো কোশিক। এমন ঘটনা ঘটতেই পারে সাউথ কোরিয়ায় ইয়নগিনে গেলে। কোরিয়ান শব্দ ‘অ্যানইয়াং’-এর অর্থ হ্যালো। এ ছাড়াও কোরিয়ানে দিব্যি বসে পড়, না, শুয়ে পড়, ভাল ইত্যাদি শব্দগুলো বলতে পারে কোশিক।
কিন্তু কী ভাবে সম্ভব? বিজ্ঞানী দলটির সদস্য শ্রীলঙ্কার শরমিন ডি সিলভা বলেন, কোশিক তার শুঁড় এবং স্বরযন্ত্রকে এমন ভাবে ব্যবহার করে যে, শরীরের গঠন মানুষের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া সত্ত্বেও ‘অসাধ্য’ সাধন করে ফেলেছে সে। তাঁরা দেখেছেন, সে কথা বলার সময় শুঁড়ের ডগাটাকে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।
আরও একটা কারণ আছে। ১৯৯০ সালে জন্ম কোশিকের। ‘৯৩ সালে তাকে গোয়েনগি-ডু প্রদেশের একটি চিড়িয়াখানায় আনা হয়। প্রথম দু’বছর সেখানে তার সঙ্গী ছিল দু’টি মেয়ে হাতি। তার পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চিড়িয়াখানার সেই ছিল একমাত্র হাতি। সব সময় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে করতেই তাদের ভাষাটাও অনুকরণ করতে শুরু করে সে। ২০০৪-এ প্রথম মাহুত লক্ষ করেন, কোশিকের এই অদ্ভুত ক্ষমতা। তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছেন না, এ সময়ই প্রথম সে কথা বলতে শিখেছিল, নাকি এর আগে কেউ সেটা লক্ষ করেননি। তবে এ বিষয়ে যা জানা নেই, তা আপাতত অজানাই থাক। ভাব-আদানপ্রদানে অন্য প্রাণীদের থেকে মানুষ কী ভাবে এতটা এগিয়ে, স্বরযন্ত্রের সেই রহস্য উদ্ঘাটনে অনেকটাই সাহায্য করবে কোশিক, আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

Powered by Blogger.